মিয়ানমারে সংঘাতের জেরে অস্ত্রসহ বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী দেশটির ২৩ নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, শুক্রবার দুপুরে উখিয়া থানায় বিজিবি বাদী হয়ে মামলাটি করে। অনুপ্রবেশকারীদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। তাদের ১২টি অস্ত্রও পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার জানান, ২৩ জনই মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিক। এ বিষয়ে বিজিবির বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের জেরে সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যে সীমান্ত জেলা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরে অস্ত্রের ঝনঝনানি নিয়ে শঙ্কিত স্থানীয় বাংলাদেশিরা। ওপারের যুদ্ধ এরই মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বাংলাদেশ সীমান্তে, গোলা-বুলেট উড়ে এসে পড়ছে। তাতে হতাহতও হচ্ছে। সীমান্ত পেরিয়ে এসেছে মিয়ানমারের কয়েকশ নাগরিক, যাদের মধ্যে দেশটির সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সদস্যই বেশি।
এই উত্তেজনার মধ্যে কিছু অস্ত্রধারী রোহিঙ্গাও শরণার্থী শিবিরে ঢুকে পড়েছে বলে স্থানীয়দের ভাষ্য। রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র দল নবী হোসেনের অনুসারীরা মঙ্গলবার ভোর ও রাতে ক্যাম্পে ঢুকেছেন বলে দাবি করছেন উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আলতাজ হোসেন।
পালংখালীর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী সকাল সন্ধ্যাকে জানান, মঙ্গলবার রহমতবিল, আনজুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে অনেকে পালিয়ে এসেছেন। এদের বেশিরভাগই বিজিবি হেফাজতে অস্ত্র জমা দিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। এর বাইরে আরও ৩০ জনের বেশি অস্ত্রধারী রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।
এর বাইরে কিছু অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢুকে পড়েছেন বলে খবর পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আলতাজ বলেন, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেনের দলটি সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে থাকার কথা শোনা যেত। রহমতবিল সীমান্তের ওপারে এসব সন্ত্রাসীরা আস্তানা করে ছিল। সংঘাতের ঘটনার পর সেই গোষ্ঠিটি অস্ত্রসহ অনুপ্রবেশ করেছে। গত মঙ্গলবার ভোর ও রাতে অন্তত ৫০-৬০ জন অস্ত্র নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢুকে গেছে।
এই চক্রের ৩০-৩৫ জন অস্ত্রধারী রোহিঙ্গাকে স্থানীয়রা আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয় বলেও জানান তিনি।
বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ৮ এপিবিএন এর সহঅধিনায়ক পুলিশ সুপার খন্দকার ফজলে রাব্বি বলেন, “রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশ করার বিষয়টি জানি না। তবে মঙ্গলবার রাত থেকে সন্ত্রাসী গ্রুপপ্রধান নবী হোসেন ও তার সদস্যরা মিয়ানমার থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের তথ্য জানা গেছে। সে ক্যাম্পে প্রবেশ করতে পারে এমন আশঙ্কায় সর্বোচ্চ সর্তকতা পালন করা হচ্ছে। তাকে পাওয়া মাত্রই গ্রেপ্তার করা হবে।”
সন্ত্রাসীসহ ক্যাম্পে যাতে কেউ প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য এপিবিএন সজাগ রয়েছে বলে জানান তিনি।
২ রোহিঙ্গা নারীকে ঢুকতে দেয়নি বিজিবি
মিয়ানমারে সংঘাতের জেরে শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে টেকনাফের নাফ নদী দিয়ে দুই রোহিঙ্গা নারী অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছিলেনল। বিজিবি সদস্যরা তাদের ফেরত যেতে বাধ্য করেছেন।
টেকনাফ ২ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, দুইজন নারী হোয়াইক্যং ইউনিয়নের লম্বাবিল এলাকায় নাফ নদী দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন। বিজিবির বাধায় তারা পুনরায় মিয়ানমারে ফেরত যেতে বাধ্য হয়েছেন।
জাতিগত নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে ১৩ লাখের মতো রোহিঙ্গা। তাদের বেশিরভাগই আছেন কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার আশ্রয় শিবিরে।
২০১৭ সালে রাখাইন প্রদেশে সেনা-বিদ্রোহী সংঘর্ষের পর যে দমন অভিযান চলে, তাতে সীমান্তে নামে রোহিঙ্গাদের ঢল। প্রথমে বাংলাদেশ সীমান্ত আটকে রাখলেও পরে খুলে দিলে একবারেই চলে আসে ৭ লাখের মতো রোহিঙ্গা।
তবে এই রোহিঙ্গাদের ভার বহন করা এখন বাংলাদেশের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে বলে সরকারের তরফে বলা হচ্ছে। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গা শিবিরে খুনোখুনি তৈরি করছে উদ্বেগ। গত ছয় বছরে দুইশর মতো রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে, মাদক কারবারও চলছে সেখানে।