কোটা সংস্কারের উদ্যোগ না নেওয়া পর্যন্ত রাজপথেই থাকার ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনকারী ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’; তবে আগামী দিন অবরোধ না করে বিক্ষোভের কর্মসূচি দিয়েছে তারা।
পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বৃহস্পতিবার ঢাকার শাহবাগে অবরোধ কর্মসূচি পালনের পর নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্মের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, “জরুরি অধিবেশন ডেকে সংসদে আইন পাস করতে হবে। তার আগ পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব।”
আন্দোলকারীদের ওপর দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে নাহিদ বলেন, “সারাদেশে যে হামলা করা হয়েছে, বাধা দেওয়া হয়েছে, তার বিচারের দাবিতে আগামীকাল সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিকাল ৪টায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।”
নতুন কর্মসূচি ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা শা্হবাগ ছাড়লে চার ঘণ্টা পর রাত ৯টায় শাহবাগ মোড়ে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
সরকারি চাকরিতে কোটা কোটা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের রায় হলে এমাসের শুরু থেকেই শাহবাগে নিয়মিত অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তারা এই কর্মসূচির নাম দিয়েছে ‘বাংলা ব্লকেড’।
প্রথমে শুধু শাহবাগে বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে গেলেও কয়েকদিন পর তা ঢাকার আরও কিছু স্থানেও পালিত হয়।
বুধবার দিনব্যাপী কর্মসূচি দিয়েছিল ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’; তাতে পুরো রাজধানীর সড়ক অচল হয়ে পড়ে।
এরমধ্যে বুধবার আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা দেয়। এই আদেশ দিয়ে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, আন্দোলনকারীরা তাদের বক্তব্য আদালতেও জানাতে পারে। আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাও শুনবে।
প্রধান বিচারপতি রাজপথ ছাড়ার জন্য আন্দোলনকারীদের আহ্বান জানান। এরপর পুলিশও জনদুর্ভোগের মতো কর্মসূচি না দিতে আন্দোলনকারীদের হুঁশিয়ার করে।
বৃহস্পতিবার বিকালে আন্দোলনকারীরা শাহবাগে আসার আগেই বিপুল সংখ্যক পুলিশ সেখানে অবস্থান নিয়েছিল। একটি রায়টকারও রাখা হয়েছিল সেখানে। আবার সরকার সমর্থক ছাত্রলীগও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছাড়ার অাহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনের পর ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছিল।
এর মধ্যেই বিকাল ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হয় কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। ৫টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে শাহবাগে আসার পর পুলিশ প্রথমে আটকে দিয়েছিল।
কিন্তু বেশিক্ষণ ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি, কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর সেই মিছিল পুলিশের ব্যারিকেড সরিয়ে শাহবাগের সড়কে অবস্থান নেয়। এর মধ্যেই পুলিশের রায়টকারটি ঠেলতে থাকে শিক্ষার্থীরা। তখন পুলিশ সেটিও সরিয়ে নেয়।
তারপর চার ঘণ্টা শাহবাগে অবস্থান নিয়েই স্লোগান চালিয়ে যায় আন্দোলনকারীরা।
কোটার বিষয়টি আদালতে মীমাংসা হবে বলে যে কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তার প্রতিক্রিয়ায় নাহিদ বলেন, “আমাদেরকে বারবার বলা হচ্ছে, এটা হাইকোর্টের বিষয়। আদালতের বিষয়। আমরা কেন রাজপথে আছি?
“হাইকোর্ট পরিপত্র অবৈধ ঘোষণার যে সুযোগ পেয়েছে, তা সরকার নিজেই করে দিয়েছে৷ এবার আমরা আর কোনও ফাঁদে পা দিতে চাই না।”
আদালতের দিকে আন্দোলনকারীরা তাকিয়ে নেই জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের ১ দফা দাবি সরকার ও আইন বিভাগের কাছে। জাতীয় সংসদে ৫ শতাংশ কোটা অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য রেখে বাকিটা মেধাভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে সংসদে আইন পাস করতে হবে।”
আদালতকে সামনে রেখে সরকারের দায়িত্বশীলরা টালবাহানার সুযোগ খুঁজছে বলে দাবি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ।
তিনি বলেন, “সরকার নিজেই আদালত অবমাননার চেষ্টা করছে। যেই কাজ সরকারের, সেটা আদালতের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে।”
এই আন্দোলনের পেছনে রাজনৈতিক ইন্ধন থাকার যে অভিযোগ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে, তার জবাবে নাহিদ বলেন, “যে কোনও আন্দোলনের ভেতরে বিরোধী দলের ভূত দেখার যে মানসিক সমস্যা রয়েছে, তা যেন দ্রুত সারিয়ে নেয়।”
আন্দোলনের ফলে যে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে, তার দায়ও কর্তৃপক্ষের ওপর দিয়ে তিনি বলেন, “যে বাধা দেওয়া হলো, ভয় দেখানো হলো …. বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনের দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়া। যদি আমরা চাকরি না পাই। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কিন্তু চাকরি থাকবে না।”