২০২২ বিশ্বকাপে অ্যাডিলেডে দুই দলের লড়াইটা জমে উঠেছিল। বৃষ্টি বিঘ্নিত সেই ম্যাচে মাত্র ৫ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। দুই বছরের ব্যবধানে দুই দলের শক্তির পার্থক্য হয়ে গেছে পাহাড়সম। তার প্রমাণ অ্যান্টিগায় শনিবারের ম্যাচ। ৫০ রানের হারে বাংলাদেশ বুঝল টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সামর্থ্য কতটুকু। শুধু ব্যাট-বলের স্কিলেই বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই, সাহস ও পরিকল্পনাতেও ভারতের চেয়ে অনেক দূরে আছে।
টস জয় ও বোলিং
রোহিত শর্মা টস হেরে কি বলেছিলেন তা এখন কারোরই মনে থাকার কথা না। কিন্তু রোহিতের ওই সময়ের কথার ওজন ম্যাচ শেষে বোঝা গেছে। এমন উইকেটে টস হেরে রোহিত ভয়ে ছিলেন ব্যাটিংটা না হাতছাড়া হয়ে যায়। তাই ব্যাটিং পেয়ে বলেছেন, “খুব করে চাইছিলাম আগে ব্যাট করি। এই সিদ্ধান্তে (পরে ব্যাট করা) আমি খুশি। এখানে উইকেট ম্যাচ যত গড়াবে তত স্লো হবে।”
পিচে শুরুর দিকটাতেই পেসাররা যা একটু সুবিধা পেতেন। বল ১০ ওভার পুরোনো হলেই অ্যান্টিগার উইকেটে স্লোয়ার কাটারের ওপর নির্ভর করতে হয় পেসারদের। বাংলাদেশ টস জিতে বোলিং নিয়েছে, কিন্তু পেসার না দিয়ে দুই প্রান্ত থেকে স্পিনার দিয়ে বোলিং ইনিংস শুরু করে। আর দুই ওভারেই ভারতের রান ২০ ছাড়িয়ে যায়।
এছাড়া ইনিংস জুড়ে বাংলাদেশ বোলারদের বাজে বোলিংয়ের সুবিধা নিয়েছেন ভারত ব্যাটাররা। মোস্তাফিজুর রহমান সত্যিকার অর্থেই ধীর ও নীচু ধরনের পিচ ছাড়া ভালো বল করতে পারেন না। অ্যান্টিগায় টানা দ্বিতীয় ম্যাচে তা প্রমাণ হলো। ৪ ওভারে বিনা উইকেটে ৪৮ রান দিয়েছেন।
আগে ব্যাট করে উইকেটের সুবিধায় যতটা সম্ভব রান তোলার চেষ্টা করতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু টস জিতে বোলিং নিয়ে আগেই ম্যাচটা ছেড়ে দিয়েছে তারা। নাজমুল হোসেন শান্তদের এই ম্যাচের পরিকল্পনা দেখে অবাক হয়েছেন ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন। টুইটার পোস্টে লিখেছেন, “ডে ম্যাচে বাংলাদেশ টস জিতে আগে বোলিং করছে!!!! স্পিনের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য দুই ব্যাটারের বিপক্ষে স্পিন দিয়েই শুরু করেছে….দুজনেরই যখন বাঁহাতি পেসারদের খেলা কষ্ট হচ্ছে তখন মোস্তাফিজকে দিয়ে শুরু করেনি….কি অদ্ভুত….”
ভারতের ছক্কার রেকর্ড
অ্যান্টিগার এই মাঠে ছক্কা মারা খুব সহজ নয়। তবে টেকনিক্যালি ব্যাটিং করা সহজ। কিন্তু বাংলাদেশ বোলারদের বাজে বোলিং কাজে লাগিয়ে ভারত বিশ্বকাপ ম্যাচে ছক্কার রেকর্ড করে ফেলেছে। ৫ উইকেটে ১৯৬ রানের ইনিংসে ১৩টি ছক্কা মেরেছে ভারত। বিশ্বকাপে এক ইনিংসে ভারতের এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যক ছক্কা। আগেরটি ছিল ২০০৭ সালে যুবরাজ সিংয়ের ছয় ছক্কা মারার সেই ম্যাচে ১১টি।
একই সঙ্গে অ্যান্টিগার মাঠে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ডও হয়েছে। এছাড়া শুরুর ৫ ব্যাটারের হাফসেঞ্চুরি ছাড়ায় ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ডও হয়েছে বাংলাদেশের বিপক্ষে।
হারদিক পান্ডিয়া টার্নিং পয়েন্ট
হারদিক পান্ডিয়ার ইনিংস বাংলাদেশের হাত থেকে এই ম্যাচ কেড়ে নিয়েছে। অথচ নবম ওভারে তানজিম সাকিব এক ওভারে বিরাট কোহলি ও সূর্যকুমার যাদবকে ফিরিয়ে দারুণ সময় এনে দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। দুই ওভারের ব্যবধানে ঋষভ পান্ত বিদায় নিলে দারুণ চাপে পড়েছিল ভারত।
১৪ ওভার শেষে দলটির রান ছিল ৪ উইকেটে ১২০। রান আটকে রাখা গেলে পরের ৬ ওভারে ১৬০ এর মধ্যে বাঁধা যেত ভারতকে। কিন্তু প্রতি ওভারেই একটি করে শর্ট বল বা গুড লেন্থের বল করে একের পর এক বাউন্ডারী হজম করছিলেন বোলাররা। মোস্তাফিজ শেষ ওভারে দিয়েছেন ১৮ রান, রিশাদ ১৮তম ওভারে দিয়েছেন ১৫ রান। অথচ এ দুই ওভারের মাঝে ১৯তম ওভার করা তানজিম সাকিব দিয়েছিলেন ৮ রান।
হারদিকের ফিফটিতে শেষ ৬ ওভারে ৭৬ রান নেয় ভারত। পান্ডিয়া ২৭ বলে ৩ ছক্কা ও ৪ চারে ৫০ রান করেন। সঙ্গে শিবম দুবে ২৪ বলে ৩ ছক্কায় করেছেন ৩৪। এ দুজন বাংলাদেশকে পাওয়ার হিটিংয়ের সঠিক শিক্ষাটাও দিয়েছে।
“আনপ্লেয়েবল” কুলদ্বীপ
ব্যাটিং ইনিংসে কুলদ্বীপ যাদবের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। বুমরাহকে সামলানোর ভয় আগে থেকেই ছিল। কম রান দিয়ে এই বোলারের ওভারগুলো কাটিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ সফল হয়েছে বলা যায়। কিন্তু চায়নাম্যান কুলদ্বীপ নতুন আতঙ্ক হয়ে ওঠেন। ৪ ওভারে মাত্র ১৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে মাঝের ওভারগুলোতে বাংলাদেশের রানের গতি থামিয়ে দেন। তার বোলিংয়ে বৈচিত্র্য বুঝতেই পারেননি তানজিদ তামিম, তাওহিদ হৃদয় ও সাকিব আল হাসান।
তানজিদের ৩১ বলে ২৯
ইনিংসের শুরুর দিকে তানজিদ বেশ কিছু চার মেরে ভালো ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু পেস থামিয়ে স্পিন আক্রমণ টানতেই আর বড় শট খেলতে পারেননি এই ওপেনার। বুমরাহ, জাদেজা, কুলদ্বীপের বলে মাঝ ব্যাটে খেলতে ব্যর্থ হন। তাই ৩১ বলের ইনিংসে ১৪তম বলে সর্বশেষ চার মারার পর আর বাউন্ডারী আসেনি তানজিদের ব্যাট থেকে। রান তোলার চাপে পড়ে কুলদ্বীপের গুগলীতে পেছনে গিয়ে কাট করার চেষ্টায় বল মিস করে এলবিডব্লিউ হন।
ব্যর্থ ব্যাটিং
টি-টোয়েন্টির সঙ্গে মানিয়ে খেলতে গিয়ে শুরুতেই বড় শটের চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশ ব্যাটাররা। তাতে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে শুরুর দিকে উইকেট হারাতে হয়। পরিকল্পনা বদলে সুপার এইটে শুরুতে উইকেট ধরে রাখার চেষ্টা করে বাংলাদেশ। ব্যাটিংটা এবার হয়ে যায় বিরক্তির। ওয়ানডে স্টাইলের ব্যাটিংয়ে টি-টোয়েন্টির তেজটা আর নেই। আরেকটি ব্যর্থ ব্যাটিংয়ে তাই বড় হারও জটেছে। সঙ্গে বাংলাদেশের বিশ্বকাপও এই হারে আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ।