গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান হিসেবে শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের। তবে কারাগারে যেতে হয়নি তাকে। তার জেলে যাওয়া ঠেকিয়েছে ফৌজদারী কার্যবিধির একটি ধারা।
এ প্রসঙ্গে সকাল সন্ধ্যা কথা বলেছে কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গে।
তারা বলছেন, ফৌজদারী কার্যবিধির ৪২৬ ধারার ২ (ক) অনুযায়ী, এক বছরের কম সময়ের সাজাপ্রাপ্ত কোনও ব্যক্তি আপিল করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট আদালত তাকে জামিন দিতে পারেন। এটি আইনের স্বাভাবিক ধারা। ড. ইউনূসকে নিয়ম অনুসারেই আপিল করার শর্তে জামিন দেওয়া হয়েছে।
এজলাসে বাগযুদ্ধ
বিচারক যখন রায় পড়তে শুরু করেন তখন দুপক্ষের আইনজীবীরা উত্তেজিত হয়ে বাগযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন।
ড. ইউনূসের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আইন বলছে অস্থায়ী শ্রমিক ছয় মাস চাকরি করলে সরাসরি স্থায়ী হয়ে যায়। এই পয়েন্ট রাষ্ট্রপক্ষ বাদ দিয়ে যাচ্ছিল, তখন আমি তাদের ধরিয়ে দিলে বাক-বিতণ্ডা হয়।”
তিনি বলেন, “যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা কোম্পানির বিরুদ্ধে হতে পারে। কিন্তু ব্যক্তির নামে এ মামলা হয় না। আইনের ৩১২ ধারা অনুযায়ী এ অপরাধ কোম্পানির। কিন্তু ব্যক্তির বিরুদ্ধে কেন মামলা করা হলো, সে প্রশ্ন আমি আদালতে রেখেছি।”
এখনই জেলে যেতে হচ্ছে না ড. ইউনূসকে
কোম্পানি দোষী সাব্যস্ত হলে এরপর সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার বিধান রয়েছে, তার আগে নয় বলে জানান তিনি।
তবে এ ধরনের বক্তব্যকে ‘জং ধরা’ বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী খুরশীদ আলম।
তিনি বলেন, “এই বক্তব্য নিয়েই তিনি উচ্চ আদালতে মামলা বাতিল করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু উচ্চ আদালত জানিয়ে দিয়েছে এর কোনও ভিত্তি নেই। সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে প্রমাণ হবে শ্রম অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে কি না।”
মামলার প্রত্যাশিত রায় পাওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে খুরশীদ আলম বলেন, “আজকের এ রায়ের মাধ্যমে মালিকরা একটা বার্তা পাবেন। শ্রম অধিকার লঙ্ঘন করলে আইনে বিচার হবেই। আপনি যেই হন না কেন, ছাড় পাবেন না।”
বিচারকের মুখে নোবেলজয় প্রসঙ্গ
রায় পড়ার সময় বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানার কথায় উঠে আসে ড. ইউনূসের নোবেলজয় প্রসঙ্গ।
তিনি বলেন, “আসামিপক্ষ এক নম্বর আসামির বিষয়ে প্রশংসাসূচক বক্তব্য উপস্থাপন করেছে। যেখানে তাকে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা নোবেলজয়ী আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব বলা হয়েছে। কিন্তু, এ আদালতে নোবেলজয়ী ইউনূসের বিচার হচ্ছে না, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান হিসেবে বিচার হচ্ছে।”
২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলায় তাদের ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় আপিলের শর্তে তাদের এক মাসের জামিন মঞ্জুর করে ঢাকার শ্রম আদালত-৩।