টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের তিন ম্যাচে নাজমুল হোসেন শান্তর রান ৭, ১৪ ও ১। অধিনায়কের অফফর্মের রেশ অবশ্য দলে প্রভাব ফেলেনি। তিন ম্যাচের দুটিতে জিতে বাংলাদেশ সুপার এইটের নৌকায় এক পা রেখেছে। দল হিসেবে এবারের বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য ভালো ফল। তেমন কিছু হলে অধিনায়কের ফর্ম চোখ এড়িয়ে যেতেই পারে!
আইসিসি টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ ভালো করছে আর অধিনায়ক রং হারিয়েছেন এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে। সেসব আসরে অধিনায়কের পারফরম্যান্স নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল। দিন শেষে দলের পারফরম্যান্স অবশ্য অধিনায়ককে বাঁচিয়ে দেয়।
প্রথমটি ২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপে। সেবার ভারতের বিপক্ষে পোর্ট অব স্পেনের ঐতিহাসিক জয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের গতিপথ বদলে দেয়। উইন্ডিজে অনুষ্ঠিত হওয়া আসরটিতে ভারতকে হারিয়ে প্রথমবার গ্রুপ পর্ব পার করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে সবচেয়ে বড় চমক দেয়। তবে হেরে যায় আয়ারল্যান্ডের কাছে।
২০০৩ বিশ্বকাপে কেনিয়া-কানাডার কাছে হারের পর ওই সাফল্য ছিল বিরাট অর্জন। কিন্তু সেখানে অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের ব্যাট হাসেনি। ২০০৭ বিশ্বকাপে খেলা মোট ৯ ইনিংসের ৮টিতে ব্যাট করেন সাবেক অধিনায়ক। ১৩.১২ গড়ে রান করেছেন মাত্র ১০৫, সর্বোচ্চ ছিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৩২। কিন্তু ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর অর্জনে সেবার আসরটিতে সফল টুর্নামেন্ট ধরা হয় বাংলাদেশের জন্য।
একই বছরে (২০০৭) টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অধিনায়ক ছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। ওই আসরে একটি ইনিংস বাদে বিবর্ণ ছিলেন আশরাফুল। অবশ্য ওই এক ইনিংসে উইন্ডিজের বিপক্ষে জয় দিয়ে প্রথম টি-টোয়েন্টি আসরেই সুপার এইট নিশ্চিত করে বাংলাদেশ।
ওই টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচে ৬১ রান বাদে বাকিগুলোতে ১০, ৭, ৪ ও ৫ রান করেন আশরাফুল। পাঁচ ইনিংসে ৮২ রান করেন ১৬.৪ গড়ে। প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠায় আশরাফুলের রান খরা নজড়ে পড়েনি।
২০১৯ আসরে অধিনায়কের ফর্ম নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়। ওই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্বে ছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। ১০ দলের বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচ খেলার কথা বাংলাদেশের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টনটনের ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়। বাকি ৮ ম্যাচে অধিনায়ক মাশরাফি পেয়েছেন মাত্র ১ উইকেট। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে মাশরাফি অধিনায়ক কোটায় খেলেছেন বলে বেশ ঠাট্টাও হয়েছিল ২০১৯ সালে।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটি শিকার ছাড়া আর সব ম্যাচে উইকেটশূন্য থেকেছেন মাশরাফি। ওই আসরে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে শুরু করে বাংলাদেশ। পরে উইন্ডিজের বিপক্ষে দারুণ দাপটের সঙ্গে ম্যাচ জেতে। আফগানিস্তানকে অনায়াসে হারিয়ে আর একটি জয় না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে শেষ হয় বাংলাদেশের অভিযান। আর এক ম্যাচ জিতলে বাংলাদেশের সেমিফাইনাল স্বপ্ন উজ্জ্বল হতো।
ক্রিকেট অনেকটা বদলে যাওয়ায় এখন অধিনায়কের ফর্ম খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই এবারের আসরে নাজমুল শান্তর অফফর্মের আলোচনা বেশি। শুধু শান্তই নন, দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটার লিটন দাশও রান খরায় ভুগছেন। তবুও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৬ রানের কার্যকর একটি ইনিংস আছে লিটনের। কিন্তু শান্তর ব্যাট হাতে অবদান সামান্য।
ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে আসা তানজিম হাসান সাকিব অবশ্য অধিনায়কের দ্রুত রানে ফেরার আশা রাখছেন, “শান্ত ভাই খুব পরিশ্রম করছে প্র্যাকটিসে নিজেকে ফর্মে ফিরিয়ে আনার জন্য। উনি আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। অধিনায়ক হিসেবেও খুবই ভালো। আমাদের খুব ভালো লাগে, আমরাও প্রশংসা করি। সবাইকে খুব আগলে রাখেন, গুছিয়ে রাখেন- মাঠ ও মাঠের বাইরে। এটা খুব ভালো দিক আমি বলব।”
শান্ত এই বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে রং হারালেও নেতৃত্বে ততটাই উজ্জ্বল। মাঝের ওভারগুলোতে তার বোলিং পরিবর্তন বা ফিল্ডিং সাজানো খুব প্রশংসা পাচ্ছে অভিজ্ঞ ধারাভাষ্যকারদের। প্রয়োজনের সময় সাকিব আল হাসানোর মতো বোলারকে মাত্র এক ওভার দেয়ার সাহসও দেখাচ্ছেন।
নিজের সিদ্ধান্ত স্বাধীণ ভাবে নেওয়ার সাহস দেখিয়ে বাহবা কুড়িয়েছেন শান্ত। দলের প্রয়োজনে নিজের খারাপ সময়েও ওপেনিয়ে ব্যাট করায় তার মানসিকতার প্রশংসাও হচ্ছে। ফিল্ডিংয়ে তার শরীরী ভাষায় নেই হতাশা বরং আত্মবিশ্বাস নিয়ে সব সামলাচ্ছেন। এই সাহসী পদক্ষেপ ও আত্মবিশ্বাস শান্তর ব্যাটে রান এনে দিক। নেপাল ম্যাচ থেকে এটাই প্রত্যাশা।