ছেলেটা পুরোদস্তুর বোলার, অথচ ব্যাট হাতে করলেন ১১৫ বলে ১৪৮ রান। অপরজন পুরোদস্তুর ব্যাটার, অথচ স্কুল ক্রিকেটে এই প্রথম বল হাতে নিয়ে করলেন হ্যাটট্রিক। এমন ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্তে এবারের স্কুল ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল কদমতলা পূর্ব বাসাবো স্কুল অ্যান্ড কলেজ। বুধবার মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ফাইনালে তারা ১৮৭ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে পিরোজপুরের সরকারি কে.জি. ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়কে। পূর্ব বাসাবোর ৮ উইকেটে ২৮৬ রানের জবাবে মাত্র ৯৯ রানে অলআউট হয় সরকারি কে.জি. ইউনিয়ন।
বোলার মোহাম্মদ সিফাত শাহরিয়া সামির পছন্দের ক্রিকেটার মোস্তাফিজুর রহমান। তার মতোই হতে চান বড় হয়ে। পূর্ব বাসাবো স্কুল দলের কোচ মোস্তাফিজুর রহমান শাহরিয়ারের বাসায় থেকেই ছোট বেলা থেকে ক্রিকেট তালিম নিয়েছেন এই কিশোর। মোস্তাফিজের মতো স্লোয়ার-কাটার সবই নাকি এই কিশোরের বোলিং অস্ত্র। অথচ স্কুল ক্রিকেটের ফাইনালে এমন বিধ্বংসী ব্যাটিং করে ফেললেন তা এই কোচ কল্পনাও করেননি।
ম্যাচ শেষে শাহরিয়ার তাই অবাক হয়েই বলেছেন, “এটা শতভাগ চমক। ও (সামি) কিন্তু আমাদের বোলার। মোস্তাফিজের মতো সব বল করতে পারে সে। ব্যাটিং করতে পারে কিন্তু এত ভালো ব্যাট করে না। কিন্তু আজকে অবিশ্বাস্য ভাবে সে দুর্দান্ত ব্যাট করেছে। ওকে বলেছি মিরপুরে খেলবে এটা তোমার জীবনে একটাই সুযোগ। আজকে যে ব্যাটিং করেছে এটা হয়তো তাকে বড় কিছুর স্বপ্ন সত্যি করতে সাহায্য করবে।”
৪১ রানে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর নিশাত মুসতাকিমকে নিয়ে জুটি ১৭৯ রানের জুটি গড়েন সামি। ১১৫ বলের ইনিংসে ৯ চার ও ৬ ছক্কায় করেছেন ১৪৮। চাপ সামলে দলের সবার সমর্থনে এই কীর্তি করেছেন বলে জানান সামি, “যেহেতু আমাদের অনেকগুলো উইকেট পড়ে যায় আমি শুরুতে সিঙ্গেল নিয়ে খেলার চেষ্টা করি। যখন উইকেটে সেট হলাম তখন কোচ, দলের সবাই বলছিল তুই উইকেটে থাকলে বড় রান করতে পারবি। তো চেষ্টা করেছি আল্লাহর রহমতে হয়ে গেছে।”
ম্যাচে নিজের আসল কাজটা অবশ্য করতে পারেননি সামি। বল হাতে নিয়ে মাত্র ৫ বল করার পর হিট স্ট্রোক হয় তার। তখনি বাসাবোর একটি হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মিরপুর থেকে। প্রাথমিক চিকিৎসায় সুস্থও হয়ে উঠেছেন এই তরুণ।
এদিকে ম্যাচ ততক্ষণে জেতা হয়ে গেছে পূর্ব বাসাবোর। কিন্তু পথের কাঁটা হয়ে উইকেটে দাঁড়িয়ে ছিলেন আবদুল্লাহ ও রোদায়ান। ১৬.৫ ওভারে ৩৩ রানের ওই জুটি ভাঙ্গেন মোহাম্মদ হোসেন। জুটি ভাঙ্গাই শুধু নয়। একটানে জীবনের প্রথম হ্যাটট্রিকও করে ফেলেন এই অফস্পিনার।
মাত্র ৪.৪ ওভারের স্পেলে ৪ রানে ৪ উইকেট নেন। ৯১ বলে ১৩ রান করা আবদুল্লাহকে প্রথমে আউট করেন। এরপর ফাইজুল্লাহ ও মাহিমকে পরপর দুই বলে বোল্ড করে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন ও দলকেও শিরোপা এনে দেন।
এভাবে হ্যাটট্রিক করে ফেলবেন তা কল্পনাও করেননি রেদোয়ান, “আমি কোন প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে এই প্রথম বোলিং করলাম। যেহেতু আমাদের বোলার কম ছিল। আমি স্বপ্নেও ভাবিনি যে হ্যাটট্রিক করবো। মিরপুর স্টেডিয়ামে ম্যাচ খেলছি এটাই তো স্বপ্ন পূরণ হওয়ার মতো। সেখানে হ্যাটট্রিক করা আরও বড় কিছু আমার জন্য।”
পূর্ব বাসাবো স্কুলের অধিনায়ক হৃদয়ের জন্য বুধবার ছিল দ্বিগুণ খুশির সময়। একে তো শিরোপা জয়ী অধিনায়ক। তার ওপর জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা যেখানে বসে সে জায়গা দেখা। দুটোর মিশেলে ক্রিকেটার হিসেবে ছোট জীবনকে পূর্ণ বলছেন এই কিশোর। ঠিক যেমনি মিরপুরের শিরোপা জেতা তাদের জন্য আলাদা পূর্ণতা।