Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

এমবাপ্পের আগে ব্যালন ডি’অর জিততে পারেন হলান্ড

মেসি-রোনালদো যুগ শেষ পর্যায়ে। এরই মধ্যে ফুটবল বিশ্বে নতুন দ্বৈরথ তৈরি হয়েছে এমবাপ্পে-হলান্ডের। ছবি: টুইটার
মেসি-রোনালদো যুগ শেষ পর্যায়ে। এরই মধ্যে ফুটবল বিশ্বে নতুন দ্বৈরথ তৈরি হয়েছে এমবাপ্পে-হলান্ডের। ছবি: টুইটার
Picture of খালিদ রাজ

খালিদ রাজ

সময়ের স্রোতধারায় দুজন আজ দুই দিগন্তে। ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো গিয়েছেন সৌদি আরব আর লিওনেল মেসি পাড়ি জমিয়েছেন আটলান্টিকের ওপার। দিনে দিনে বয়স তো কম হলো না। দুজনই ক্যারিয়ারের গোধুলী বেলায়।প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁঝ আর নেই। ব্যালন ডি’অর লড়াইয়ের সম্ভাবনাও ক্ষীণ। মেসি-রোনালদো যুগ পেরিয়ে ব্যক্তিগত অর্জনের সবচেয়ে বড় পুরস্কারটিতে ওই প্রতিদ্বন্দ্বিতা কি আর দেখা যাবে?

ওই যে একটা কথা আছে, জগতের কোনও কিছু কারও জন্য থেমে থাকে না। তেমনি মেসি-রোনালদো না থাকলেও ফুটবল চলবে, নতুন কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়ে যাবে। যাবে কী, ইতিমধ্যে হয়ে আছে! কিলিয়ান এমবাপ্পে ও আর্লিং হলান্ডের ব্যক্তিগত দ্বৈরথ। দুজন ভিন্ন লিগে খেলেন, তবে ব্যালন ডি’অর লড়াইয়ে আগামীতে তাদের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমে ওঠার সম্ভাবনা বেশি।সামনে এ লড়াই ত্রিমুখী হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন জুড বেলিংহাম।রিয়াল মাদ্রিদে আসা এ ইংলিশ মিডফিল্ডারের সুরভিত ফুটবল তৈরি করছে নতুন মোহ।

নতুন দ্বৈরথ

এবারের ব্যালন ডি’অর জিতেছেন মেসি। পরের দুটি জায়গায় হলান্ড ও এমবাপ্পে। ম্যানচেস্টার সিটি স্ট্রাইকার দ্বিতীয়। প্যারিস সেন্ত জার্মেই তারকা তৃতীয়। মেসিকে বাইরে রাখলে ব্যক্তিগত পুরস্কারের লড়াই কিন্তু শুরু হয়ে গেছে হলান্ড-এমবাপ্পের।

বরুসিয়া ডর্টমুন্ড থেকেই দারুণ ছন্দে হলান্ড। এখন ম্যান সিটিতে এসে হয়েছেন আরও ভয়ংকর। অন্যদিকে এমবাপ্পে পিএসজিতে নাম লেখানোর পর থেকে নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। ২০১৮ সালে জিতেছেন বিশ্বকাপ। ২০২২ বিশ্বকাপেও গিয়েছিলেন শিরোপার খুব কাছে। কিন্তু ফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে হারে রানার্স-আপ হয় তার দল ফ্রান্স। তাছাড়া দলবদলের মৌসুমে সবসময় আলোচনায় থাকেন এমবাপ্পে।

তারপরও ফরাসি তারকার আগে ব্যালন ডি’অর জিততে পারেন হলান্ড! অতীত হিসাব ও বর্তমান পারফরম্যান্স মিলিয়ে দেখলে এমবাপ্পের তুলনায় এগিয়ে ম্যান সিটি স্ট্রাইকার।

কেন এগিয়ে হলান্ড

২০১৭ সালে ধারে পিএসজিতে যোগ দেন এমবাপ্পে। পরের বছর স্থায়ী চুক্তি হয় ফরাসি ক্লাবটির সঙ্গে। ওই ২০১৮ সালেই ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। এরপরও সেবারের ব্যালন ডি’অর লড়াইয়ে সেরা তিনে থাকতে পারেননি। হয়েছিলেন চতুর্থ। পরের বছরগুলোতেও একই অবস্থা। এবারই প্রথম শীর্ষ তিনে ছিলেন পিএসজি ফরোয়ার্ড।

এখানে বড় কারণ হতে পারে চ্যাম্পিয়নস লিগের পারফরম্যান্স। পিএসজি বারবার নকআউটে আটকে যাওয়ায় ব্যক্তিগত পুরস্কারের দৌড়ে সুবিধা করতে পারেননি এমবাপ্পে। আর এই জায়গাতেই এগিয়ে থাকছেন হলান্ড। ম্যান সিটিতে নাম লেখানোর পর এই স্ট্রাইকারের আগুনে পারফরম্যান্স। গতবার প্রিমিয়ার লিগ ও লিগ কাপের সঙ্গে জিতেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা। যার পুরস্কার হিসেবে ব্যালন ডি’অর হয়তো জেতা হয়নি, তবে পেছনে ফেলেছেন এমবাপ্পেকে। হয়েছেন দ্বিতীয়। এমবাপ্পের (২৭০) চেয়ে ৮৭ ভোট বেশি তার (৩৫৭)।

চলতি মৌসুমেও দারুণ ফর্মে হলান্ড। প্রিমিয়ার লিগ কিংবা চ্যাম্পিয়নস লিগে নিয়মিত গোল পাচ্ছেন। অবশ্য শুধু ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স দিয়ে ব্যালন ডি’অর জেতা যায় না। এজন্য চাই দলীয় সাফল্য। এখানেও এমবাপ্পের পিএসজি থেকে এগিয়ে হলান্ডের ম্যান সিটি।

বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ প্রিমিয়ার লিগের গত ছয় মৌসুমের পাঁচটিতে চ্যাম্পিয়ন সিটিজেনরা। চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম শিরোপাও এসেছে গত মৌসুমে। হ্যাঁ, এমবাপ্পের পিএসজিও ফরাসি লিগকে নিজেদের বানিয়ে রেখেছে। তবে প্রিমিয়ার লিগের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফুটবলের সঙ্গে ফরাসি লিগের তুলনা করা বোকামি। চ্যাম্পিয়নস লিগই হতে পারে তাদের শ্রেষ্ঠত্বের সবচেয়ে বড় নজির। কিন্তু সেখানে পিএসজির হতাশা সবসময়। ২০১৯-২০ মৌসুমে ফাইনালে খেলা এখন পর্যন্ত তাদের সবচেয়ে বড় অর্জন।

অর্থাৎ, ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের সঙ্গে দলীয় সাফল্যের বিবেচনায় নিলেও এমবাপ্পে থেকে এগিয়ে হলান্ড।

ইতিহাস কী বলছে

ভাগ্যিস লিওনেল মেসি পিএসজিতে খেলতে গিয়েছিলেন! না হলে ব্যালন ডি’অর ফ্রান্সের স্রেফ একটা ‘উৎসব’ হয়েই থাকতো। পুরস্কারটি দিয়ে থাকে ফরাসি ম্যাগাজিন ‘ফ্রান্স ফুটবল’। অথচ নিজের দেশের কোনও খেলোয়াড় কিংবা ক্লাবে খেলা কাউকে সেটি দিতে পারছিল না অনেক বছর। ফরাসি লিগের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে এই শতাব্দীতে ব্যালন ডি’অর জিতেছেন মেসি। ২০২১ সালে জেতেন পিএসজির জার্সিতে।

তার আগে ১৯৯১ সালে ফরাসি লিগের সর্বশেষ খেলোয়াড় হিসেবে ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন অলিম্পিক মার্শেইয়ের জ্যঁ-পেরি পাপিন। সময়ের পার্থক্যটা ৩০ বছরের। ব্যালন ডি’অরের হিসাবে ফরাসি লিগের অবস্থা এতটাই করুণ। অথচ ২৪ বছর বয়সী এমবাপ্পে এই লিগে পড়ে আছেন। রিয়াল মাদ্রিদ কয়েক দফা ‘ডাক’ দিয়েও পায়নি তাকে। পিএসজি না ছাড়লে এমবাপ্পের অপেক্ষা হয়তো আরও বাড়বে। তাহলে উপায়? সেক্ষেত্রে ব্যালন ডি’অর জয়ের পথে একমাত্র সমাধান হতে পারে পিএসজি ইউরোপিয়ান সাফল্য।

তবে অতীত ইতিহাস যা বলছে, তাতে ফরাসি লিগে থেকে ব্যালন ডি’অর জেতার আশা করাটা কঠিন। বর্তমানে যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফুটবল চলছে, সেখানে ‘এক ঘোড়া’র রেসের ফরাসি লিগে থেকে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরার স্বপ্ন দেখাটা বাড়াবাড়িই নয় কি?

ইতিহাসের কথা টানলে হলান্ডও সুবিধাজনক জায়গায় নেই। তার দেশ নরওয়ের কোনও খেলোয়াড় জিততে পারেননি ব্যালন ডি’অর। ক্লাবেও একই অবস্থা। হলান্ডের বর্তমান ক্লাব ম্যান সিটির কোনও খেলোয়াড়ের হাতেও ওঠেনি পুরস্কারটি। তবে এটাও ঠিক, আগে ম্যান সিটির ইউরোপিয়ান সাফল্য ছিল না। আর এখন ইংল্যান্ড ছাড়িয়ে ইউরোপে রাজত্ব চলছে হলান্ডের ম্যান সিটির।

ফুটছে নতুন ফুল

ব্যালন ডি’অর অনুষ্ঠানে যাওয়া পর্যন্ত বাদ দিয়েছিলেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা লিওনেল মেসির শ্রেষ্ঠত্ব ‘দ্বিতীয়’ হয়ে দেখার মতো মানসিকতার তার নেই। কারণ তিনি পর্তুগিজ। যাদের রক্তে কেবলই জয়ের আকাঙ্ক্ষা। ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল- টানা চার বছর মেসিকে ব্যালন ডি’অর জিততে দেখে আরও মরিয়া হয়ে ওঠেন পর্তুগিজ তারকা। ২০১৩ সালে তার হাতে ধরা দেয় ‘ফ্রান্স ফুটবল’-এর পুরস্কারটি। পরের বছর আবারও। ১৬ বছরের মধ্যে (করোনার কারণে ২০২০ সালে দেওয়া হয়নি) মেসি (৮ বার) ও রোনালদো (৫ বার) মিলেই জিতেছেন ১৩ বার। বাকি দুইবার জিতেছেন- লুকা মদরিচ (২০১৮) ও করিম বেনজেমা (২০২২)।

মেসি-রোনালদোর যুগ শেষ পর্যায়ে। তুলনামূলক কম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লিগে খেলে ব্যালন ডি’অর জেতার আশা করা বাড়াবাড়ি। যদি না জাতীয় দলের হয়ে ইউরো, কোপা আমেরিকা কিংবা বিশ্বকাপ জিতে নেন তারা। সময় এখন অন্যদের। আরও নির্দিষ্ট করে বললে ইউরোপিয়ান ক্লাবের খেলোয়াড়দের। সেখানে সবচেয়ে বড় দুই নাম এমবাপ্পে ও হলান্ড।

হলান্ড পথেই আছেন। ৫৬ গোল করে ২০২৩ সালের ব্যালন ডি’অরে হয়েছেন দ্বিতীয়। তার ক্লাব ম্যান সিটিও ভাসছে শিরোপার বৃষ্টিতে। দুটো মিলিয়ে ব্যালন ডি’অর ডাকছে তাকে!

এমবাপ্পে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে উজ্জ্বল। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে তার ক্লাব। পিএসজির ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় সাফল্য নেই। ব্যালন ডি’অর জিততে হলে হয় পিএসজিকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতাতে হবে নয়তো বদলাতে হবে ক্লাব। তার জন্য সবশেষ তিন মৌসুম দুয়ার খুলে বসেই ছিল রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু রাজনৈতিক কারণেই হোক কিংবা পিএসজির অর্থের ঝনঝনানিতেই হোক, পার্ক ডু প্রিন্সেস ছাড়েননি এমবাপ্পে।

এক্ষেত্রে ফরাসি তারকা তারই এক সতীর্থের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পারেন। ২০১৭ সালে রেকর্ড ট্রান্সফারে বার্সেলোনা থেকে পিএসজিকে নাম লিখিয়েছিলেন নেইমার। যার অন্যতম কারণ ছিল ব্যালন ডি’অর। মেসির ছায়া থেকে বের না হলে জেতা হবে না ‘সোনার বল’। কিন্তু ফ্রান্সে গিয়েই বুঝলেন চরম বাস্তবতা। পরে অবস্থা এমন হয়েছিল যে, প্যারিস ছাড়তে উঠেপড়ে লেগেছিলেন ব্রাজিলের এই তারকা।

এমবাপ্পেও হয়তো একদিন পিএসজি ছাড়বেন। জিতবেন ব্যালন ডি’অর। কিন্তু হলান্ড যে গতিতে এগোচ্ছেন, তার আগে জেতা হয়তো হবে না। মেসি বিশ্বকাপ না জিতলে এবারই পেতে পারতেন পুরস্কারটি। ম্যান সিটির ট্রেবল জয়ের পথে গোলের বৃষ্টি ঝরানো হলান্ডকেই কিন্তু এমবাপ্পে থেকে এগিয়ে রেখেছেন ভোটাররা।

চলতি মৌসুমেও দুর্দান্ত ম্যান সিটি ও হলান্ড। চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা ধরে রাখার পথে হট ফেভারিট। শেষ পর্যন্ত যদি ইউরোপিয়ান সাফল্য সত্যিই ধরা দেয়, তাহলে ব্যালন ডি’অরের ফেভারিট থাকবেন নওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার। এমবাপ্পে তখন তাকিয়ে দেখবেন ব্যালন ডি’অরের বাগানে নতুন ফুল ঠিকই ফুটল, কিন্তু সেটা তিনি নন। অন্য কেউ। তারই প্রতিদ্বন্দ্বী!

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত