প্রশ্ন : তামিম ইকবালের দেয়া ব্যাট পেয়ে নিশ্চয়ই খুব ভাল লাগছে …।
আরিফুল : আসলে আমি ব্যাটের ব্যাপারে জানতাম না। হান্নান স্যার (নির্বাচক হান্নান সরকার) এই উদ্যোগ নেন। তামিম ভাইয়ের থেকে যে ব্যাটটা পেয়েছি ওটা খুব ভারী। আমি সত্যি খুশি যে তামিম ভাই এরকম ভালো মানের একটা ব্যাটের ব্যাবস্থা করে দিয়েছেন।
প্রশ্ন : বিশ্বকাপে নতুন ব্যাট দিয়ে খেলবেন?
আরিফুল : ব্যাটটা সত্যিই ভালো কিন্তু আমি ওটা দিয়ে খেলবো না। ওই ব্যাটটা বিশ্বকাপে নিয়েও যাচ্ছি না। এটা একদম নতুন ব্যাট। আমি খেলিনি আগে, জানি না কেমন আচরণ করবে। অভ্যস্ততা একটা ব্যাপার। তাই এটা দিয়ে এখন খেলবো না। বিশ্বকাপে আমার যে চারটা ব্যাট আছে ওগুলো দিয়েই খেলবো, ওগুলোতে আমি স্বচ্ছন্দবোধ করি। নতুন ব্যাট দিয়ে আমি কখনই টুর্নামেন্ট খেলিনি।
প্রশ্ন : আপনি বর্তমান দলে টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ খেলা একমাত্র ক্রিকেটার। অভিজ্ঞতায় আপনি অন্যদের চেয়ে এগিয়ে….।
আরিফুল : অবশ্যই চাইবো নিজের সেরা খেলাটা খেলতে। যখন যেই পরিস্থিতি আসবে, চেষ্টা থাকবে ওই অনুযায়ী খেলার। আর গত বিশ্বকাপের ব্যাপারে বলবো যে, গত দুই বছরে কিন্তু ক্রিকেট অনেক বদলে গেছে। আমরা গতবার যে মানসিকতা নিয়ে বিশ্বকাপ খেলেছি ওভাবে খেললে কিছুই অর্জন করা যাবে না। এটা আমি টিম মিটিংয়ে বলেছি। আমি নিজেকেও বদলেছি আর বাংলাদেশ দলের খেলাও এখন বদলেছে।
প্রশ্ন : গত বিশ্বকাপের দল আর এই দলের পার্থক্য কি দেখেন ?
আরিফুল : পার্থক্য বলতে গতবারের দলটা অভিজ্ঞ ছিল। ওই দলে আগের যুব বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেটার রাকিবুল-সাকিব-নাবিল ভাইরা ছিলেন। এ দলে বেশিরভাগই তরুণ ক্রিকেটার। নতুন যারা আছে ওদের জন্য বিশ্বকাপ চ্যালেঞ্জিং হবে। ওরা যদি চাপে না পড়ে তাহলে এই দলটা অনেক ভালো করবে। চ্যালেঞ্জটা আসে প্রত্যাশা থেকে। বিশ্বকাপে একটা দলের কাছে শিরোপার প্রত্যাশা থাকলে লক্ষ্য পূরণ কঠিন হয়। আগের দলটা অভিজ্ঞ হওয়ায় তাদের কাছে সবার বড় প্রত্যাশা ছিল। ওই চাপ বা চ্যালেঞ্জের কারণে আমরা খুব ভাল করতে পারিনি। এবার আমাদের অভিজ্ঞতা কম, তো আমাদের ওপর হয়ত প্রত্যাশাটাও কম থাকবে সবার। এটাই সুযোগ। সবাই নির্ভার হয়ে খেলতে পারবে।
প্রশ্ন : দল তরুণ হলেও আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার সুযোগ আছে।
আরিফুল : গত দেড় বছরে এই দলের বেশিরভাগ ক্রিকেটার একসঙ্গে ২৫টার মতো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে। এত ম্যাচ এবং এতদিন একসঙ্গে থাকার পর যুব পর্যায়ের ক্রিকেট কেমন হবে, তা আর কাউকে বলে দিতে হয় না। গতবার করোনার কারণে যথেষ্ট প্রস্তুতি নিতে পারিনি। এবার তা হয়নি। আমরা ম্যাচ খেলেছি, সিরিজ জিতেছি এবং সবশেষে এশিয়া কাপও জিতলাম। এই ২৫টা ম্যাচে আমরা সবরকম পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এসেছি। আমরা আশা করছি বিশ্বকাপে এর বাইরের কোন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে না। যদিও বিশ্বকাপ আলাদা ব্যাপার। কাউকে আলাদা করে কিছু বলার নেই, নতুনরা খেলতে খেলতে বুঝে গেছে সব।
প্রশ্ন : গত বিশ্বকাপে টানা দুটো সেঞ্চুরি করেছিলেন। এবার ব্যাক্তিগত লক্ষ্যটা কি আপনার?
আরিফুল : আমি টানা তিনটা সেঞ্চুরি করতে চাই। তাতে আমার দল উপকৃত হবে। আর ব্যক্তিগত লক্ষ্য বলতে ছোট থেকে যে কোন টুর্নামেন্টে খেলতে গেলে সবসময় আসরের সেরা স্কোরার হতে চাই আমি। আমার মনে আছে গতবার ব্রেভিস (দক্ষিণ আফ্রিকার ডেওয়াল্ড ব্রেভিস) ৫০৬ রান করেছিল (২০২২ বিশ্বকাপ)। ওটা রেকর্ড। আমি ওই স্কোর টপকে সেরা হতে চাই।
প্রশ্ন : ম্যাচ পরিস্থিতি যেমনই হোক, আপনি খুব মেরে খেলেন। এই ন্যাচারাল পাওয়ার হিটিংয়ের রহস্যটা কি?
আরিফুল : সত্যি বলতে আমি এরকম মেরে খেলতাম অনূর্ধ্ব-১৬ থেকে। তখন একটু ভয় লাগতো, যদি আউট হয়ে যাই। কিন্তু অনূর্ধ্ব-১৭ পর্যায়ে আসার পর সোহেল স্যার (সোহেল ইসলাম) বললেন মেরে খেলায় অভয় দিলাম। তাঁর ওই কথাই আমাকে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে এরকম খেলার। সেটা ধরে রেখে খেলে যাচ্ছি।
প্রশ্ন : বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচটাই ভারতের সঙ্গে। সম্প্রতি দুই দলের লড়াইয়ে যে উত্তেজনা, সেদিক থেকে এই ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য খুব রোমাঞ্চকর হয়ে উঠে ।
আরিফুল : বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ অবশ্যই অনেক রোমাঞ্চকর হয়। ওদের বিপক্ষে জিতলে সবসময় আমাদের ভাল লাগে। আমার স্বপ্নের কথাটা বলি, ভারতের সঙ্গে ম্যাচে আমার একটা ব্যাক্তিগত চাওয়া আছে। সেটা হলো, বাংলাদেশ যেন আমার ব্যাটে জেতে। ভারতের ম্যাচে আমি সাধারণত ভাল খেলি, এটা আমার আলাদা বিশ্বাসের জায়গা।
প্রশ্ন : ভারতের বিপক্ষে আপনারা খুব আগ্রাসী থাকেন। যুব ক্রিকেটেও অনেকদিন ধরে এটা দেখা যাচ্ছে। এটা কেন ?
আরিফুল : ওদের বিপক্ষে খুব আগ্রাসী ক্রিকেট খেলি, মাঠে ওদের খুব বিরক্ত করি। এজন্যই হয়তো বোলিংয়ে আমরা বাড়তি চার্জড-আপ থাকি। ওরাও অনেক স্লেজিং করে। খুব আজে-বাজে কথা বলে। মনাসিকতা অন্যদিকে নিতে চায়। কিন্তু আমরা ওদের মতো গালি দিই না। আমরা ক্রিকেটীয় আইনের মধ্যে থেকে স্লেজিং করি, কিন্তু ভারত ক্রিকেটের নিয়ম লঙ্ঘন করে।
প্রশ্ন : ফটোসেশনে আপনারা সবাই খুব হাসি-খুশি ছিলেন, আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাচ্ছেন, বিশ্বকাপ জয়ের কথা কি মাথায় আছে ?
আরিফুল : আমরা আত্মবিশ্বাসী দল হয়েই যাচ্ছি। যে হাসি-খুশির কথা বলছেন, এটা পুরো দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। আমরা সবাই জানি, দেশের জার্সি পরার মানে কি। চেষ্টা করবো, সবাইকে গর্বিত করতে।