সারা ইউরোপজুড়ে এবং বিশ্বের অন্যান্য মহাদেশে বাজি পুড়িয়ে, আলোকমালা সাজিয়ে, সংগীতের আয়োজনে মানুষ যখন ২০২৪ সালকে বরণ করে নিতে ব্যস্ত তখন গাজা নামের ছোট্ট ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের মানুষ রাতের অন্ধকারে ইসরায়েলি বাহিনীর অবিরাম বোমা হামলার মুখে নিরাপদ আশ্রয়ের চেষ্টায় ব্যর্থ হচ্ছে। হতাহতের সংখ্যা হুহু করে বাড়ছে। টেলিভিশনের পর্দায় আমরা প্রতিদিনই দেখছি মানুষের প্রাণান্ত ছোটাছুটি। বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে হাত দিয়ে টেনে তোলা হচ্ছে শিশুর দেহ। অক্ষত নয় সেই অসহায় নিরপরাধ শিশু। এই সব ভয়াবহ দৃশ্য নৈমিত্তিক হয়ে উঠেছে। ইউরোপে বসে এবং অন্যখানেও আমরা এই দৃশ্যগুলো শুধু দেখছি। আমাদের সার্বিক জীবনযাত্রায় কোনও ছেদ পড়ছেনা। কিন্তু ইউরোপ আমেরিকায় যারা ক্ষমতাবান, যাদের হাতে এই অসম লড়াই মুহূর্তে বন্ধ করার চাবিকাঠি, তারা নিশ্চুপ, নিষ্ক্রিয়।
এই নিষ্ক্রিয়তা সবচেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে সেই দেশে, যে দেশে আমি আমার সাংবাদিক জীবনের তিন দশকেরও বেশি সময় কাটিয়েছি, স্থায়ী আবাস গড়ে তুলেছি। অর্থনৈতিক দিক থেকে ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ জার্মানির কথা বলছি। জার্মানির রাজনৈতিক মহল, মূলধারার মিডিয়া, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নৈঃশব্দ্যের এক ঘেরাটোপে আটকে রেখেছে নিজেদের। এটাই আমাকে হতাশ করে তুলেছে। কেননা জার্মানির কাছে আমার প্রত্যাশা ছিল অন্যরকম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার শাসিত জার্মানির শোচনীয় পরাজয় ঘটেছিল আমরা জানি। যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে এসে নতুন জার্মানি বিভাজন সত্ত্বেও বিশ্বসভায় গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিল। সেই বিভাজনেরও অবসান ঘটে ১৯৯০ সালের ৩ অক্টোবর। পশ্চিম আর পূর্ব জার্মানি একত্রিত হয়। পুনরায় একত্রিত জার্মানি শান্তির পথ প্রশস্ত করবে এমনটাই প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু তা ঘটেনি। হতাশা এইখানেই।
ইসরায়েল রাষ্ট্রের ব্যাপারে জার্মানির এক বিশেষ দায়িত্বের কথা বলে থাকেন রাজনৈতিক নেতারা। তার কারণ অবোধ্য নয়। ‘হিটলার রাইশে’ ইউরোপের ইহুদিদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিল। এই নিধনযজ্ঞের নাম হলোকস্ট। বলা হয়ে থাকে, ষাট লক্ষ ইহুদি নিহত হয়েছিল। তৈরি করা হয়েছিল একের পর এক কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প। সেই হত্যাযজ্ঞের অপরাধ স্খালন করতে একসময়কার ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে জোর করে গড়ে তোলা হয়েছিল ইসরায়েল নামের নতুন এক রাষ্ট্র। স্বভূমি থেকে বিতাড়িত হয়েছিল বিরাট সংখ্যক ফিলিস্তিনি। সেই রাষ্ট্রটির প্রতি আর্থিকভাবে, সামরিকভাবে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে এসেছে অবশ্যই আমেরিকা এবং জার্মানিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশ। আর ফিলিস্তিনিদের জন্য চলেছে দুর্ভার শরণার্থী জীবন। এমনকি নিজভূমেও তারা পরবাসী। দীর্ঘকাল ধরে তারা দখলদার ইসরায়েল রাষ্ট্রের হাতে নির্বিচার নিগ্রহের শিকার। মানুষ হিসেবে যে মর্যাদা তাদের পাওয়ার কথা তারা কখনও তা পায়নি দখলদার শক্তির কছে। ফলে সহিংস প্রতিরোধের স্ফূরণ ঘটেছে। একসময়কার প্রবল শক্তিশালী প্রতিরোধ সংগঠন পিএলও’র বর্তমান নেতৃত্ব জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরের দখলিত এলাকায় প্রশাসনিক দায়িত্বে আসীন। গাজা ভূখণ্ডের নেতৃত্বে এসেছে হামাস। ইসরায়েলের সাথে হামাসের সংঘাতের সাম্প্রতিকতম প্রকাশ ঘটল ৭ অক্টোবর। হামাসের সামরিক ইউনিটের যোদ্ধাদের অতর্কিত হামলায় নিহত হয় এক হাজার একশো উনচল্লিশ জন ইসরায়েলি। পণবন্দী হিসেবে তুলে নিয়ে যায় তারা শতাধিক মানুষকে। এই হামলার নিন্দা করেছে বহু দেশ। জার্মানি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশ এবং আমেরিকা তো বটেই। তার পর থেকেই গাজার উপর স্থলে জলে আকাশপথে ইসরায়েল চালিয়ে যাচ্ছে একের পর এক অবিশ্বাস্য হামলা। নিহত হচ্ছে অধিকাংশত নিরপরাধ অসামরিক মানুষ— শিশু, নারী, বৃদ্ধ নির্বিশেষে।
২.
এক অসম লড়াই দেখছি আমরা। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্রায় তিন মাসে নিহত হয়েছে ২১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। দশ হাজারের মতো শিশু এই হত্যাকাণ্ডের নির্মম শিকার। আহত হয়েছে ৫৬ হাজারেরও বেশি মানুষ। নিহত নারীদের সংখ্যা ছয় হাজারের বেশি। গাজার ঘরবাড়ির ৭০ শতাংশই ধ্বংসস্তূপে পরিণত। সাংবাদিকদেরও নিস্তার নেই। এ পর্যন্ত একশো জনের মত ফিলিস্তিনি সাংবাদিক তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ইসরায়েলি বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন। সব মিলিয়ে দেখা দিয়েছে এক অবর্ণণীয় মানবিক বিপর্যয়। ইউরোপ আমেরিকার শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারা সর্বতোভাবে ইসরায়েলের পাশে থাকার কথা বারবার ঘোষণা করছেন। কিন্তু হাজার হাজার ফিলিস্তিনি অসামরিক মানুষ যে নিহত হচ্ছে, সে ব্যাপারে তাঁরা কোনও উচ্চবাচ্চ করছেন না। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন শুধু মাঝেমাঝে নম্রস্বরে বলছেন ইসরায়েলকে দেখতে হবে অসামরিক মানুষজন যেন কম মারা যায়। গাজা আর দখলিত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের উপর চাপিয়ে দেওয়া এই বিপর্যয়ের মুখে নিশ্চুপ জার্মানির রাজনৈতিক মহল, মূলধারার মিডিয়া। সাধারণ মানুষের মাঝেও ক্ষোভের কোনও প্রকাশ নেই। কোথায় গেল জার্মানির শান্তিবাদীরা? এমন একটা সময় ছিল যখন জার্মানিতে এক সক্রিয় শান্তিবাদী আন্দোলন জোরদার হতে দেখেছি। ইরাক যুদ্ধের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মানুষকে রাস্তায় মিছিল করতে দেখেছি। তাঁরা জোর গলায় শ্লোগান তুলেছেন— না, ইরাক যুদ্ধে আমরা নেই। চ্যান্সেলর গেরহার্ট শ্রোয়েডারের নেতৃত্বাধীন তখনকার সামাজিক গণতন্ত্রী দল ও সবুজ দলের কোয়ালিশন সরকারও তখন জানিয়ে দিয়েছিল যে ইরাক যুদ্ধে জার্মানি অংশ নেবে না। কিন্তু গাজার এই অসম লড়াই থামানোর কোনও চেষ্টা এখন নেই। ফিলিস্তিনিদের পক্ষে এগিয়ে আসার কোনও চিহ্ন চোখে পড়ছে না।
এটাই প্রবল হতাশার কারণ। ফিলিস্তিনের পক্ষে জনসভা করা, প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখা, ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ ব্যানার দেখানো— এইসব ‘অ্যান্টিসেমিটিজম’ বা ইহুদীবিদ্বেষ হিসেবে দেখা হচ্ছে জার্মানিতে। প্রবলভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে জার্মানির আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ। পুলিশের হাতে ফিলিস্তিন সমর্থক অ্যাক্টিভিস্টদের মারধর খাওয়ার ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে বার্লিনে। ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করাকে অপরাধ বলে গণ্য করা হচ্ছে। অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করছি, আইনপ্রয়োগকারীদের বিশেষ লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করার দাবিতে সোচ্চার জার্মানিতে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা, আরবরা, এমনকি ইসরায়েলি হামলার সমালোচনাকারী ইহুদীরাও। জার্মানির একটি ফুটবল দল সোশাল মিডিয়ায় ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সংহতি প্রকাশ করার অপরাধে তাদের একজন মুসলমান খেলোয়াড়কে দল ছাড়তে বাধ্য করে।
অক্টোবর মাসে ফ্রাংকফুর্ট শহরে হয়ে গেল বিশ্বের বৃহত্তম বইমেলা। এই মেলায় অতিথি দেশ ছিল স্লোভেনিয়া। স্লোভেনিয়ার বিশিষ্ট লেখক, বামপন্থী বলে পরিচিত দার্শনিক স্লাভয় জিজেক তাঁর উদ্বোধনী ভাষণে ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ তুলে বেশ বিপদেই পড়েছিলেন। হামাসের হামলার নিন্দা জানিয়েও তিনি শুধু বলেছিলেন যে ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে কোনও শান্তি আসবে না। ফিলিস্তিনিদের অবস্থার পটভূমিটাও বিবেচনায় আনতে হবে। তিনি প্রসঙ্গত ফ্রাংকফুর্ট বইমেলায় বার্লিনবাসী ফিলিস্তিনি লেখিকা আদানিয়া শিবলির হাতে নির্ধারিত পুরস্কার আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে না দেওয়াকে লজ্জাকর ঘটনা বলেও অভিহিত করেন। আদানিয়া শিবলি তাঁর বহুলপঠিত Minor Detail উপন্যাসে ১৯৪৯ সালের ‘নাকবা’ অর্থাৎ মহাবিপর্যয়ের সময় ইসরায়েলি সৈনিকরা একজন ফিলিস্তিনি মেয়েকে কীভাবে ধর্ষণ করে হত্যা করে, তার ছবি তুলে ধরেছেন এটাই তাঁর অপরাধ। জিজেক তাঁর বক্তৃতা দেওয়ার সময় বারবার বাধা পান। সমালোচিত হন তিনি নানা দিক থেকে। এই দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার তবে কি এই হাল?
৩.
এখানেই শেষ নয়। পরিকল্পিত নানা অনুষ্ঠান, আয়োজন, প্রদর্শনী বাতিল করা বা স্থগিত রাখার ঘটনা ঘটছে এখন জার্মানিতে ইহুদীবিদ্বেষের অভিযোগে। ইসরায়েল রাষ্ট্রের নীতির যে কোনও সমালোচনা অ্যান্টিসেমিটিজম আখ্যা পেয়ে যাচ্ছে। এমনটাই অবস্থা। সাংবাদিকরা তাঁদের ব্যক্তিগত পোস্টে কী লিখছেন সে ব্যাপারে সতর্ক থাকছেন। ফিলিস্তিনের পক্ষে দেওয়া কোনও পোস্ট পেশাগত জীবনের জন্য ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। বাতিল করার এই নীতির কোপ পড়েছে সম্প্রতি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত ফটোগ্রাফার ও মানবাধিকার কর্মী শহিদুল আলমের উপরেও। তাঁর ও আরও দুজন সহশিল্পীর যৌথ ফটোগ্রাফি প্রদর্শনী হওয়ার কথা ছিল জার্মানির হাইডেলবার্গ, মানহাইম আর লুডভিক্সহাফেন শহরে। তাঁর অপরাধ— শহিদুল আলম ফিলিস্তিনের পক্ষে সোশাল মিডিয়ায় খুবই সক্রিয় আর সোচ্চার। প্রদর্শনীতে তাঁর অংশগ্রহণ বাতিল করে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। এখানেও অভিযোগ ইহুদীবিদ্বেষের। তাঁর দুই সহশিল্পী জানিয়ে দেন যে তাঁরাও আর অংশ নেবেন না। ফলে সমকালীন আলোকচিত্র শিল্পের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রদর্শনী পুরোপুরি বাতিল হয়ে গেল।
একই ধরনের আরও ঘটনার কথা আমরা জানি। এই তো খুব সম্প্রতি বিখ্যাত New Yorker ম্যাগাজিনের নিয়মিত লেখক মাশা গেসেনকে কেন্দ্র করে এক ঘটনা ঘটে গেল। তিনি নিজে ইহুদী এবং তাঁর পরিবারেরও কেউ কেউ হিটলারের সময় নাৎসিদের নিধনযজ্ঞের শিকার হয়েছিলেন। জার্মানির সবুজ দলের (গ্রিন পার্টি) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হাইনরিশ ব্যোয়েল ফাউন্ডেশন ও উত্তর জার্মানির নগর রাজ্য ব্রেমেনের সেনেটের দেওয়া হানা আরেন্ড পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন তিনি। রীতিমত বড়সড় অনুষ্ঠান করে এই পুরস্কার তাঁর হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সম্প্রতি তাঁর ম্যাগাজিনে গেসেন In The Shadow Of The Holocaust নামের একটি নিবন্ধে জার্মানি যেভাবে ইহুদিবিদ্বেষের ব্যাপারটাকে এক ধরনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে উদ্যত হয়েছে বলে তিনি মনে করেন, তার সমালোচনা করেছেন। গেসেন নাৎসি অধিকৃত ইউরোপের ইহুদী ‘ঘেটো’র সঙ্গে গাজা ভূখণ্ডের তুলনা করায় তাঁর পুরস্কারটি দেওয়া হয়েছে দেরি করে ছোটখাটো এক সাদামাটা অনুষ্ঠানে। পুরস্কারের অন্যতম স্পন্সর হাইনরিশ ব্যোয়েল ফাউন্ডেশনের কর্তারা এই অনুষ্ঠান বর্জন করেন। অথচ যাঁর নামে এই ফাউন্ডেশন, সেই নোবেল নন্দিত জার্মান লেখক ব্যোয়েল ছিলেন যুদ্ধবিরোধী, উগ্র দক্ষিণপন্থীদের বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার শান্তিবাদী বিবেকী এক মানুষ। সমাজ ও রাজনীতির সবরকমের স্খলনের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন। গণমিছিলে অংশ নিয়েছেন।
জার্মানিতে প্রতিবাদের যে সংস্কৃতি একদিন আমাদের অনেককেই উদ্দীপিত করেছে তা আজ অনুপস্থিত। গাজায় যা ঘটছে, এটা অন্যায়, গণহত্যার নামান্তর — একথা মাথা উঁচু করে বলবার সাহস কারও মাঝে দেখছি না। জার্মানিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো এই যে নিশ্চুপ থাকার পথ আঁকড়ে ধরেছে এবং ইসরায়েলকে অকুণ্ঠ সমর্থন আর সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছে তা মেনে নেওয়া কষ্টকর। একমাত্র আয়ারল্যান্ডে বিরুদ্ধ স্বর সরব। স্পেনও সমালোচনা করছে কিছুটা হলেও। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধ থামানোর দাবি জানিয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ ফিলিস্তিনিদের পক্ষ নিয়ে লন্ডনে প্রতি সপ্তাহান্তে মিছিলে অংশ নিচ্ছেন, বৃটেনের রক্ষণশীল সরকার তার ইসরায়েলমুখী নীতিতে অটল থাকা সত্ত্বেও। অতীতে আমরা দেখেছি, পৃথিবীর যেখানেই বড় রকমের বিপর্যয় ঘটেছে জার্মানির বহু মানুষ দুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে। টেলিভিশন চ্যানেলে লাইভ কনসার্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে অর্থ সংগ্রহের জন্য। ফিল্ম, আর্ট, মিডিয়া জগতের নামী তারকারা টেলিফোন করে দর্শকদের অর্থসাহায্য দিতে প্রণোদিত করেছেন। লক্ষ লক্ষ ইউরো সংগ্রহ করা হয়েছে। এবং সে অর্থ দিয়ে দুর্যোগের শিকার যারা তাদের সাহায্য করা হয়েছে। এমনকি ইউক্রেনের মানুষদের জন্যও এভাবে অর্থ সংগ্রহ করা হয়।
৪.
কিন্তু গাজায় যখন ইসরায়েলি বাহিনীর বিরতিহীন বোমা হামলায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, পঙ্গু হয়ে পড়ছে, এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় পালিয়ে গিয়েও রেহাই পাচ্ছে না— যখন গাজা ভূখণ্ড আর পশ্চিম তীর এলাকাকে ফিলিস্তিনি মুক্ত করার এক নীল নকশা হাতে নিয়েছে ইসরায়েলের বর্তমান উগ্র দক্ষিণপন্থী সরকার, তখন জার্মানিতে, ইউরোপে আমেরিকায় কারও মুখে কথা নেই। এই নীরবতা তো দুষ্কর্মে সহযোগিতারই নামান্তর। এই কথাটি বলেছেন ক্রিসমাস ইভে যীশুখৃষ্টের জন্মস্থল বেথলেহেমের গির্জার যাজক রেভারেন্ড ম্যুন্থার আইজাক। বলা বাহুল্য, তিনি নিজেও ফিলিস্তিনি। বেথলেহেম গাজার মানুষদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বড়দিনের চিরাচরিত উৎসব এবার করেনি। রেভারেন্ড আইজাক তাঁর ধর্মীয় অভিভাষণে বলেছিলেন, আজ যদি যীশু জন্ম নিতেন, তাঁর জন্ম হতো গাজার ধ্বংসস্তূপের মাঝে। তিনি ইউরোপ ও আমেরিকার নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করতে ছাড়েননি।
একান্তভাবেই কামনা করি জার্মানিতে তথা ইউরোপে অবসান ঘটুক এই নিষ্ক্রিয়তার। নীরবতার এই আড়াল দূর হোক। এখনই, আর বিলম্ব নয়।
১ জানুয়ারি, ২০২৪, হাইডেলবার্গ, জার্মানি।
লেখক: সাংবাদিক। ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক-সাংবাদিক।
ইমেইল: [email protected]