বিশাল গুদামে থরে থরে সাজানো ধানের বস্তা। বস্তার ওপরে ধুলার পুরো আস্তরণ। বাসা বেঁধেছে মাকড়োসা। কয়েকটি বস্তা ইঁদুরে কেটেও ফেলেছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ছাড়াই বলা যায়, এ ধানের মজুদ এক, দুই মাসের নয়।
বুধবার মিনিকেট চালের (সরু চাল) প্রধান মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে খোদ খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের অভিযানে একটি গুদামে এমন দৃশ্য ধরা পড়ে।
হঠাৎ করে চালের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষপাটে এদিন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে খাজানগর মোকামে যান খাদ্যমন্ত্রী।
অভিযানে মন্ত্রীর সঙ্গে খাদ্য সচিব ইসমাইল হোসেন, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাখাওয়াত হোসেন, কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজাসহ খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও চাল মালিক সংগঠনের নেতারা ছিলেন।
এ সময় একটি মিলের গুদামে প্রায় ৪০০ টন ধানের মজুদ পান খাদ্যমন্ত্রী। সুবর্ণা অটো রাইস মিলের মালিক জিন্নাহ আলম অন্য একটি মিলের গুদামে অবৈধভাবে এ ধান মজুদ করেছিলেন। মন্ত্রীর নির্দেশে তাৎক্ষণিক গুদামটি সিলগালা করা হয়। এছাড়া একই ব্যক্তির মালিকানাধীন একটি আটা মিলের গুদামে ১৫০ টন গমের অবৈধ মজুদ পেয়ে সেটিও সিলগালার নির্দেশ তিনি।
মন্ত্রী এদিন পর্যায়ক্রমে খাজানগর মোকামের অন্যতম মিনিকেট চাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান দেশ এগ্রো ফুড, সুবর্ণা অটো রাইস মিল, স্বর্ণা এগ্রো ফুড, আল্লার দান এগ্রো ও রশিদ এগ্রো ফুডে যান। এসব চালকল ও এগুলোর গুদাম ঘুরে দেখেন তিনি। প্রায় প্রতিটি মিলেই কিছু না কিছু অসঙ্গতি খুঁজে পান মন্ত্রী।
এর মধ্যে আল্লার দান এগ্রো ফুডের এক গুদামে প্রায় ৪০০ টন ধানের মজুদ পান তিনি। পরে জানা যায়, ওই ধানের মালিক সুর্বণা অটো রাইস মিলের মালিক জিন্নাহ আলম।
মন্ত্রী এই ধানের মজুদ নিয়ে প্রশ্ন তুললে মিলমালিকরা দাবি করেন, এসব ধান আমন মৌসুমের। খুব বেশি দিনের পুরনো নয়। জানুয়ারি মাসের গোড়ার দিকে এ ধান কেনা হয়েছে।
মন্ত্রী তখন বলেন, “আমি ধানের এলাকার মানুষ। আমাকে ধান চেনাতে আসবেন না। এই ধান আমন মৌসুমের নয়, গত বোরো মৌসুমের। মিথ্যা বলে লাভ নেই, সত্যি বলেন, মাফ পেয়ে যাবেন।”
পরে জিন্নাহ আলমের আটার মিলে প্রায় ১৫০ টন গমের মজুদও পান মন্ত্রী। তিনি তাৎক্ষণিক গুদাম দুটি সিলগালা করার নির্দেশ দেন।
মন্ত্রী এ সময় কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বাবুল হোসেনকে বলেন, “এসব অনিয়ম কেন এতো দিন চোখে পড়েনি। সব কিছু যদি আমাকে দেখতে হয়, তাহলে তোমরা এখানে কী কর।”