Beta
সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫
Beta
সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫

আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা সারজিস-হাসনাতের

SS-Sarjis-Alam-Hasnat-Abdullah-100724
[publishpress_authors_box]

গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার কিছুক্ষণ পরই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দদুল্লাহ।

বৃহস্পতিবার ঢাকার মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয় থেকে বাসায় যাওয়ার পর ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এই ঘোষণা দেন তারা।

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে ডিবি কার্যালয়ে ছিলেন আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও নুসরাত তাবাসসুম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীরা সবাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

এদিকে বৃহস্পতিবারই সংবাদি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আগামীকাল শুক্রবার সারা দেশে ‘প্রার্থণা ও গণমিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

সারজিস আলম তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “কথা দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করবেন না, মামলা দিয়ে হয়রানি করবেন না। আপনারা কথা রাখেননি।

“আপনারা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর আঘাত করেছেন। সারাদেশে আমার স্কুল কলেজের ভাইবোনদের উপর লাঠিচার্জ করেছেন। যাকে ইচ্ছা তাকে জেলে পাঠিয়েছেন। আন্দোলনকারীকে খুঁজে না পেলে বাসা থেকে ভাইকে তুলে নিয়েছেন, বাবাকে হুমকি দিয়েছেন। মাশরুর তার উদাহরণ।”

তিনি লিখেছেন, “যারা একটিবারের জন্যও এই আন্দোলনে এসেছে তারা শান্তিতে ঘুমাতে পারে না, গ্রেপ্তারের ভয়ে থাকে। এমন অনেকে আছে যাদের পরিবার এখনও তাদের খোঁজ পায়নি। এমন তো হওয়া উচিৎ ছিল না।

“কোথায় মহাখালীর সেতু ভবন আর কোথায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ আপনারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে মহাখালীর সেতু ভবনে হামলার জন্য গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিলেন। সাথে আছে আসিফ মাহতাব স্যার, মাশরুরসহ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অসংখ্য শিক্ষার্থী।

“রিক্সা থেকে নামিয়ে প্রিজন ভ্যানে তুলছেন, বাসা থেকে তুলে নিয়ে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন। আমার বোনদের রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছেন। কী ভাবছেন? এভাবেই সবকিছু শেষ হয়ে যাবে?”

সারজিস লিখেছেন, “৬ দিনের ডিবি হেফাজত দিয়ে ৬ জনকে আটকে রাখা যায় কিন্তু এই বাংলাদেশের পুরো তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে আটকে রাখবেন? দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থপাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছেন প্রতিনিয়ত সেগুলো কীভাবে নিবৃত করবেন?

“পুলিশ ভাইদের উদ্দেশে একটা কথা বলি। এ দেশের মানুষের ক্ষোভ আপনাদের উপর নয়, পুলিশের উপর নয়। এই ক্ষোভ আপনার গায়ের ওই পোশাকটার উপর। যে পোশাকটাকে ইউজ করে বছরের পর বছর আপনাদের দিয়ে এ দেশের অসংখ্য মানুষকে দমন-পীড়ন করা হয়েছে, অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে, জেল আর আদালতের প্রাঙ্গণে চক্কর কাটানো হয়েছে, সেই পোশাকটার উপর। ওই পোশাকটা ছেড়ে আসুন আমাদের সাথে, বুকে টেনে নিব।

“এ পথ যেহেতু সত্যের পথ, ন্যায়ের পথ, তাই যেকোনো কিছু মোকাবেলা করতে আমরা বিন্দুমাত্র বিচলিত নই। যতদিন না এ বাংলাদেশ আন্দোলনকারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে; গণগ্রেপ্তার, জুলুম, নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে; ততদিন এ লড়াই চলবে।”

হাসনাত আবদুল্লাহ তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “এই আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়া শেষ ব্যক্তিটি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেউই মুক্ত নই। এই গণগ্রেপ্তার গণঘৃণার নামান্তর। আমাদের মুক্তি তখনই সম্পূর্ণ হবে, যখন এই আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়া শেষ ব্যক্তিটিও মুক্তি পাবেন।

“এই গণগ্রেপ্তার কেবল নিরপরাধ মানুষের অধিকার হরণ নয়, বরং আমাদের সমগ্র সমাজের উপর চাপিয়ে দেওয়া একটি নিষ্ঠুরতার প্রতিফলন। এটি মুক্তচিন্তা ও মানবাধিকারের প্রতি এক ভয়ানক আঘাত। আমাদের এই আন্দোলন শুধুমাত্র ব্যক্তির মুক্তির জন্য নয়, বরং বৈষম্য, নিপীড়ন, গণগ্রেপ্তার এবং ছাত্র নির্যাতনের বিরুদ্ধে। এই আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়া শেষ ব্যক্তিটি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।”

নতুন কর্মসূচি

বৃহস্পতিবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলছে, “গণহত্যা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামীকাল সারাদেশে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে দোয়া-কবর জিয়ারত, মন্দির, গির্জাসহ সকল প্রার্থণালয়ে প্রার্থণার আয়োজন ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে।”

সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা পুনর্বহাল করে হাইকোর্ট রায় দেওয়ার পর গত জুলাই মাসের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্যানারে কর্মসূচিতে নামে শিক্ষার্থীরা।

ডিবি হেফাজতে থাকা অবস্থায় এক ভিডিওতে কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করতে দেখা গিয়েছিল। তার সঙ্গে অন্য পাঁচজনও ছিলেন। ফাইল ছবি

শুরুতে নাহিদ মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করলেও আন্দোলন বিস্তৃত হওয়ার পর আরও অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী এই আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসাবে কাজ শুরু করে। 

গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা হামলার শিকার হলে তারপর সহিংস হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। সারাদেশে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে নিহত হয় দুই শতাধিক মানুষ। ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ হয় ব্যাপকভাবে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের পাশাপাশি কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েন করে। এরমধ্যেই নাহিদ ও আসিফকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে; যদিও তাদের তখন ধরে নেওয়ার কথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়নি।

সেই দফায় ছাড়া পেয়ে তারা যখন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন, তখন তাদের হেফাজতে নেয় ডিবি। বৃহস্পতিবার দুপুরে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয় থেকে ছাড়া পান কোটা সংস্কার আন্দোলনের নাহিদ ইসলামসহ ছয় সমন্বয়ক।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত