টানা দুবার মানিকগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন নাইমুর রহমান দুর্জয়। নড়াইল-২ থেকে টানা দুবার সংসদ সদস্য হলেন মাশরাফি বিন মর্তুজাও। মাগুরা-১ থেকে বিপুল ভোটে জিতেছেন সাকিব আল হাসান। শুধু বাংলাদেশ নয়, যুগে যুগেই ক্রিকেট থেকে রাজনীতির মাঠে পা রেখেছেন অনেক তারকা। এই আয়োজন তাদের নিয়েই।
চার্লস বার্গাস ফ্রাই (সিবি ফ্রাই)
ইংল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট ও ফুটবল দলে খেলেছেন চার্লস বার্গাস ফ্রাই (সিবি ফ্রাই)। ৩৯৪টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে ৯৬টি সেঞ্চুরিসহ ৩০ হাজারের বেশি রান করা সিবি ফ্রাই ভেঙেছিলেন লং জাম্প, হাই জাম্পের রেকর্ডও! ১৯২২ সালে ব্রাইটন থেকে লিবারেল পার্টির হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে হেরে যান তিনি। এরপর দুবার অক্সফোর্ড ও ব্যানবেরি থেকে দাঁড়িয়ে পরাজিত হওয়া সিবি ফ্রাই সরে দাঁড়ান রাজনীতি থেকে।
পালওয়াঙ্কর বালু
ভারতীয় ক্রিকেটে যুগে যুগে রাজনীতিতে জড়িয়েছেন অনেকে। এর শুরুটা করেন বাবাজি পালওয়াঙ্কর বালু। ১৯১১ সালে ইংল্যান্ড সফর করা প্রথম ভারতীয় দলের সদস্য এই স্লো ল্যাফট আর্মার বোলার। ১৯৩৭ সালে তিনি বোম্বে (বর্তমান মুম্বাই) বিধান সভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং ভীমরাও রামাজি আম্বেদকরের কাছে হেরে যান।
অ্যালেক ডগলাস হোম
অ্যালেক ডগলাস হোম একমাত্র বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী যিনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক জুড়ে তিনি খেলেছিলেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি, মিডেলসেক্স ও এমসিসির হয়ে। ১০টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলা ডগলাস ১৯৬৩ সালের ১৮ অক্টোবর থেকে ১৯৬৪ সালের ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন যুক্তরাজ্যের।
লিয়ারি কন্টেস্টাইন
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ১৮টি টেস্ট খেলেছেন লিয়ারি কন্টেস্টাইন। ক্যারিয়ারের এক পর্যায়ে ইংল্যান্ডে এসে ল্যাঙ্কাশায়ার লিগে নেলসন ক্রিকেট ক্লাবে যোগ দেন তিনি। ১৯৫৪ তে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোতে ফিরে যোগ দেন রাজনৈতিক দল পিএনএম-এ। ব্রিটেনের হাই কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত হন ১৯৬১ সালে। ১৯৬৯ সালে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে হাউজ অব লর্ডসে বসার গৌরব অর্জন করেন সাবেক এই ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার।
টেড ডেক্সটার
১৯৬৪ অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ছিলেন টেড ডেক্সটার। তবে সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে ছেড়ে দিয়েছিলেন নেতৃত্ব। প্রধানমন্ত্রী জিম কালাহানের কাছে নির্বাচনে হারের পর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যোগ দিয়েছিলেন ডেক্সটার। এরপর অবশ্য ইংল্যান্ডকে নেতৃত্ব দেওয়া হয়নি আর।
মনসুর আলী খান পতৌদি
মাত্র ২১ বছর বয়সে ভারতীয় টেস্ট দলের অধিনায়ক হয়েছিলেন মনসুর আলী খান পতৌদি। ১৯৭১ সালে পতৌদি রাজ্য (গুরগাঁও) থেকে প্রথম বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান তিনি।
ওয়েস হল
৪৮ টেস্টে ২৬.৩৮ গড়ে ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি ওয়েস হল নিয়েছিলেন ১৯২টি উইকেট। অবসরের পর থেকেই রাজনীতি জড়ান তিনি। বার্বাডোজের সিনেট ও হাউজ অব অ্যাসেম্বলিতে ছিলেন, ১৯৮৭ সালে হয়েছিলেন দ্বীপপুঞ্জের পর্যটন মন্ত্রী। এরপর হয়েছিলেন ‘চার্চ মিনিস্টার’, ২০১২ সালে পান নাইটহুডও।
চেতন চৌহান
ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথম হ্যাটট্রিকের রেকর্ড ভারতীয় স্পিনার চেতন চৌহানের। ১৯৮৭ বিশ্বকাপে এই কীর্তি গড়া চৌহান উত্তরপ্রদেশের আমরোহা থেকে লোকসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জয় পান ১৯৯১ এবং ১৯৯৮ সালে। তার মত বিজেপি থেকে নির্বাচন করে জয় পেয়েছিলেন ১৯৮৩ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য কীর্তি আজাদ (বিহারের দারভাঙ্গায়)।
অর্জুনা রানাতুঙ্গা
১৯৯৬ বিশ্বকাপজয়ী লঙ্কান অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা বাবার পথ ধরে পা রাখেন রাজনীতির মাঠেও। হয়েছেন সংসদ সদস্য। মন্ত্রীও ছিলেন কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের।
সনৎ জয়াসুরিয়া
১৯৯৬ বিশ্বকাপ জয়ী লঙ্কান কিংবদন্তি অলাউন্ডার সনৎ জয়াসুরিয়াও পা রেখেছেন রাজনীতির মাঠে। ২০১০ সালে নিজের এলাকা মাতারা থেকে শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন জয়াসুরিয়া। সাংসদ হওয়ার পরেও ২০১১ সাল পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার হয়ে টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডে খেলে গেছেন তিনি।
মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন
৯৯ টেস্ট খেলা ভারতীয় সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন ২০০৯ সালের নির্বাচনে অংশ নেন কংগ্রেসের হয়ে। ওই বছর উত্তর প্রদেশের মুরাদাবাদ অঞ্চল থেকে নির্বাচনে জিতে সংসদ সদস্যও হন তিনি।
নভোজোত সিং সিধু
২০০৪ এবং ২০০৯ সালে অমৃতসর থেকে বিজেপির হয়ে লোকসভা নির্বাচনে করে জিতেছিলেন নভোজোত সিং সিধু। এরপর বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে ২০২২ বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যান সিধু। ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে ২০০৯ সালে লোক ভারতী পার্টি থেকে মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে লড়ে হেরে যান বিনোদ কাম্বলি। ২০১৪ সালে মোহাম্মদ কাইফ কংগ্রেসের হয়ে লোকসভা নির্বাচন করে হেরে যান। আইপিএলে ফিক্সিংয়ের দায়ে নিষিদ্ধ হওয়া শ্রীশান্ত বিজিপি’র হয়ে ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যান। কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার ২০১২ সালে মনোনিত হন রাজ্যসভার সদস্য। এছাড়া বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন ভারতের সাবেক তারকা গৌতম গম্ভীরও।
ইমরান খান
১৯৯২ বিশ্বকাপজয়ী পাকিস্তানি অধিনায়ক ইমরান খান গড়ে তোলেন রাজনৈতিক দল তেহেরিক-ই-ইনসাফ। ২০১৮ সালে তার দল ক্ষমতায় আসে পাকিস্তানের। আর ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। ক্ষমতা হারিয়ে এখন অবশ্য জেলবন্দী ইমরান। এছাড়া পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের মধ্যে রাজনীতিতে জড়িয়েছেন সরফরাজ নওয়াজ, আমির সোহেল, ওয়াহাব রিয়াজরা।