সংবাদ সম্মেলনে এসে নিজের অবসরের ঘোষণা দিয়ে চুপ করে বসে থাকার নজির সম্ভবত এই প্রথম। দিল্লি স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে সাউন্ড সিস্টেম অফ করা ছিল। ভারতীয় ক্রিকেটের কেউই পাশে ছিলেন না। মাহমুদউল্লাহ ততক্ষণে বলেও দিয়েছেন, “আমি অবসরের ঘোষণা করছি”। এরপর ১০ মিনিট বসে থাকতে হয় মাইক অন না হওয়ায়।
মাহমুদউল্লাহ ইনিংসের শুরুতে নাকি ১০ বল দেখে এরপর ব্যাট চালান। তার অবসর ঘোষণাতেও যে বলে দেওয়ার পর আবার ‘স্টার্ট-স্টপ’ করতে হবে- এটা সম্ভবত তিনিও জানতেন না। তবে গোলযোগ কেটে যাওয়ার পর সাবলীলভাবে ও হাসিমুখে অবসরের ঘোষণা দিলেন।
টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ইতি টানার সময় মনে কোনও আক্ষেপ নেই মাহমুদউল্লাহর। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, “আমার আক্ষেপ নেই, এক ফোঁটাও আক্ষেপ নেই। বাংলাদেশের জন্য এতগুলো বছর খেলা, এটা আমার জন্য বিশাল একটা বিষয়। ২০০৭ সালে শুরু করে এতদিন পর্যন্ত আমি যতদূর এসেছি, জানি না কতটুকু সফল হয়েছি। কিন্তু সত্যি বলতে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি এবং আমি খুশি।”
ভারত সিরিজের অনুশীলন শুরুর সময় তার মনে অবসরের খেয়াল আসে। পরিবারকে জানান, শুরুতে তারা সায় দেননি। এরপর আবারও বুঝিয়েছেন তখন অন্ধকার দূর হয়। এরপর নির্বাচকদের সঙ্গে এবং অধিনায়ক ও কোচের সঙ্গে কথা বলে ভারতেই অবসরের ঘোষণা দিয়ে দিলেন এই অলরাউন্ডার।
বাংলাদেশে শেষ ম্যাচ খেলার অপেক্ষায় থাকা সমীচীন হতো না বলে জানিয়েছেন তিনি, “আমি এরকমটা মনে করছি না। এখন যদি আমি মনে করি বাংলাদেশ থেকে অবসর নেব তাহলে ব্যাপারটা ভালো দেখায় না। আর এটা ঠিকও হবে না হয়তো। তাই আমি মনে করছি এখনই সেরা সময় অবসর ঘোষণার জন্য।”
সেরা মুহূর্ত নিদাহাস ট্রফি
২০১৮ নিদাহাস ট্রফির সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে ১ বল হাতে রেখে ২ উইকেটে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ১৬ বলে অপরাজিত ৪৩ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। ইনিংসের শেষ ২ বলে বাংলাদেশের দরকার ছিল ৬ রান। ওভারের পঞ্চম বলে ছক্কা মেরে ম্যাচ জেতান ৩৮ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।
ওই ম্যাচটিকে ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত বলেছেন মাহমুদউল্লাহ। তবে বেঙ্গালুরুতে ২০১৬ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে হেরে যাওয়া ম্যাচ তার জীবনের বড় শিক্ষা, “২০১৬ বিশ্বকাপে বেঙ্গালুরুর ম্যাচটা আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে হাইলাইটেড মুহূর্ত। একই সঙ্গে সেটা আমার শিক্ষণীয় মুহূর্তও। তবে ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত বললে বলবো ২০১৮ সালের নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমার ব্যাটে জেতানো ম্যাচ।”
মাহমুদউল্লাহর কাছে ট্রফি না জেতা বড় বিষয় নয়। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে এমন অবস্থানে তুলতে অবদান রাখাকেই বড় করে দেখছেন, “ট্রফি নেই এটা একটা খারাপ লাগা। আমি অনেকের কাছ থেকে শুনি এমনকি সাংবাদিকদের কাছ থেকেও শুনি যে, আমরা বা পঞ্চপাণ্ডব শিরোপা জিতিনি। দেখুন, আমি যখন ২০০৭ সালে ড্রেসিংরুমে ঢুকি তখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের অবস্থা এই সময়ের মতো ছিল না। আর এটা শুধু পঞ্চপাণ্ডব না, সবার অবদান আছে। কখনোই শিরোপার ওপর হিসেব করে সাফল্য-ব্যর্থতা হিসাব করা উচিত না।”
এখনও বাকি আছে কথা
২০২১ সালে কাউকে কিছু না বলেই টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। সেই অবসর নিয়ে একটি শব্দও বের হয়নি মাহমুদউল্লাহর মুখ থেকে। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে বলেছিলেন অনেক কিছু বলার আছে।
মঙ্গলবার টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর ঘোষণার সময়ও কিছু বলেননি মাহমুদউল্লাহ। এদিনও চুপ থাকলেন তিনি। তবে মনের কথা জানাবেন সামনে, “আমি ভুলি নাই, অবশ্যই বলব। এখনও সঠিক সময় হয়নি। আমি খেলা শুরু করেছি নিজের ইচ্ছায়, বিদায়ও নেব নিজের ইচ্ছায়। আর ওটা আমার সময় মতো অবশ্যই পাবেন, গরম খবর।”
তবে টি-টোয়েন্টি থেকে বিদায়ের দিনে অপছন্দ করে এমন লোকদেরও ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি, “মানুষের ভালোবাসা ও দোয়া না থাকলে এই পর্যন্ত আসতে পারতাম না। তাদের সঙ্গে সাংবাদিকদেরও এই ধন্যবাদটা দিতে চাই। যারা আমাকে পছন্দ করে না তাদেরও ধন্যবাদ দিতে চাই।”