ফিলিস্তিনের গাজার দক্ষিণাঞ্চলে ত্রাণ প্রবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুটে প্রতিদিন ১১ ঘণ্টা করে সামরিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
আইডিএফ এ পদক্ষেপকে যুদ্ধবিরতি বলছে না। তাদের ভাষায় এটি ‘সামরিক কর্মকাণ্ডের কৌশলগত বিরতি’। অবশ্য দক্ষিণ গাজার রাফায় সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখার কথাও বলেছে তারা।
বলা হচ্ছে, শনিবার শুরু হওয়া এই বিরতি পরবর্তী নোটিস না দেওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলবে।
গাজার সঙ্গে ইসরায়েল সীমান্তের কেরেমে শালোম ক্রসিং থেকে উত্তর দিকে যাওয়া একটি রুটই শুধু এই বিরতির আওতায় থাকবে।
রুটটি গাজার প্রধান মহাসড়ক সালাহ আল-দিন রোড হয়ে উত্তরদিকে খান ইউনুস শহরের কাছে ইউরোপীয় হাসাপাতাল পর্যন্ত বিস্তৃত।
গাজায় ত্রাণ বিতরণের তত্ত্বাবধানকারী ইসরায়েলি সামরিক সংস্থা সিওজিএটি বলেছে, এই রুটটি খান ইউনিস, মুওয়াসি এবং মধ্য গাজাসহ গাজার অন্যান্য অংশে ত্রাণ প্রবাহ বাড়িয়ে তুলবে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা অফিসের মুখপাত্র জেনস লার্কে এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তিনি বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত এখনও গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সাহাজ্য প্রবেশের সহায়ক হয়নি।
গাজায় মানবিক সঙ্কট যাতে আরও প্রকট আকার ধারণ না করে সেজন্য ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্রদের ক্রমাগত চাপের মুখে রয়েছে।
আইডিএফ জানিয়েছে, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে এ সম্পর্কিত ‘আরও আলোচনার’ পর এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ত্রাণ সংস্থা অ্যাকশন এইডের মুখপাত্র জিয়াদ ইসা বিবিসিকে বলেছেন, এই বিরতি গাজাবাসীদের ত্রাণ সহায়তা পেতে সহায়তা করবে। তবে রসদ সম্পর্কে তাদের আরও বিশদ তথ্য প্রয়োজন।
তিনি বলেন, “এই কৌশলগত বিরতির অর্থ কী, কীভাবে এটি ত্রাণ সহায়তাকে কেবল গাজার অভ্যন্তরে প্রবেশ করতেই নয়, সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে নিরাপদে বিতরণে সক্ষম করবে তা নিয়ে আমরা এখনও পরিষ্কার নই।”
জিয়াদ বলেন, অ্যাকশনএইড “গত কয়েক সপ্তাহে কেরাম শালোম থেকে গাজায় যাওয়ার চেষ্টা করেছে এমন ত্রাণবাহী গাড়ির উপর উল্লেখযোগ্য আক্রমণ” দেখেছে।
গত মাসের শুরুতে ইসরায়েলি স্থল সেনারা দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে প্রবেশের পর থেকে মিশর সীামন্তের রাফাহ ক্রসিং দিয়েও ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ রয়েছে।
জাতিসংঘের মানবিক দপ্তরের (ওসিএইচএ) পরিসংখ্যান অনুসারে, ৬ মে থেকে ৬ জুন পর্যন্ত গাজায় জাতিসংঘের ত্রাণকর্মীরা প্রতিদিন গড়ে ৬৮ ট্রাক সাহায্য পেয়েছে। এপ্রিলেও প্রতিদিন গড়ে ১৬৮টি ত্রাণবাহী ট্রাক আসত গাজায়।
সহায়তাদানকারী সংস্থাগুলো বলেছিল, প্রতিদিন গাজায় অন্তত ৫০০ ট্রাক ত্রাণ দরকার। সে হিসাবে এপ্রিল মাসে গাজায় ত্রাণের পরিমাণ কম ছিল। আর মে থেকে জুন পর্যন্ত ত্রাণের পরিমাণ কেবলই কমেছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো গাজায় একটি ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করেছে এবং আরও সাহায্যের জন্য বারবার আহ্বান জানিয়েছে।
বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসুস বলেন, গাজার জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ‘বিপর্যয়কর ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতির’ মুখে রয়েছে।
জাতিসংঘও লাখ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বলে সতর্ক করছে। উত্তর গাজার মানুষেরা অন্য কোনও খাবার না পেয়ে শুধু রুটি খেয়ে বেঁচে আছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের এক ভয়াবহ হামলার পর থেকে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। হামাসের ওই হামলায় প্রায় ১২০০ ইসারয়েলি নিহত হয়।
টানা ৮ মাসেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের অব্যাহত বোমা হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে প্রায় পুরো গাজা।
গাজার প্রায় ২৪ লাখ বাসিন্দার বেশিরভাগই (প্রায় ৮০ শতাংশ) বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইতিমধ্যে নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩৭ হাজার। আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৮৫ হাজার।
তথ্যসূত্র : বিবিসি, ডিডাব্লিউ