Beta
বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

‘আলেমে-আলেমে গণ্ডগোল করলে সাধারণ মুসল্লিরা বিভ্রান্ত হয়’

ss-tablig jamayat-151124 (2)
[publishpress_authors_box]

মো. তরিকুল ইসলাম। ২২ বছরের এই তরুণ পড়ালেখা করেন ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে। ধর্মভীরু তরিকুল জড়িয়েছেন তাবলিগ জামায়াতের সঙ্গে। সেই সুবাদে তাবলিগ জামায়াতের দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের ডাকে শুক্রবার সকালে ঢাকার কাকরাইল মসজিদে এসেছিলেন তিনি।

জুমার নামাজ শেষে রমনা পার্কে বসে বিশ্রাম নেওয়ার সময় কথা হয় তরিকুলের সঙ্গে। তিনি জানান, সাদপন্থীদের ডাকে কাকরাইলে এলেও তাবলিগ জামায়াতের দ্বন্দ্বের অবসান চান।

তরিকুল সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আলেমে-আলেমে গণ্ডগোল করলে সাধারণ মুসল্লিরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। তারা কোন পথে যাবে- বুঝতে পারে না। যদি আলেমদের মাঝে কোনও বিষয় নিয়ে দ্বিমত হয়, তাহলে কোরআন-হাদিসের আলোকে নিজেরা বসে সমাধান করা উচিত। সেটা সাধারণ মানুষ কেন জানবে।”

তিনি বলেন, “আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আলেমদের এই বিভক্তি তিনি যেন দূর করে দেন। কারণ আলেমরা বিভ্রান্ত হলে ইসলামের শত্রুরা এর সুযোগ নিতে পারে।”

টঙ্গীর তুরাগ পাড়ে ২০২৫ সালের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আগামী ৩১ জানুয়ারি শুরু হয়ে শেষ হবে ২ ফেব্রুয়ারি। আর দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা হবে ৭, ৮ ও ৯ ফেব্রুয়ারি।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিশ্ব ইজতেমা শেষ হওয়ার পর তাবলিগ জামায়াতের দুটি পক্ষের বিবাদমান সমস্যা সমাধানে আগামী বছরের এপ্রিলে পদক্ষেপ নেবে স্বরাষ্ট্র ও ধর্ম মন্ত্রণালয়। সে পর্যন্ত দুই পক্ষই আগের নিয়মে কাকরাইল মসজিদে থাকবে, টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করবে।

আগের নিয়ম হচ্ছে, দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভী বাংলাদেশে আসতে পারবেন না। বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে হবে। প্রথম পর্বের আয়োজন করবে মাওলানা জোবায়ের আহমদপন্থীরা। দ্বিতীয় পর্বের আয়োজন করবে মাওলানা সাদপন্থীরা। আর কাকরাইল মসজিদ ও মারকাজ (কেন্দ্র) চার সপ্তাহ জোবায়েরপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। পরের দুই সপ্তাহ থাকবে সাদপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে।

এর অংশ হিসেবে শুক্রবার সাদপন্থীরা কাকরাইলের মারকাজ মসজিদে অবস্থান নেওয়ার কথা ছিল। সে অনুযায়ী সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগতরা কাকরাইল মসজিদের অবস্থান নিতে শুরু করেন। দুপুর ১২টার আগে হাজার হাজার মুসল্লিতে পূর্ণ হয়ে যায় কাকরাইল ও মৎস্য ভবনসহ আশপাশের এলাকা।

কাকরাইলে আসা সাদপন্থিদের আরেকজন রংপুরের কৃষক ৬০ বছর বয়সী সিরাজুল ইসলাম। তিনি জানান, নিজেদের অর্থে একটি বাস রিজার্ভ করে একসঙ্গে ৬০ জন এসেছেন কাকরাইলে।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, “বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে রওনা দিয়ে শুক্রবার ভোরে ঢাকায় পৌঁছেছি। পরে আগারগাঁয়ে বাস রেখে হেঁটে এসেছি কাকরাইলে। আজই আবার চলে যাব।”

কাকরাইলে আসার কারণ জনাতে চাইলে তিনি বলেন, “তাবলিগের মুরব্বিরা ডেকেছেন, তাই এসেছি। এখন জুমার নামাজ শেষে আবার চলে যাব।”

সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতেই বলতেই দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কাকরাইল মারকাজ মসজিদে শুরু হয় জুমার নামাজ। এসময় মসজিদে জায়গা না হওয়ায় বিপুল সংখ্যক মানুষ সড়কে দাঁড়িয়ে নামজ আদায় করেন। পরে নামাজ ও দোয়া শেষে দুপুর পৌনে ১টার দিকে কাকরাইল এলাকা ছাড়তে শুরু করেন সাদ অনুসারীরা।

এসময় যানবাহন সংকটে বেশিরভাগ মানুষকেই হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হতে দেখা যায়। অনেকেই আবার রামনা পার্কে ঢুকে গাছের ছায়ায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন। 

রমনা পার্কে বসে কথা হয় নীলফামারীর ডিমলা থেকে আসা শফিকুল ইসলাম, নুরুল হক ও আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। বাড়ি থেকে আসার সময় নিয়ে আসা চিড়া-মুড়ি দিয়ে ক্ষুধা মেটাচ্ছিলেন তারা।

পেশায় কৃষক শফিকুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বাস রিজার্ভ করে নীলফামারীর বিভিন্ন উপজেলার থেকে প্রায় ৩ হাজার মুসল্লি কাকরাইলে এসেছেন সকালে। রাতেই আবার তারা নীলফামারী ফিরে যাবেন।”

তাবলিগ জামায়াতের দুপক্ষের দ্বন্দ্বের বিষয়ে জানতে চাইলে নুরুল হক বলেন, “আমরা কৃষক মানুষ, ধর্মের সবকিছু বুঝি না। তাই তাবলিগের মুরব্বিদের মধ্যে কী নিয়ে বিরোধ সেটা বলতে পারব না। তবে আমি বুঝি- মুসলমান হবে ভাই ভাই। তাদের মধ্যে এত বিরোধ থাকবে কেন? মুরব্বিদের উচিত এই বিরোধ মিটিয়ে ফেলা।”

বগুড়া থেকে কাকরাইল এসেছিলেন মো. এনামুল হক। সরকারি আজিজুল হক কলেজের এই শিক্ষার্থী মনে করেন, তাবলিগ জামায়াতের বিভক্তির কারণ ‘বিদেশি চক্রান্ত’।

এনামুল হক সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “তাবলিগ জামায়াতের মূল কাজ মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকা। ইহকালের লোভ-লালসা ত্যাগ করে নবী-রাসুলের নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন কাটাতে শেখায় তাবলিগ জামায়াত।”

তিনি বলেন, “জুবায়ের সাহেব পক্ষের হুজুরেরও সমস্যা না, সাদ সাহেবের পক্ষেরও সমস্যা না। মূল সমস্যা হলো একটি বিদেশি শক্তি তাবলিগ জামায়াতকে ধ্বংস করে দিতে চাচ্ছে। তাবলিগ যখন মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে, তাবলিগ জামায়াতের দাওয়াতে অনেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে তখনই এই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তাবলিগ জামায়াতকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে চক্রটি।”

জয়পুরহাট থেকে সাতটি বাস নিয়ে কাকরাইলে এসেছেন প্রায় ৩০০ জন ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। জুমার নামাজ শেষে রমনা পার্কের পাশে ফুটপাতে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন তাদের কয়েকজন। সেই দলে ছিলেন প্রায় ৭০ বছর বয়সী হাবিবুর রহমান। এই ব্যবসায়ী জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে তাবলিগ জামায়াতের সঙ্গে জড়িত তিনি।

তাবলিগ জামায়াতের বিভেদ নিরসনের দাবি জানিয়ে হাবিবুর রহমান বলেন, “ধর্মীয় নিয়মকানুন জানার আগ্রহ থেকে তাবলিগে যাওয়া শুরু করেছিলাম। এরপর ধীরে ধীরে এর সঙ্গে আরও বেশি জড়িয়ে যাই। শুরুতে তাবলিগের মধ্যে কোনও বিভেদ দেখিনি। এখন দিনকে দিন বিভেদ বেড়েই চলেছে।

“এতে তাবলিগ জামায়াত নিয়ে মানুষের মধ্যে খারাপ ধারণা তৈরি হচ্ছে। অনেকেই এর থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। তাই মুরব্বিদের উচিত যত দ্রুত সম্ভব সব বিভেদের অবসান করা। আল্লাহর কাছে দোয়া করি- সব যেন সমাধান হয়ে যায়।”

তাবলিগের শুরু যেভাবে

ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্য নিয়ে তাবলিগ জামায়াতের শুরুটা হয়েছিল ১৯ শতকের শুরুর দিকে ভারতে।

উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর জেলার মাজাহির উলুম মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভির উদ্যোগে এই প্রচারের শুরু। ১৯২০ সালে তিনি দক্ষিণ দিল্লির পশ্চিম নিজামুদ্দিন এলাকার এক মসজিদে তাবলিগের মূল কার্যক্রম গড়ে তোলেন। এটি এখন নিজামুদ্দিন মারকাজ নামে পরিচিত।

সেখান থেকে ধীরে ধীরে তাবলিগ জামায়াতের কাজ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এই কার্যক্রম পুরোপুরি পরিচালিত করতে শায়খুল হাদিস জাকারিয়া কান্ধলভীর ‘ফাজায়েলে আমল’ ও ‘ফাজায়েলে সাদাকাত’ বই দুটিকে তাবলিগের পাঠ্যক্রম হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।

১৯৪৪ সালে মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভী মারা গেলে তার ছেলে হাদিসবিশারদ মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভী তাবলিগের আমির হন।

ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্‌ইয়া আখতারে লেখা ‘তাবলীগ জামায়াত’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে তাবলিগ জামায়াতের কাজ শুরু হয় ১৯৪৮ সালে মাওলানা আবদুল আজিজের প্রচেষ্টায়। তিনি ছিলেন বাংলাদেশে তাবলিগ জামায়াতের প্রথম আমির।

ইজতেমার শুরু যেভাবে

গত শতকের ষাটের দশক থেকে টঙ্গির তুরাগ তীরে হয়ে আসছে বিশ্ব তাবলিগ জামায়াতের বার্ষিক সম্মেলন, যা ইজতেমা নামে পরিচিত। অর্ধ শতক কাল পরে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে ২০১৮ সালে ইজতেমা আয়োজন নিয়ে সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় দুই পক্ষ দুই বারে ইজতেমা করবে। তারপর থেকে সেভাবেই হয়ে আসছে।

ইজতেমার অর্থ সমাগম। বিশ্ব ইজতেমা বাংলাদেশে তো বটেই, বৈশ্বিকভাবেও তাবলিগ অনুসারীদের সবচেয়ে বড় জমায়েত।

সারা বছর দেশব্যাপী তাবলিগের কর্মপদ্ধতি কীভাবে চলবে, তা নিয়ে ইজতেমায় আলোচনা হয়। একই সঙ্গে ইজতেমাকে কেন্দ্র করে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা বেশিরভাগ তাবলিগ অনুসারী নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ধর্মপ্রচারের কাজে বের হন। ইজতেমার মধ্য দিয়েই মূলত দেশব্যাপী তাবলিগের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কর্মপদ্ধতিসহ অন্যসব কার্যক্রম প্রণীত হয়।

১৯৪৬ সালে মাওলানা আবদুল আজিজের প্রচেষ্টায় ঢাকার কাকরাইল মসজিদে প্রথমবারের মতো বার্ষিক ইজতেমা আয়োজিত হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন তাবলিগের বিশ্ব আমির মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভি।

এদিকে ১৯৬৫ সালে মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভির মৃত্যুর পর দিল্লিতে মাওলানা এনামুল হাসানকে তাবলিগের আমির করা হয়। সেসময় মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভির বই ‘হায়াতুস সাহাবা’ ও ‘মুন্তাখাবে হাদিস’ তাবলিগের পাঠ্যক্রমে যুক্ত করা হয়।

১৯৬০ সালের পর থেকে কয়েক বছর ঢাকার রমনা উদ্যানে ইজতেমার আয়োজন হয়েছিল। স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় ১৯৬৬ সালে ইজতেমা সরিয়ে নেওয়া হয় গাজীপুরের টঙ্গীতে তুরাগ নদের তীরে পাগার গ্রামের খেলার মাঠে।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টঙ্গীর ওই মাঠটি তাবলিগ জামায়াতের বাৎসরিক ইজতেমার জন্য বরাদ্দ দেন। এরপর থেকে ১৬০ একর বিশাল ময়দানে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

দ্বন্দ্বের আগে স্থানাভাবের কারণে ২০১১ সালে প্রথমবারের মতো ২ ভাগে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হতে শুরু করে। তখন বাংলাদেশের জেলাগুলোকে ভাগ করে একেকটি ইজতেমায় ৩২টি জেলার সদস্যরা অংশ নিত।

দ্বন্দ্বের শুরু কোথায়

ভারতে মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভির হাতে সৃষ্ট তাবলিগ জামায়াত শুরু থেকেই ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখেছিল কওমি মাদ্রাসাগুলোর সঙ্গে। বাংলাদেশেও সেভাবেই এর সূচনা হয়।

১৯৯৫ সালে মাওলানা ইনামুল হাসান কান্ধলভি মারা যাওয়ার আগে তাবলিগের ১০ সদস্যকে নিয়ে শূরা ব্যবস্থা প্রণয়ন করেন। যেন তার অনুপস্থিতিতে শূরা সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এটি ২০১৫ সাল পর্যন্ত বলবৎ ছিল।

২০১৫ সালে ইলিয়াস কান্ধলভির প্রপৌত্র মাওলানা সাদ কান্ধলভিকে তাবলিগ জামায়াতের বিশ্ব আমির করা হয়।

কিন্তু ২০১৭ সালে সাদ কান্ধলভির কয়েকটি বিবৃতি নিয়ে দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসারীরা আপত্তি তোলে। তারা মাওলানা সাদের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

তখন তাবলিগ জামায়াতের ভেতরে চরম দ্বন্দ্ব শুরু হয় দিল্লির নিজামুদ্দিন। মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে পৃথক ফতোয়া দিয়ে বৈশ্বিকভাবে দারুল উলুম দেওবন্দের নীতি অনুসরণ করা হয় কওমি ও দেওবন্দি মাদ্রাসাগুলোয়। সেই বিরোধ বিশ্বের অন্য সব দেশেও তাবলিগ জামায়াতের অনুসারীদের দুই ভাগে ভাগ করে ফেলে।

বাংলাদেশে বিভাজন

দিল্লির দ্বন্দ্বের রেশ এসে পড়ে বাংলাদেশেও। দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসরণে বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসার অনুসারীরাও মাওলানা সাদের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। তারা মাওলানা সাদকে বাংলাদেশে অবাঞ্ছিতও ঘোষণা করে।

২০১৮ সালে সাদ কান্ধলভী ঢাকায় আসার দিন বিরোধী পক্ষ তাকে ঠেকাতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করে। তখন অন্য পক্ষের সঙ্গে তাদের মারামারি বাধে। তার আগে কাকরাইল মসজিদেও দুই পক্ষের হাতাহাতি হয়।

মারামারির মধ্যে মাওলানা সাদ ঢাকায় আসার পর পুলিশের পাহারায় তাকে কাকরাইল মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়। নিরাপত্তার কারণে সেবার তার ইজতেমায় যোগদানও হয়নি। দুই পক্ষকে মানাতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বৈঠকও করেন। পরে সিদ্ধান্ত হয় যে দুই পক্ষের ইজতেমা আলাদাভাবে হবে।

সাদের কোন বক্তব্য নিয়ে বিরোধ

সাদ কান্ধলভি তাবলিগ জামায়াতে কিছু সংস্কারের কথা বলেন, যা নিয়ে বিভক্তি সৃষ্টি করেছে। তার মতে, ধর্মীয় শিক্ষা বা ধর্মীয় প্রচার অর্থের বিনিময়ে করা উচিৎ নয়।

এর মধ্যে মিলাদ বা ওয়াজ মাহফিলের মতো কর্মকাণ্ড পড়ে যায় বলে তা নিয়ে আপত্তি ওঠে আলেমদের মধ্য থেকে।

সাদ কান্ধলভি আরও বলেন, মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষকদের মাদ্রাসার ভেতরে নামাজ না পড়ে মসজিদে এসে নামাজ পড়া উচিৎ, তাতে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ে।

তার বিরোধীরা বলছে, সাদ কান্ধলভির কথাবার্তা আহলে সুন্নাত ওয়া’ল জামায়াতের বিশ্বাসের পরিপন্থি।

অন্যদিকে সাদ সমর্থকরা বলছে, সংস্কারের প্রস্তাব মানতে না পেরে তাবলিগের একটি অংশ বাংলাদেশে সংগঠনটির কর্মকাণ্ডকে ‘রাজনৈতিক চেহারা’ দিতে চায়।

২০১৮ সালের জুলাই মাসে ঢাকায় কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন আমির শাহ আহমদ শফীর উপস্থিতিতে তাবলিগ জামায়াতের একাংশের একটি সম্মেলন হয়। সেখানে সাদ কান্ধলভিকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গত ৫ নভেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ‘ওলামা-মাশায়েখদের ইসলামি মহাসম্মেলন’ থেকে বাংলাদেশে তাবলিগ জামায়াতের দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের নিষিদ্ধসহ ৯ দফা দাবি জানানো হয়। শায়খুল হাদিস পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক এসব দাবি তুলে ধরেন।

‘কওমি মাদ্রাসা, তাবলিগ ও দ্বীন রক্ষার লক্ষ্যে’ ডাকা এই সমাবেশে বক্তারা পুরোটা সময়জুড়েই মাওলানা সাদের বিষোদগার করেন। এ সময় এক এস্তেমা ও এক কাকরাইলের দাবি জানান তারা।

ভারতের মাওলানা সাদকে ইঙ্গিত করে মাওলানা আবদুল হামিদ বলেন, “সাদের ফিতনা দিন দিন বাড়তেছে। এক কাকরাইল। এক এস্তেমা।”

উম্মুল মাদানী হাটহাজারী মাদ্রাসার মাওলানা মুফতী জসিমউদ্দীন বলেন, “উনি (সাদ) সঠিক রাস্তার মধ্যে নাই, উনি বাতেল। ওনার তাবলিগও বাতেল। টঙ্গীর মাঠ আসল ও সঠিক তাবলিগ জামায়াতকে দেওয়ার জন্য সরকারে কাছে অনুরোধ করব। ওলামায়ে একরামের সঙ্গে বসে সেই ব্যবস্থা করেন।”

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১৫০টির বেশি দেশে তাবলিগ জামায়াতের প্রায় ৮ কোটি অনুসারী আছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত