ভারতে নির্বাচনের মধ্যে রাজনৈতিক আলোচনায় উঠে এল কলকাতায় বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি।
এই হত্যাকাণ্ড নিেয় পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির আঞ্চলিক নেতারা।
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির মুখপাত্র এবং রাজ্যসভার এমপি শমীক ভট্টাচার্য বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনে পশ্চিমবঙ্গে এই অনিরাপদ অবস্থা তৈরি হয়েছে।
লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে গত এপ্রিল থেকে। ষষ্ঠ ধাপে শনিবার যে ৫৮টি আসনে ভোটগ্রহণ হচ্ছে, তার মধ্যে আটটিই পশ্চিমবঙ্গের।
ভোটের তিন দিন আগে রাজ্যের রাজধানী কলকাতার নিউ টাউনের একটি ফ্ল্যাটে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য আনারকে খুনের খবরটি প্রকাশ্যে আসে।
আনারের খুনিরা বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়েছিল বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। লাশ খণ্ড-বিখণ্ড করার কাজে ব্যবহার করা হয় আরেক বাংলাদেশিকে। জিহাদ হাওলাদার নামে সেই ব্যক্তিকে মুম্বাই থেকে কলকাতায় আনা হয়েছিল।
শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ কার্যত বধ্যভূমি হয়ে গেছে। এটা যে এখন একটা সেইভ প্যাসেজ থেকে কুখ্যাত দুষ্কৃতকারীদের হ্যাপি হানটিং রাউন্ডে রূপান্তরিত হচ্ছে, অন্তত বাংলাদেশের সন্মানিত সাংসদ আনোয়ারুল আজীম আনারের মৃত্যু সেটারই প্রমাণ।
“যে নৃশংসভাবে তার মৃত্যুর সংবাদ আসছে বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থার কাছ থেকে, যে তার হাড় থেকে মাংস আলাদা করে তাতে মসলা লাগানো হয়েছে। জিহাদ হাওলাদার, একজন প্রফেশনাল বুচার, তাকে নিয়ে এসে আমাদের কলকাতার একটি অভিজাত আবাসন এলাকায় একটা খুন করা হলো। এবং আরও আশ্চর্যের বিষয় বিভিন্ন ধরনের আবাসনে বা বিভিন্ন জায়গায় ফরেন ন্যাশনালরা কীভাবে বাড়িভাড়া পেয়ে যাচ্ছেন, সেটাও এখন পশ্চিমবঙ্গের খতিয়ে দেখা দরকার।”
পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি জানিয়েেছ, আনার খুনের পরিকল্পনা যিনি করেন, সেই আক্তারুজ্জামান শাহীন একজন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি। তিনি কলকাতার ওই ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন সম্প্রতি।
বিজেপি নেতা শমিক বলেন, “আসলে এই রাজ্যে কার্যত ইন্টেলিজেন্স বলে কিছু নেই।
“অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে বাংলাদেশের সঙ্গে ২২০০ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ একটা বর্ডার থাকার পরও, এমন একটা আন্তর্জাতিক সীমানা থাকার পরও, যেখানে কার্যত একটা নির্দিষ্ট ফোর্সের পক্ষে একা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, সেখানে এই ধরনের অ্যাক্টিভিটিজ আমাদের রাজ্যের মধ্যে বাড়ছে।
“সারা পৃথিবীর সামনে আমাদের এই রাজ্যের নিরাপত্তা, রাজ্যের সম্মান একটা প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে গেল। সেভাবে কাউকে গ্রেপ্তারও করা হলো না। আক্তারুজ্জামান, যাকে মাস্টারমাইন্ড বলা হচ্ছে সেও এখনও অধরাই আছে। এবং কী কারণে খুন হয়েছে, এর পেছনে আর কেউ আছে কি না, সেটাও এখনও তদন্তকারী সংস্থা জানাতে পারেনি। মিসিং ডায়েরি করার পরও রাজ্য পুলিশ কোনও সংবাদ সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এখনে আমাদের গোয়েন্দা বিভাগেরও একটা চূড়ান্ত ব্যর্থতা।”
বাংলাদেেশ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হঠাতে যারা সক্রিয়, তারা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের প্রশ্রয় পাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বিজেপির নেতা।
তিনি বলেন, “এই রাজ্যে বহু জিহাদি সংগঠন সক্রিয়, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা বারবার রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছে। হালনগর বিস্ফোরণ তার একটা বড় প্রমাণ।
“রাজ্যের মধ্যে বসে প্রকাশ্যে শেখ হাসিনাকে গুমের ছক কষা হয়েছিল। এখনও রাজ্যের বহু জায়গায় ধর্মীয় সমাবেশে ‘এগিয়ে চলো এগিয়ে চলো, ঝাঁপিয়ে পড় ঝাঁপিয়ে পড়, বাংলাদেশে ঝাঁপিয়ে পড়’, বয়ান তুলেছে ‘শেখ হাসিনাকে ফাঁসিতে তোলো, শেখ হাসিনার গলায় দড়ি তোলো’, এটা চলছে। এসবের বিরুদ্ধে কোথাও কোনো ব্যবস্থা পুলিশ নেয়নি।”