ছেলেটার উচ্চতা ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি। লিকলিকে শরীর। প্রথমবার এত সংবাদ মাধ্যম দেখে একটু ঘাবড়ে গেছেন। নয়তো বাংলাটা ঠিকঠাক বলা এখনও রপ্ত করে উঠেননি। বাংলাদেশ ক্রিকেটের যে কোনও পর্যায়ে আদিবাসীদের মধ্য থেকে আসা প্রথম ক্রিকেটার অনিক দেব বর্মণ, যিনি বাংলাদেশ দলের জার্সি গায়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন।
শনিবার মিরপুরে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলো এই ক্রিকেটারকে। অনূর্ধ্ব-১৯ এর প্রাথমিক দলে ডাক পেয়েছেন এই তরুণ পেসার। ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী থেকে আসা অনিক হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার কালিগুচিয়া গ্রামের বাসিন্দা। যুব পর্যায়ের কোচ সাবেক পেসার নাজমুল হোসেন নজরে পড়ায় ডাক পেয়েছেন বয়সভিত্তিক পর্যায়ের জাতীয় ক্যাম্পে।
অনিক হুট করেই নজরে পড়েছেন এমন নয়। হবিগঞ্জের বাহুবলে জন্ম নিলেও পরিবারের সঙ্গে পাশের জেলা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে চলে আসা অনিক ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট পাগল। শুরুতে পরিবারিক থাকলেও জেলা পর্যায়ে সুযোগ পাওয়ার পর উল্টো অনিককে এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন তার বাবা-মা।
শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেয়া অনিক বলছিলেন, “আমি ছোট বেলা থেকেই টিভিতে খেলা দেখতাম। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার সময় শ্রীমঙ্গল শহরে আসি। সেখানে একটা একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেন বাবা। ২০২১ সালে মৌলভীবাজার জেলা স্কুল ক্রিকেটে খেলি। সেখানে ভালো করায় স্যাররা বললেন হবিগঞ্জ জেলা বয়সভিত্তিক দলে ট্রায়াল দিতে। সেখানে সুযোগ পেয়ে বিভাগীয় দলেও সুযোগ পাই। এরপর যুব পর্যায়ে খেলি। এখন জাতীয় পর্যায়ে সুযোগ পেয়েছি।”
পেসার অনিকের পছন্দ বাংলাদেশের তাসকিন আহমেদ। সেই সঙ্গে পাকিস্তানের শোয়েব আকতার ও অস্ট্রেলিয়ার ব্রেট লি কেও খুব অনুসরণ করেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় অনিক প্রথম আদিবাসী হিসেবে বাংলাদেশ দলে খেলার স্বপ্ন দেখেন।
সিলেট জেলার কোচ, জাতীয় দলের সাবেক পেসার নাজমুল হোসেনের মনে হয়েছে এই ছেলের ভবিষ্যৎ আছে। শুরুতে তার মনেই হয়নি অনিক কোনও নৃ গোষ্ঠীর ক্রিকেটার।
নাজমুল বলেছেন, “আসলে আমার একটা ভুল ধারণা ছিল যে আদিবাসীরা এত লম্বা হয় না। কিন্তু এখন দেখা গেছে ও (অনিক) ৬ ফুটের বেশি। বয়স তো কম, ও আরও লম্বা হবে, পেশিও বাড়বে। এখন ধারণা করছি ১৩০ এর মতো গতিতে বল করে, সামনে ওর গতি আরও বাড়বে। সবচেয়ে বড় কথা ও সুইং করাতে পারে। সেদিক থেকে আমি বলব ও অনেক ভালো করবে।”