Beta
শনিবার, ২৪ মে, ২০২৫
Beta
শনিবার, ২৪ মে, ২০২৫

অনলাইন কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে আইন শ্রীলঙ্কায়

নতুন বিল শ্রীলঙ্কানদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করবে বলে মনে করছেন অধিকারকর্মীরা।
নতুন বিল শ্রীলঙ্কানদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করবে বলে মনে করছেন অধিকারকর্মীরা।
[publishpress_authors_box]

সমালোচনার মধ্যেই অনলাইন কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে গতকাল বুধবার একটি বিল পাস হয়েছে শ্রীলঙ্কায়। সিএনএন জানিয়েছে, বিলটির নাম অনলাইন সেইফটি বিল। এর পক্ষে ১০৮ জন আইনপ্রণেতা ভোট দেন, বিপক্ষে পড়ে ৬২ ভোট।

গত সেপ্টেম্বরে প্রথম এ সংক্রান্ত বিল তোলার ঘোষণা দেওয়া হয়। তখনই দেশে-বিদেশে প্রতিবাদ হয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আশঙ্কা প্রকাশ করে জানায়, এ ধরনের বিল পাস হলে তা জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করবে। ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ না করার দাবিও জানায় তারা।

বিলটির লক্ষ্য শ্রীলঙ্কার ঘটনার সুনির্দিষ্ট কিছু বক্তব্য অনলাইনে প্রকাশে বিধিনিষেধ আরোপ করা। 

নতুন এই বিলের মাধ্যমে অনলাইন সেইফটি কমিশন নামে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করা হবে। দেশটির প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে তাদের নিয়োগ দেবেন। অনলাইন সেইফটি কমিশনের কাজ হবে, নতুন বিলের অধীনে যারা অনলাইনে নিষিদ্ধ বক্তব্য দেবেন, তাদের সেসব বক্তব্য প্রদান বন্ধের নির্দেশ দেওয়া।

শ্রীলঙ্কার সরকার বলছে, বিলটি অনলাইন অপব্যবহারের বিরুদ্ধে নাগরিকদের সুরক্ষা দেবে। তবে এমনটা মনে করছেন না মানবাধিকারকর্মীরা। তারা সমালোচনা করে বলেছেন, সুরক্ষা নয়, বরং ভিন্ন মতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধ করবে এই বিল। দমন করবে সরকারের সমালোচকদের। 

বিলটি পাসের আগের দিন মঙ্গলবার এই বিলের সমালোচনা করেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিষয়ক উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি। তিনি বলেন, “শ্রীলঙ্কা এখনও অর্থনৈতিক সংকটে ধুঁকছে। এর জন্য অপশাসন ও জবাবদিহিতার অভাব কম দায়ী নয়।

“সংস্কার দাবিতে ২০২২ সালে কয়েক মাস দীর্ঘ বিক্ষোভ দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করে। প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে ক্ষমতায় আসার পর তিনি ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমানোর পথে হাঁটতে শুরু করেন।”    

২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স

গত বছরের সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কা সরকার প্রথম যখন অনলাইন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিল আনার ঘোষণা দেয়, তখনই তার প্রতিবাদ করে এশিয়া প্রশান্ত অঞ্চলের ইন্টারনেট সংক্রান্ত নীতি নিয়ে কাজ করা সংস্থা এশিয়া ইন্টারনেট কোয়ালিশন (এআইসি)।

এআইসি-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেফ পেইন এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, “বিতর্কিত বিলটি দমনমূলক ব্যবস্থার ক্ষেত্র প্রস্তুত করবে, যার ফলে শ্রীলঙ্কার জনগণ তাদের মত প্রকাশের অধিকার হারাবে।”   

তিনি আরও বলেছিলেন, “আমাদের সদস্য কোম্পানিগুলো তাদের গ্রাহকদের অনলাইন নিরাপত্তাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। এমন সময়ে আইনপ্রণেতাদের উচিত হবে না, জনগণের সমালোচনা করার অধিকার ও চিন্তার আদান-প্রদানের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করার মধ্য দিয়ে তাদের (কোম্পানিগুলো) উদ্যোগকে নিরুৎসাহিত করা। এর প্রভাব কোনও না কোনোভাবে ডিজিটাল অর্থনীতির ওপর পড়বে।”                     

গত অক্টোবরে এই বিলের সমালোচনা করেছিল ইউনাইটেড ন্যাশনস হিউম্যান রাইটস অফিস।

তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, “বিলটি সন্ত্রাসবাদের যে সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে, তা অতিমাত্রায় বিস্তৃত। একইসঙ্গে এতে পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর হাতে মানুষকে প্রশ্ন, আটক, গ্রেপ্তার করার ও তল্লাশি চালানোর অসীম ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।”    

প্রায় দুই বছর আগে অর্থনৈতিক সংকটে ফুঁসে ওঠে শ্রীলঙ্কার আপামর জনসাধারণ। দেশটির ৭৩ বছরের ইতিহাসে এমন সংকট দেখা যায়নি।  

বিক্ষোভকারীদের চাপে একপর্যায়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। গোতাবায়ার সরকারি বাসভবনেও হামলা হয়।

আন্দোলনের একপর্যায়ে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের বাসভবন দখলে নেয় বিক্ষোভকারীরা। ছবি: এপি

শ্রীলঙ্কানরা মনে করেন, তাদের দুরবস্থার জন্য গোতাবায়া ও তার ভাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে দায়ী।

শ্রীলঙ্কার ক্ষমতা থেকে দীর্ঘদিন পর রাজাপাকসে সহোদরের বিদায়ের পর প্রেসিডেন্ট হন রনিল বিক্রমাসিংহে। তার বিরুদ্ধে শুরু থেকে ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমানোর অভিযোগ তুলে আসছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিষয়ক উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি মনে করেন, শ্রীলঙ্কার দমনমূলক আইনগুলো কয়েক দশক ধরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পথ মসৃণ করেছে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সংকটেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এসব আইনের। 

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত