যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে কোরবানির ঈদ উদযাপনে প্রস্তুত বাংলাদেশ।
আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের প্রত্যাশায় সোমবার ঈদের জামাত শেষে মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা নিজেদের সামর্থ্য অনুয়ায়ী পশু কোরবানি করবেন।
ইসলাম ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী, আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলিমদের জন্য কোরবানি দেওয়া ফরজ। তবে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হন না দরিদ্ররাও। কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির অর্থ এবং কোরবানি দেওয়া পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ তাদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীসহ বিশ্বের সব মুসলমানদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
ঈদ জামাতের সময়সূচি ঘোষণা করেছে ইসলামির ফাউন্ডেশন এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
এবারও কিশোরগঞ্জে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ময়দানে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সংখ্যার হিসাবে যা ১৯৭ তম। সকাল ৯টায় শুরু হবে এই ঈদ জামাত। এতে ইমামতি করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।
সারাদেশে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং সরকারি সংস্থাগুলোর প্রধানরা জাতীয় কর্মসূচির সঙ্গে মিলিয়ে ঈদ উদযাপন করবেন।
ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি গণমাধ্যমগুলোয় প্রচার করা হবে বিশেষ অনুষ্ঠান। দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে পরিবেশন করা হবে ঈদের খাবার।
বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোয়ও নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হবে ঈদ।
ঈদে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো।
কোরবানি দেওয়া পশুর রক্ত বা বর্জ্যের মাধ্যমে যেন পরিবেশ দুর্গন্ধময় না হয়, সে বিষয়ে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।
শেষ মুহূর্তে পথে বিড়ম্বনা
ঈদ উপলক্ষে প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটাতে কিংবা ছুটির সুযোগে বেড়াতে যাচ্ছেন অনেকে। শেষ মুহূর্তে যানবাহন পাওয়া নিয়ে সংকটে পড়েছেন অনেকে, পড়তে হয়েছে যানজটেও।
বাস না পেয়ে কিংবা টিকেটের দাম বেশি হওয়ায় অনেকে বাড়ি ফিরেছেন ঢাকার বিভিন্ন হাটে গরু পরিবহন শেষে খালি যাওয়া ট্রাকে। গরুর ব্যাপারিরাই এসব ট্রাকে তুলে নিচ্ছেন অনেককে। পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর ছাদেও উঠছেন মানুষ। নারী-পুরুষের পাশাপাশি অনেক শিশুও শামিল হচ্ছে এই ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায়।
এমনই এক ট্রাকযাত্রী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলী আসিসের সঙ্গে কথা হয়। রবিবার সকালে ঢাকা থেকে যাত্রা করে দুপুর ১২টায় টাঙ্গাইল বাইপাস রোডে পৌঁছাতে পেরেছিলেন বলে তিনি জানালেন।
তিনি বলেন, “চন্দ্রা পার হতে অনেক সময় লেগেছে। অসহনীয় যানজট, তবুও এক সময় বাড়িতে যেতে পারব। ১০ দিনের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছি। তাই কষ্ট হলেও এমন যাত্রা খারাপ লাগছে না।”
বিকালের পর গাবতলী ও আমিনবাজার ব্রিজের আশপাশে দেখা গেছে অনেক খালি ট্রাক। যাত্রী নিতে চালকদের খুব বেশি পরিশ্রম বা অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। প্রতিটি ট্রাকেই কম-বেশি মানুষ ভিড় করছেন বাড়ি ফেরার জন্য। বাস ভাড়ার তুলনায় অর্ধেক টাকায় তারা যাত্রীদের তুলে নিচ্ছেন।
মহাখালী বাস টার্মিনালের আশেপাশেও দেখা গেছে এমন করে ট্রাকে যাত্রী তুলে নিতে।
সেখানে অপেক্ষমাণ ট্রাকের চালক আমিনুল বলেন, “আমরা প্রতিদিনই গরু নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাটে পৌঁছাই। কিন্তু হাটে গরু নামিয়ে বাড়ির পথ ধরতে গিয়ে দেখা যায় অনেক যাত্রী রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। গন্তব্য মিলে গেলে তারা ট্রাকে উঠে পড়েন। ভাড়া যে যেমন দিচ্ছেন তাই নিচ্ছি। ঈদের সময়, মানুষ তো বাড়ি যাবেই।”