কথা বলার অধিকারসহ মানুষের মৌলিক অধিকারের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং গুম-হত্যার রাজনীতি বন্ধে আন্তরিক হতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ।
তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ের ছাত্র আন্দোলন শিখিয়েছে দেশের কোনও শাসকই ইচ্ছাখুশি মতো দেশ চালাতে পারবে না।”
বুধবার নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজে লাইভে এসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে এসব কথা বলেন।
এর আগে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে লাইভে আসবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের ছেলে সোহেল তাজ। তবে এর প্রায় দুই ঘণ্টা পর লাইভে আসেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে ২০০৯ সালে পদত্যাগ করা সোহেল তাজ বলেন, “আপনারা জানেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের ন্যায্যতা নিয়ে দেশের ছাত্র জনতা যে আন্দোলন করেছে তার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে আমিও সোচ্চার ছিলাম। ছাত্র জনতার উপর যেন আর গুলি না চলে এ আহ্বান আমারও ছিল। অন্যায় ও অন্যায্যতার বিপরীতে ছাত্র জনতার বিজয় অর্জিত হয়েছে।
“কিন্তু বিজয়ের পরবর্তী সময়ে দেশজুড়ে নানান প্রতিহিংসামূলক কর্মকাণ্ড এবং সুযোগসন্ধানীদের তাণ্ডব দেখে লাখো কোটি মানুষের মতো আমিও ব্যথিত।”
এই হত্যাযজ্ঞ আর ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের জন্যই ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমেছিল কিনা, সে প্রশ্নও রাখেন তিনি।
সাবেক এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, “দেশের সম্পদ ও ঐতিহ্য ধ্বংস করে কী বার্তা দিচ্ছি আমরা? একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাই, যারা ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে অগ্নিসংযোগ করেছে।”
এর আগে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছয় সমন্বয়ককে নিরাপত্তা দেওয়ার নামে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত ২৯ জুলাই সেখানে ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করতেও যান সোহেল তাজ। কিন্তু সেখানে তাকে সমন্বয়কদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।
পরে ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বিবেকের তাড়নায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের খোঁজ নিতে এসেছিলেন। ওই সমন্বয়কদের কেন এখানে আনা হয়েছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না এবং কখন মুক্তি দেওয়া হবে—এসব বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কোনও প্রশ্নেরই সন্তোষজনক জবাব পাননি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে সোহেল তাজ সেদিন বলেছিলেন, “আমাদের ছাত্রছাত্রী ভাইবোনের বুকে যাতে আর একটাও গুলি না যায়। আপনারা বিরত থাকুন। এটা ঠিক নয়।”
দেশজুড়ে প্রবল ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে সোমবার পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা।
এরপর থেকেই দেশে নানা ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি হয়। গণভবন-বঙ্গভবনে লুটপাটের পাশাপাশি দেশের বিভিন্নস্থান থেকে আসছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার খবরও।
এরই মধ্যে লাইভে এসে সোহেল তাজ বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্যায় করেছে, তার নিরপেক্ষ তদন্ত হোক আমরা সবাই চাই। কিন্তু সবাইকে কেন আমরা প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাচ্ছি।
“আইনশৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়া কোনও সভ্যসমাজ কল্পনা করা সম্ভব না, এটা আমাদের মনে রাখতে হবে।”
ভবিষ্যৎ অন্তর্বর্তীকালীর সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, “দেশের বর্তমান ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি থেকে সাধারন মানুষের জানমাল রক্ষা করতে হবে। গেল কদিন দেশের নানা প্রান্তে ভিন্ন ধর্মের মন্দির, গির্জায় আক্রমণ হয়েছে। অনেকের বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, অনেক মানুষ নিহত আর আহত হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগসহ অনেক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ রয়েছে। তাদেরও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে অনেক নিরীহ মানুষ প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে।
“চারদিক এক থমথম অবস্থার মধ্যে কী করে আমরা বসবাস করব?”
সরকার প্রশাসনসহ আওয়ামীলীগের যেসব নেতা-কর্মী দুর্নীতি হত্যা গুমের সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “কিন্তু তার বাইরে একজন নিরীহ মানুষেরও বাঁচার অধিকার রয়েছে-এটা আমাদের মনে রাখতে হবে।
“যে সংস্কারের জন্য আন্দোলন হয়েছিল, সেদিকে নজর দিতে হবে। আমাদের ভিন্ন মত থাকবে, ভিন্ন মতকে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে।”