বাংলা ক্যালেন্ডারের হিসাবে এবার কোরবানির ঈদ পড়েছে আষাঢ়ের তৃতীয় দিনে। সাধারণত এমন দিনে আকাশে থাকে মেঘ-রোদ্দুরের খেলা, মাঝে মাঝেই আকাশ হয় কালো, ঝরে বৃষ্টি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানাচ্ছে, এবারও ঈদের দিন বৃষ্টি হতে পারে। সকাল থেকে ঢাকার আকাশ মেঘলা থাকতে পারে। দুপুর থেকে কোথাও কোথাও বৃষ্টিও হতে পারে। বিকালের বৃষ্টি বাড়তে পারে, সন্ধ্যায় বাড়বে তীব্রতা। সেইসঙ্গে বজ্রপাতও হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া উত্তরাঞ্চল ও সিলেটে ভারি বৃষ্টির আশঙ্কা আছে। ফলে সেখানে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক জানালেন, ঈদের দিন ভোরে ঢাকায় বৃষ্টি না হলেও সকাল ৯টা নাগাদ বৃষ্টি হতে পারে। তবে তা বেশিক্ষণ স্থায়ী নাও হতে পারে। শুরুতে বৃষ্টি হলে তা হালকা থেকে মাঝারি ধরনের হতে পারে।
রবিবার থেকেই কালো হয়ে এসেছে আকাশ, হুট করেই বিকালের পর অন্ধকার হয়ে যায় শহর।
কোরবানির ঈদের সময় বৃষ্টি হলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। ঈদ জামাতে যাওয়ার পথে বা জামাতের সময় বৃষ্টি হলে যেমন দুর্ভোগ পোহাতে হয় তেমনি পশু কোরবানির প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হয়।
যেসব স্থানে পানি জমে, সেখানে কোরবানির পশুর বর্জ্য ছড়িয়ে যায় অলিগলি থেকে সবখানে।
এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয়েছিল ২০১৬ সালে। সে বছর ঢাকার রাস্তায় জমে থাকা পানির সঙ্গে মিশে যাওয়া পশুর রক্তে তৈরি হওয়া ‘রক্তনদী’র ছবি উঠে এসেছিল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতেও।
এর মূল কারণ ছিল ঢাকার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। নর্দমাগুলো ময়লা আর আবর্জনায় আটকে থাকায় পানি নামতে পারছিল না। এবারেও বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে ঢাকাবাসী।
গত সপ্তাহেও ঢাকায় মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় ধানমণ্ডি, পান্থপথ, শান্তিনগরসহ বিভিন্ন স্থানে জায়গায় জলাবদ্ধতা তৈরি হতে দেখা গেছে। পানি সরতে সময় লেগেছে। তাই ঈদের দিন কী হবে, তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
যদিও সিটি করপোরেশন বর্জ্য পরিষ্কারে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেধে দিয়েছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনএলাকায় সাড়ে ১৯ হাজারের বেশি কর্মী নিয়োজিত থাকবেন। উত্তর সিটি ৬ ঘণ্টার মধ্যে এবং দক্ষিণ সিটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দিয়েছে।
বৃষ্টি হলে ঢাকার পানিতে পশুর রক্ত-বর্জ্য মিলে ছড়িয়ে পড়লে কেমন ক্ষতি হতে পারে তা জানতে সকাল সন্ধ্যার কথা হয় জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. লেলিন চৌধুরীর সঙ্গে।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “যে কোনও জনপদ বা শহরের জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এর অভাব থাকলে সে জনপদের মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিঘ্নিত হয়।”
কোরবানি ঈদের সময় বৃষ্টি হলে ‘রক্তনদী’ ঢাকার জন্য খুবই সাধারণ বিষয় জানিয়ে তিনি বলেন, “যতই সিটি করপোরেশন থেকে বলা হোক না কেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থপনা হয় না। অথচ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে শুধু মানুষ নয়, সমস্ত প্রাণীকূল, উদ্ভিত থেকে শুরু করে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণেও এর প্রভাব ভয়ংকর। কারণ এসব বর্জ্যে থাকা জীবাণু এবং নানা ধরনের বিষাক্ত পদার্থ নানাভাবে মানুষের খাদ্যচক্রে প্রবেশ করে।
“যার কারণে সংক্রামক এবং অসংক্রামকসহ নানা ধরনের রোগ যেমন হয়, তেমনি ক্যান্সার তৈরির উপাদানও শরীরে প্রবেশ করে।”
কোরবানির ঈদের দিন বৃষ্টি হলে কী হবে সেইটা এখন না ভেবে বিষটি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে আগেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল বলেও মত দেন তিনি।