দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
নির্বাচন বর্জন ও হরতালের সমর্থনে রবিবার ঢাকার কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ড থেকে এয়ারপোর্ট অভিমুখে মিছিল শেষে তিনি এ অভিযোগ করেন।
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো এবারের নির্বাচনে অংশ নেয়নি। পাশাপাশি ভোটের দিনসহ ৪৮ ঘণ্টার হরতালও ডাকে তারা।
বিএনপি বর্জনের ঘোষণা দেওয়ায় নির্বাচনে প্রথাগত আমেজ আনতে দলের প্রার্থীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পথে বাধা দেয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
রিজভী বলেন, “আজকে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভোটকেন্দ্রে কোনও ভোটার নেই। গতকাল রাতে তারা ব্যালট বাক্স ভরে রেখেছে। আতঙ্কে তারা গভীর রাতে সিল মেরে রেখেছে। কারণ তারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছে।”
দেশবাসীকে হরতাল সফল করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, “আমাদের আন্দোলন চলছে, চলবে।”
‘রাতের ভোটের’ দুর্নাম ঘোচাতে এবার দুর্গম ৭২টি উপজেলা ছাড়া সারাদেশে ভোটের দিন সকালে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন।
ভোট কেন্দ্রের তথ্য ও ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটের হার জানাতে এবারই প্রথম ‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বিডি’ নামের একটি অ্যাপ চালু করেছে ইসি।
নির্বাচন নয়, নাটক হয়েছে : ফারুক
একই দিন রাজধানীর নিকুঞ্জে নিজ বাসভবনে ভিডিও বার্তায় হাজির হন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক।
জনগণ ভোট বর্জন করেছে দাবি করে তিনি বলেন, “অবৈধ সরকারের অধীনে, অবৈধ নির্বাচন কমিশনারের তত্ত্বাবধানে আজকে নির্বাচন নয়, নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে।
“সকাল ১০টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত সারা বাংলাদেশের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে আমরা দেখতে পেয়েছি, মাত্র ৭-৮ জন ভোটার প্রতিটি কেন্দ্রে উপস্থিতি হয়েছে। জনগণ এই ভোট বর্জন করেছে। তারা এই ভোট গ্রহণ করেনি। বিশ্ববাসীও এই ভোট গ্রহণ করবে না।”
‘আজ থেকে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট শুরু হবে’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে দুপুরে ঢাকার প্রেসক্লাব, পল্টন এলাকায় হরতাল ও গণ-কারফিউর সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করে ১২ দলীয় জোট।
মিছিল শেষে সমাবেশে তারা বলেন, আওয়ামী লীগের ‘ডামি’ নির্বাচনে জনগণের ভোট বর্জন ইতিহাসের মাইলফলক হয়ে থাকবে। আওয়ামী লীগের এখনই পদত্যাগ করা উচিত।
জোটের মুখপাত্র ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, “আজকের কলঙ্কজনক দিন থেকে বাংলাদেশ বিশ্ব থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এই ভোটে দেশের মানচিত্র জাহান্নামে যাক, অর্থনীতি জাহান্নামে যাক, গণতন্ত্র জাহান্নামে যাক- এই সরকারের কিছুই যায় আসে না।
“তবে আজকে থেকে দেশে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট শুরু হবে। এই প্রহসনের নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশকে চরম মূল্য দিতে হবে।”
শাহাদাত হোসেন আরও বলেন, “ভোটের হার খুবই নগণ্য। সন্ধ্যার সময় গণভবন থেকে ভোটের হার বৃদ্ধি করে বিজয়ীদের নাম নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হবে। নির্বাচন কমিশন সেটাই পাঠ করে শুনাবে।”
১২ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান বলেন, “আওয়ামী লীগ ভোটচুরির পুরোনো অভ্যাস বদলাতে পারেনি। এশার আজান দিয়ে তারা ভোট চুরি শুরু করেছে এবং তাহাজ্জুদ নামাজের আগেই ভোট ডাকাতি শেষ করবে।”