সিরিয়ার বিদ্রোহী বাহিনীগুলো দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পোর বিশাল এলাকা দখল করে নিয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষণ গ্রুপ সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) এই খবর দিয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
এসওএইচআর বলেছে, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্রোহীরা শহরের অর্ধেকেরও বেশি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
বলা হচ্ছে, কয়েক বছরের মধ্যে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে এটিই বিদ্রোহীদের সবচেয়ে বড় আক্রমণ।
২০১৬ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে আলেপ্পো থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল বিদ্রোহীরা। এরপর এবারই প্রথমবারের মতো বিদ্রোহীরা আবার আলেপ্পোতে প্রবেশ করতে পেরেছে।
ইসলামপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এর সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি চ্যানেলে পোস্ট করা ভিডিওতে শহরের ভেতরে গাড়িতে বিদ্রোহী যোদ্ধাদের দেখা গেছে।
বিবিসি ভেরিফাই ভিডিওটি আলেপ্পোর পশ্চিম উপশহরের বলে নিশ্চিত হতে পেরেছে।
এদিকে সরকারি বাহিনী বলছে, তারা আলেপ্পো ও ইদলিব প্রদেশের বেশ কয়েকটি শহরে তাদের অবস্থান পুনরুদ্ধার করেছে। বুধবার এইচটিএস ও তাদের মিত্র বাহিনীগুলো সরকারি বহিনীর বিরুদ্ধে হামলা শুরু করে।
২০১১ সালে আসাদ সরকার গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের দমনের পর সিরিয়ায় যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, তাতে এ পর্যন্ত পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
এই সময়ে আসাদ সরকারের বিরোধিতাকারী সশস্ত্র গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন জিহাদি গোষ্ঠীর উত্থান ঘটে। তারা সিরিয়ার বিশাল এলাকা দখল করে নেয়।
রাশিয়া এবং অন্যান্য মিত্রদের সহায়তায় সিরিয়ার সরকার পরে তাদের হারানো বেশিরভাগ এলাকা পুনরুদ্ধার করে।
বর্তমানে শুধু ইদলিব শহরটি পুরোপুরি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এইচটিএস ও তুরস্ক সমর্থিত বিদ্রোহী দলগুলো এবং তুর্কি বাহিনীও সেখানে অবস্থান করছে।
সেখান থেকেই তারা শুক্রবার আলোপ্পোতে হামলা চালায়। আসাদ সরকারও রাশিয়ার সহায়তায় পাল্টা হামলা চালাচ্ছে।
এসওএইচআর জানিয়েছে, সিরিয়া ও রাশিয়ার যুদ্ধ বিমানগুলো শুক্রবার আলেপ্পো অঞ্চলে ২৩টি হামলা চালিয়েছে।
গত কয়েকদিনের এই সংঘর্ষে ২৫৫ জন নিহত হয়েছে, যা সিরিয়ার বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে প্রণাঘাতী সংঘাত।
ইদলিবে ২০২০ সালে তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যস্থতায় সিরিয়ার সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। ওই চুক্তির পর আসাদ সরকার ইদলিব পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা বাদ দেয়। এরপর থেকে শহরটিতে সংঘাত একেবারেই কমে এসেছিল।
কিন্তু গত বুধবার এইচটিএস ও এর মিত্র বাহিনীগুলো বলেছে, তারা ‘আগ্রাসন রোধ করতে’ তাদের এই আক্রমণ শুরু করেছে।
বিদ্রোহীদের অভিযোগ, আসাদ সরকার ও তাদের সহযোগী মিলিশিয়া বাহিনীগুলো এই অঞ্চলে পুনরায় অস্থিতিশীলতা তৈরি করেছে।
সিরিয়ার সরকার ও তার মিত্ররা অন্যান্য সংঘাতে ব্যস্ত থাকার সুযোগে এইচটিএস এই হামলা চালায়।
এদিকে, সিরিয়ার প্রতিবেশী দেশ লেবাননে ইসরায়েলের ভয়াবহ সামরিক অভিযানে ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ আন্দোলন প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
হিজহবুল্লাহ ছিল আসাদ সরকারের বড় মিত্র, যারা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু ইসরায়েল তাদের দুর্বল করে দেওয়ায় আসাদ সরকারও কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সিরিয়ার অভ্যন্তরেও ইরান এবং ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যুক্ত লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা বাড়িয়েছে।