এভাবে নায়কের মতো বারবারই ফিরে আসেন সাকিব আল হাসান। সকল সমালোচনা-আলোচনাকে মাঠের বাইরে রেখে ব্যাট-বলে পারফরম করেন। আগের সববারের মতো নেদারল্যান্ডস ম্যাচের আগেও সমালোচনার চাপ ছিল সাকিবের ঘাড়ে। সব কিছু তুচ্ছ করে মাঠে সেই পুরোনো সাকিব ফিরলেন সেরা রূপে।
ব্যাট হাতে ৪৬ বলে করলেন অপরাজিত ৬৪। তার ১৩তম ফিফটিতে বাংলাদেশ পেল ৫ উইকেটে ১৫৯ রানের পুঁজি। ওই রান এক সময় অতিক্রমের পথেই ছিল নেদারল্যান্ডস। কিন্তু শেষ সাত ওভারে ডাচদের রানের গতি থামিয়ে বাংলাদেশকে জয় এনে দেন বোলাররা। ৮ উইকেটে ১৩৪ রান করে ২৫ রানে হারে নেদারল্যান্ডস।
ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে গলায় “নেক ব্রেস” লাগিয়ে ব্যাট হাতে দেখা গেল সাকিব আল হাসানকে। চমকে যাওয়ার মতো ছবিটা, তাহলে সাকিব কি খেলছেন না? টসের সময় উত্তর পাওয়া গেল। বাংলাদেশ আগের দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের একাদশ নিয়েই খেলছে। তার মানে সাকিব থাকছেন।
ম্যাচ শেষে উপস্থাপিকা সাকিবকে ওই নেক ব্রেস পরার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। সাকিব বলেন, “আমি অন্য কিছু অনুশীলন করছিলাম।” সাকিব নিজের কাজ সম্পর্কে বেশ ভালো ভাবেই জানেন। তাই নিজের জন্য যা সেরা তাই করেন।
বৃহস্পতিবারের পারফরম্যান্সে একদিন আগে তার সমালোচনা করা ভারত ওপেনার বীরেন্দর শেবাগকে দারুণ জবাব দিলেন সাকিব। সেই সঙ্গে দলকে বিশ্বকাপে ২০০৭ সালের পর প্রথমবার সুপার এইটে নেয়ার পথও দেখিয়ে দিলেন।
গ্রুপ পর্বে দুই জয়ে এবারের লক্ষ্যটাও পূরণ হতে চলেছে বাংলাদেশের। ২০২২ বিশ্বকাপে দুই ম্যাচ জিতেছিল দল। সাকিবরা দেশ ছাড়ার আগেই বলেছিলেন, এবার আগেরবারের চেয়ে ভালো করতে চান। সুপার এইট প্রায় নিশ্চিত। শেষ গ্রুপ ম্যাচে নেপালকে হারালে তিন জয়ে আগের যে কোন আসরের চেয়ে জয়ের দিক থেকে সফল আসর কাটানো হবে বাংলাদেশের।
টার্নিং পয়েন্ট
ম্যাচ বাংলাদেশের দিকে ঘুরে যায় নেদারল্যান্ডস ইনিংসের ১৫তম ওভারে। রিশাদ হোসেন ওই ওভারে জোড়া উইকেট এনে দেন দলকে। এর আগ পর্যন্ত ম্যাচে বেশ ভালো ভাবেই ছিল ডাচরা। ৩১ বলে ৪২ রানের জুটিতে সাইব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখট ও স্কট এডওয়ার্ডস কঠিন করে তুলেছিলেন বাংলাদেশের সুপার এইট স্বপ্ন। ওই সময় ভার্চুয়াল মিটারে দেখাচ্ছিল নেদারল্যান্ডসের জয়ের সম্ভাবনা ৫৭ ভাগ আর বাংলাদেশের ৪৩।
রিশাদ ১৫তম ওভারে সব ঘুরিয়ে দেন। ওভারের চতুর্থ বলটিতে ঝুলিয়ে দেন রিশাদ। তাতে সুইপ করতে গিয়ে এঙ্গেলব্রেখটের ব্যাটের কানায় বল লেগে উঠে যায় পয়েন্টে। রোদের বিপরীতে বল দেখতে কষ্ট হলেও দুর্দান্ত ক্যাচ নেন তানজিম হাসান সাকিব। বড় জুটি ভাঙ্গায় স্বস্তি বাংলাদেশ শিবিরে।
এক বল পর মাত্রই উইকেটে আসা বাস ডি লিডিকে আবারও ফ্লাইটেড ডিলেভারিতে পরাস্ত করেন রিশাদ। ড্রাইভ করতে গিয়ে বল মিস করেন ডি লিডি। উইকেটের পেছনে বিদ্যুৎ বেগে বল ধরে উইকেট ভেঙ্গে দেন লিটন দাস। ৭ রান দিলেও রিশাদের জোড়া উইকেটের ওভারটি বাংলাদেশকে জয়ের পথ দেখায়।
শুরু ও শেষে ৫৪
টি-টোয়েন্টিতে না পাওয়ার হতাশা কাটিয়েছে বাংলাদেশ। শেষ ৫ ওভার বা শুরুর পাওয়ার প্লের ৬ ওভার, এই ফরম্যাটে খুব একটা ভালো যায় না বাংলাদেশের জন্য। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে এই আক্ষেপ কাটানো গেছে দারুণ ভাবে। শুরুর ৬ ওভারে লিটন ও শান্তকে হারালেও ৫৪ রান পেয়েছে বাংলাদেশ। শেষ ৫ ওভারেও এসেছে ঠিক ৫৪ রান।
শুরুর পাওয়ার প্লেতে দুটি ওভারে বড় রান নিতে পেরেছেন বাংলাদেশ ব্যাটাররা। তৃতীয় ওভারে ১৮ ও ষষ্ঠ ওভারে ১৯ রান। এই ক্ষেত্রে অবদানটা বেশি ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমের। আর শেষ ৫ ওভারের মাঝে তিনটি ওভারে এসেছে ১৬, ১৪ ও ১২ রান। এই সময়ে মাহমুদউল্লাহ, জাকের আলি ও সাকিব মিলেই অবদান রেখেছেন।
শান্ত-লিটনের একই দশা
ব্যর্থতার বৃত্ত ছেড়ে বের হতেই পারছেন না বাংলাদেশের দুই টপঅর্ডার। হতাশা বাড়িয়ে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও তাদের ব্যাটে রান নেই। এবার নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন দাস দুজনই ১ রান করে ফিরেছেন। দুজনই অফস্পিনার আরিয়ান দত্তের শিকার।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলটিতে আরিয়ানকে রির্ভার্স সুইপ করেন শান্ত। ঝুলিয়ে দেয়া বলে শান্তকেই পাওয়ার দিয়ে শট নিতে হয়। রিভার্স সুইপ করেছিলেন বলে ঠিকঠাক ব্যাটে-বলে করতে পারেননি। ফলাফল স্লিপে থাকা ভিকরামজিৎ সিংয়ের ক্যাচ হন।
এক ওভার পর লিটন আরিয়ানকে সুইপ করে উড়িয়ে মারেন মিড উইকেটের দিকে। এই আউটে অবশ্য লিটনকে দুর্ভাগাই বলতে হয়। ফাইন লেগ থেকে এঙ্গেলব্রেখট অনেকটা দূর দৌড়ে এসে ঝঁপিয়ে পড়ে ক্যাচ নেন।