Beta
সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

গোতাবায়ার পলায়নের পর প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শ্রীলঙ্কায়

নবম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন শ্রীলঙ্কার ভোটাররা।
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

ব্যাপক গণবিক্ষোভের মুখে শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালানোর পর প্রথম নির্বাচনে ভোট দিচ্ছে দেশটির জনগণ।

গত কয়েক দশকের মধ্যে ২০২২ সালে নজিরবিহীন এক অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছিল শ্রীলঙ্কা, যার জেরে গণঅভ্যুত্থানের মুখে রাজাপাকসে পরিবারকে ক্ষমতা হারাতে হয়।

শ্রীলঙ্কার জনগণ সেসময় তাদের রাষ্ট্রপ্রধানের বাসভবন ও কার্যালয় দখল করে নিয়েছিল।

১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর থেকে প্রথমবার এমন আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হতে হয়েছিল শ্রীলঙ্কাকে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে কার্যত দেউলিয়া হয়ে যায় তারা। সেই আর্থিক সংকটের আবহে ২০২২ সালের গণঅভুত্থানে রাজাপাকসের সরকার পতন হয়।

জনবিক্ষোভের জেরে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছাড়েন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে এবং তার ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে।

এই পরিস্থিতিতে পার্লামেন্ট সদস্যদের ভোটাভুটিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে।

সেই অর্থনৈতিক সংকট অনেকটা কাটিয়ে উঠলেও এখনও পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারেনি দেশটি। এমন পরিস্থিতিতেই শনিবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিচ্ছে শ্রীলঙ্কার ভোটাররা।

এটি শ্রীলঙ্কার নবম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই নির্বাচনে দেশটির ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের মধ্যে ১ কোটি ৭০ লাখ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

স্থানীয় সময় শনিবার সকাল ৭টায় শুরু হওয়া ভোট চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। নির্বাচনে মোট ৩৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পলাতক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের ছেলে নমলও প্রার্থী হয়েছেন। রাতভর ভোট গণনা শেষে রবিবার আনুষ্ঠানিক ফল পাওয়া যাবে।

এই নির্বাচনকে দেশটির ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সংস্কারের নির্ধারক হিসেবেও দেখা হচ্ছে। এতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা সজিথ প্রেমাদাসা ও মার্কসবাদী অনুড়া কুমারা দিসানায়েকের মধ্যে। এদের মধ্যে দিসানায়েকে সাম্প্রতিক একটি জনমত জরিপে এগিয়ে ছিলেন।

গোতাবায়ার পর দায়িত্ব নেওয়া বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের সরকার অর্থনৈতিক সংকট কীভাবে মোকাবিলা করেছে এবং মাঝারি মানের যে উন্নতি দেখা যাচ্ছে, এই নির্বাচনকে মূলত তার ওপর একটি গণভোট হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় কিছুটা সাফল্য দেখালেও কর বৃদ্ধি, ভর্তুকি কমিয়ে দেওয়ার কারণে দেশটির অনেক মানুষ এখনও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে।

প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই ভোটের আগে শতাধিক সমাবেশ করেন বিক্রমাসিংহে। তিনি আরেক মেয়াদ দায়িত্বে থাকতে চাইছেন।

বাঁ থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকে- রনিল বিক্রমাসিংহে, সাজিথ প্রেমাদাসা, অনুড়া কুমার দিসানায়েক, নমল রাজাপাকসে।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে রনিল বিক্রমাসিংহে এগিয়ে থাকলেও শক্ত অবস্থানে আছেন বিরোধী দল সঙ্গী জন বালাওয়েগার (এসজেবি) নেতা সাজিথ প্রেমাদাসাও। তার বাবা রানাসিংহে প্রেমাদাসা শ্রীলঙ্কার তৃতীয় প্রেসিডেন্ট ছিলেন, যিনি ১৯৯৩ সালে গৃহযুদ্ধের সময় হত্যার শিকার হন। সাজিথ প্রেমাদাসা এই নির্বাচনে বেশ ভালো করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

লড়াইয়ে এগিয়ে থাকা আরেক প্রার্থী হলেন ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার পার্টির নেতা অনুড়া কুমার দিসানায়েক। একসময় প্রান্তিক পর্যায়ে চলে যাওয়া মার্ক্সবাদী দলের নেতা তিনি। তবে শ্রীলঙ্কার সংকট অনুড়া কুমার দিসানায়েকের জন্য একটি সুযোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

রাজাপাকসে পরিবার থেকে প্রার্থী হয়েছেন ৩৮ বছর বয়সী নমল রাজাপাকসে। এই পরিবার থেকে অতীতে দুজন প্রেসিডেন্ট ছিলেন। একজন হলেন নমলের বাবা মাহিন্দা রাজাপাকসে আর অপরজন চাচা গোতাবায়া রাজাপাকসে। নমল লড়ছেন শ্রীলঙ্কান পদুজন পেরামুনা (এসএলপিপি) দল থেকে। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা তার আরেক চাচা বাসিল রাজাপাকসে।

২০২২ সালে রাজাপাকসে বিরোধী গণবিক্ষোভের অন্যতম মুখ পিপলস স্ট্রাগল অ্যালায়েন্সের ৪০ বছর বয়সী নুয়ান বোপেজও প্রার্থী হয়েছেন। গোতাবায়া-বিরোধী গণবিক্ষোভে অংশ নেওয়া ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন তিনি। নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতিবিরোধী কড়া অবস্থান ঘোষণা করেছেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের নতুন আইন অনুযায়ী, একজন ভোটার তিন জন প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পছন্দ হিসেবে। কোনও একজন প্রার্থী কমপক্ষে ৫০ শতাংশ বা এর চেয়ে বেশি ভোট পেলে, তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। আর কোনও প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট না পেলে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় দফা (রান-অফ) ভোট হবে। তবে কুশলী রাজনীতিক রনিলের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ২৯০ কোটি ডলারের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সহায়তায় শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয় অনেক ভোটারের জন্য একটি মূল সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে।

মূল্যস্ফীতি ৭০ শতাংশ থেকে কমতে কমতে সর্বশেষ গত মাসে ০.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। আর তিন বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ২০২৪ সালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তথাপি দেশটির ২৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য ও ঋণে জর্জরিত। তাদের আশা- পরবর্তী প্রেসিডেন্ট তাদের সেই সংকট থেকে মুক্তি দেবেন।

কলম্বোর উপকণ্ঠে একটি মন্দিরে ভোট দেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট প্রার্থী অনুড়া কুমার দিসানায়েকে বলেন, “এটি এমন একটি নির্বাচন, যা শ্রীলঙ্কার ইতিহাসকে পাল্টে দেবে। মানুষ উৎসাহের সঙ্গে ভোট দিচ্ছে।”

কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্ত্রীসহ ভোট দেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে বলেন, “জনগণকেই এই দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে হবে। আমি সবাইকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে বলেছি।

“আমরা সরকার এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল করেছি। আমি খুশি যে আমি এতে একটি বড় অবদান রাখতে পেরেছি।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত