Beta
সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫

ছক্কা না হওয়ার আক্ষেপ

বাংলাদেশ
[publishpress_authors_box]

মাহমুদউল্লাহর অবিশ্বাস্যে দুই হাত মাথায় দিয়ে তাকিয়ে থাকার ছবিটা পুরো বাংলাদেশের জন্য হয়ে গেছে আক্ষেপের। বাউন্ডারি থেকে দুই পা দূরে থেকে ক্যাচটি লুফে নেন এইডেন মারক্রাম। ২৭ বলে ২০ রানে আউট হন মাহমুদউল্লাহ। হৃদয় ভাঙ্গে বাংলাদেশের।

শেষ ওভারে ১১ রান খুব কঠিন কিছু ছিল না। অন্য প্রান্তে বল করতে আসা কেশব মহারাজ ক্যারিয়ারে প্রথমবার টি-টোয়েন্টিতে শেষ ওভারে আক্রমণে এসেছেন। নার্ভাস থাকায় প্রথম বলে ওয়াইড দেন। ৬ বলে ১০ রান দরকার হয় বাংলাদেশের।

কিন্তু নাসাউ কাউন্টির উইকেটে খুব সাবধানে ব্যাট করতে হয়। তাই স্পিনার পেয়েও বড় শট নেয়ার সাহস করা যায় না। মাহমুদউল্লাহ সেই চেষ্টা করছিলেন না। প্রথম বলে ডাউন দা উইকেটে এসে দুই রান নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু হলো সিঙ্গেল। পরের বলে মাহারাজ বল হাতে রাখলে রান আউট হতে পারতেন মাহমুউল্লাহ।

মারক্রামের ক্যাচে হৃদয় ভাঙ্গে বাংলাদেশের। ছবি : ক্রিকইনফো

যে ভয় ছিল তাই হলো তৃতীয় বলে। বড় শট নিতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ আউট হলেন জাকের। পরের বলে এলবিডব্লিউর আবেদন নাকচ হয় প্রোটিয়াদের। এরপর পঞ্চম বলে সেই আক্ষেপের মুহূর্ত।

ক্যারিয়ারে কত ফুলটস বলকে ছক্কায় রূপান্তরিত করেছেন মাহমুদউল্লাহ। আজও সেইরকম বড় শট নিয়েছিলেন। কিন্তু আক্ষেপ, বল বাউন্ডারির একটু সামনে মারক্রামের হাতে পড়ল। ছক্কা হবে ধরে নিয়ে উৎসবের প্রস্তুতি ছিল মাহমুদউল্লাহর। শেষমেষ রাজ্যের হতাশা ভর করে অভিজ্ঞ ব্যাটারের চেহারায়।

ছক্কা না হওয়ার আক্ষেপে তাকিয়ে ছিলেন বাউন্ডারির দিকে। একরাশ হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তেও সময় লাগল তার। সেই হতাশায় মুড়িয়ে যায় পুরো বাংলাদেশ। প্রোটিয়াদের ৬ উইকেটে ১১৩ রানে বেঁধে ফেলেও জয় এল না। ৭ উইকেটে ১০৯ রানে থেমে শেষ আটের অপেক্ষাও বাড়ল।

লেগ বাইয়ে চার না হওয়ার নিয়ম

অবশ্য শেষ ওভারে ১১ নয়, আরও ৪ রান কমে ৭ রান হতে পারতো বাংলাদেশের টার্গেট। আইসিসির নিয়মের কারণেই তা হয়নি। সব সময়ই দেখে আসা লেগ বাইয়ে চার হলে তা ব্যাটিং দলের স্কোরে জমা হয়। ১৭তম ওভারে মাহমুদউল্লাহর প্যাডে লেগে বল সীমানা ছাড়া হলেও বোর্ডে রান যোগ না হওয়ায় বিস্ময় জাগে।

বার্টম্যানের এ বলটিতেই মাহমুদউল্লাহকে আউট দেন আম্পায়ার। ছবি : ক্রিকইনফো

এর কারণ আম্পায়ারের আউটের সিদ্ধান্ত। ১৬.২ ওভারে বার্টম্যানের বল মাহমুদউল্লাহর প্যাডে লেগে লং লেগ দিয়ে চলে যায় সীমানার বাইরে। দক্ষিণ আফ্রিকার আবেদনে আউট ঘোষণা করেন আম্পায়ার স্যাম নগোস্কি। মাহমুদউল্লাহ রিভিউ নিয়ে সফল হন। কিন্তু রান যোগ না হওয়ার কারণ অন্য জায়গায়। ব্যাটারের প্যাডে লেগে চার হওয়া কোন ডিলেভারিতে আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্ত দিলে ওই বাউন্ডারি স্বোরবোর্ডে জমা হয় না।

রিভিউ নিয়ে আউট বাতিল হলেও রান যোগ হবে না। কারণ বল বাউন্ডারি ছোঁয়ার আগেই আউটের ঘোষণা দেন আম্পায়ার। তাই বল মাহমুদউল্লাহর প্যাডে লেগে বাউন্ডারি ছুঁলেও তা গণনা হয়নি। ২০১৮ সালে উইন্ডিজের বিপক্ষে এমন ঘটনায় ৩ রান পায়নি বাংলাদেশ।

টার্নিং পয়েন্ট হৃদয়ের আউট

দুর্দান্ত খেলতে থাকা তাওহীদ হৃদয় ক্রিজে থাকলে অবশ্য বাংলাদেশকে এভাবে হারতে হতো না। ম্যাচটা আরও আগেই বের করে আনতে পারতেন এই ইনফর্ম ব্যাটার। উইকেট গিয়ে সব ভয়কে জয় করে সাহসী ক্রিকেট খেলছিলেন তিনি। কিন্তু আম্পায়ার্স কলে কপাল পুড়ে তার।

টানা দ্বিতীয় ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেছেন হৃদয়। ছবি : ক্রিকইনফো

১৮তম ওভারে কেগিসো রাবাদার বলে লাফিয়ে উঠে অন সাইডে খেলেছিলেন হৃদয়। বলটি তার ব্যাট মিস করে প্যাডে লাগে। খালি চোখে মনে হচ্ছিল স্ট্যাম্পের উপরে লেগেছে। শুরুতে আবেদন করতে মনে ছিল না রাবাদার। পরক্ষণেই দ্বিধা নিয়ে আবেদন করার সঙ্গে সঙ্গে আউটের আঙ্গুল তুলে দেন ইলিংওর্থ।

রিভিউ নিয়ে দেখা গেল বল স্ট্যাম্পের বেলে লেগেছে। আর আম্পায়ার্স কলের কারণে আউট হয়ে ফিরতে হয় হৃদয়কে। তখনই কঠিন হয়ে যায় বাংলাদেশের জয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগের ম্যাচের মতো এবারও ব্যাট হাতে জয়ের নায়ক হতে চলেছিলেন হৃদয়। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ৪৫ বলে ৪৪ রানের জুটি গড়েন। ২টি করে ছক্কা ও চারে ৩৪ বলে ৩৭ করে ফেরেন তিনি।

খলনায়ক শান্ত

শুরুতে উইকেট ধরে রেখে বাংলাদেশের রান তাড়া সহজ করছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু নিজের ভুলেই দলকে বিপদেও ফেলে যান। শান্ত নিজেই বলতেন, “ যে ভাল ইনিংস শুরু করবে, সে যেন ম্যাচ শেষ করে ফেরে।” সেটা তিনি পারলেন কই ! ইনিংস শুরু করেও বাজে শট খেলে ২৩ বলে ১৪ রান করে সম্ভাবনার অপমৃত্যু ঘটান বাংলাদেশ অধিনায়ক।

ভুল শট নিতে গিয়ে আউট হন অধিনায়ক। ছবি : ক্রিকইনফো

নতুন বলে প্রোটিয়া পেসাররা এই আসরে ভয়ঙ্কর। সেই চোখ রাঙানি সামাল দিয়েছিলেন শান্ত। তামিম, লিটন, সাকিব ফেরার পরও ১০ ওভার টিকে ছিলেন উইকেটে। কিন্তু এনরিখ নরকিয়ার বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে ভুল করেন।

নিষ্ফলা সাকিব

১৮ বছরের ক্যারিয়ারে কখনও এমন নিষ্ফলা ম্যাচ সাকিব কাটিয়েছেন কিনা তা পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখার বিষয়। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই ম্যাচে খুঁজে পাওয়াই যায়নি এই অলরাউন্ডারকে। বল হাতে মাত্র ১ ওভার করে দিয়েছেন ৬ রান। ব্যাট হাতে ৪ বলে ৩ রান করে নরকিয়ার পেসে আত্মাহুতি দিয়েছেন।

সাকিবকে বল না দেয়ার কারণ মাঝের ওভারে ডেভিড মিলার ও হেনরিখ ক্লাসেন ভাল খেলছিলেন। দুজনই স্পিন চমৎকার খেলেন। সাকিবের ফ্লাইটেড ডিলেভারির স্পিন এই পিচে কার্যকর হতো না। এই পিচে জোরের ওপর বল করা স্কিডি স্পিনারদের ভাল করার সুযোগ ছিল। সেদিক থেকে সাকিবকে দলের প্রয়োজনে বাইরে রেখে শেখ মেহেদি হাসানকে একাদশে রাখা যেত। অভিজ্ঞ ও বড় নামের বিচারে একাদশে থেকেছেন সাকিব। বল হাতে পারেননি, ব্যাট হাতেও হয়েছেন ব্যর্থ।

মিলার-ক্লাসেনের রেকর্ড গড়া জুটি

একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষেই এমন উইকেটে বড় জুটি গড়া সম্ভব ছিল। কারণ এই আসরে নিজেদের দুটি ম্যাচই তারা খেলেছে এই মাঠে। তাই পিচ সম্পর্কে ভালো ধারণা নিয়ে মাঝের ওভারগুলোতে রান করে দলটি। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে মিলার-স্টাবস ১২ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর ৬৫ রানের জুটি গড়েন। সোমবার বাংলাদেশের বিপক্ষে ৭৯ বলে ৭৯ রানের জুটি গড়েন মিলার-ক্লাসেন। পঞ্চম উইকেটে টি-টোয়েন্টিতে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ রানের জুটি। আগেরটি ছিল ফন ডার ডুসেন ও উইয়ান মালডারের ৭৭।

আগের ম্যাচর মতো মূলত একটি জুটিতেই ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে চলে যায়। ২৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর ম্যাচ বের করেন এ দুজন। ক্লাসেন ৪৩ বলে ৪৬ ও মিলার ৩৬ বলে ২৮ রান করেন। এই ইনিংমে ১৩ রানে জীবন পান মিলার। মাহমুদউল্লাহর বলে তার ক্যাচ ফেলেন লিটন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত