প্রথম বিভাগ এখানে কল্পনাতীত! দীর্ঘ ৪৯ বছর ধরে দ্বিতীয় বিভাগের বাইরে থাকা একটা দলের জনপ্রিয়তা কোন পর্যায়ে থাকতে পারে, সহজেই অনুমান করা যায়। ফুটবল থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্য খেলায় আশা খোঁজাই স্বাভাবিক। জিরোনা এফসির ক্ষেত্রে তেমনটাই হয়েছে। নিজেদের মাঠে খেলা থাকলেও সর্বোচ্চ ২০০ দর্শকের উপস্থিতি পাওয়া যেত। সেই জিরোনাই এখন স্প্যানিশ ফুটবলের সবচেয়ে আলোচ্য দল। অখ্যাত এক ক্লাবের হঠাৎ বিখ্যাত হয়ে ওঠার নেপথ্যে কী? কোন জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় জিরোনার ফুটবলে এমন বিপ্লব?
বার্সেলোনাকে তাদের মাঠেই হারিয়ে এসেছে জিরোনা। যেনতেন জয় নয়, বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের ৪-২ গোলে হারিয়ে ওঠে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে। বুধবার (৩ জানুয়ারি) রাতে হারিয়েছে আরেক জায়ান্ট আতলেতিকো মাদ্রিদকে। ৭ গোলের থ্রিলার শেষ মুহূর্তের জাদুতে জয় পেয়েছে ৪-৩ গোলে। লা লিগার ১৯ ম্যাচ শেষে ৪৮ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে জিরোনা। তাদের সমান ম্যাচে সমান পয়েন্ট নিয়েও রিয়াল মাদ্রিদ শীর্ষে আছে গোল ব্যবধানে। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে যথাক্রমে থাকা আতলেতিকো মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা থেকে তারা ১০ পয়েন্টে এগিয়ে।
জিরোনার অন্ধকারাচ্ছন্ন ইতিহাস
স্প্যানিশ ফুটবল সিস্টেমের সর্বোচ্চ পর্যায় লা লিগা। ইউরোপের সেরা লিগগুলোর একটি। এই পর্যায়ে খেলা জিরোনার জন্য ছিল স্বপ্নের চেয়ে বেশি কিছু। কারণ বেশিরভাগ সময় পঞ্চম কিংবা চতুর্থ বিভাগই ছিল তাদের ঠিকানা। স্পেনের অন্য এলাকার দলগুলোর সঙ্গেও খেলার সুযোগ হতো না। বেশিরভাগ খেলতে হতো নিজেদের প্রদেশ কাতালুনিয়ার দলগুলোর বিপক্ষে।
১৯৯৯ সালেও পঞ্চম বিভাগের দল ছিল জিরোনা। অতদূরে যাওয়ার দরকার নেই, ২০০৭ সালেও ছিল তৃতীয় বিভাগের দল। এত নিচের পর্যায়ে খেলা দলের সমর্থকগোষ্ঠী বলতে কিছু ছিল না। মাঠের পারফরম্যান্সের ঘাটতি, ওদিকে সমর্থন নেই- নামমাত্র একটি ক্লাবের উপস্থিতি তখন।
তবে ২০০৭ সাল থেকে জিরোনার ইতিহাস পাল্টাতে থাকে। প্রায় ৫০ বছর পর ফেরে স্প্যানিশ ফুটবলের দ্বিতীয় বিভাগে। প্রাণ ফেরে স্থানীয় ফুটবলে। নতুন আশার আলো খুঁজে নেন জিরোনা।
এই জিরোনাতেই জন্ম ও বেড়ে ওঠা দেলফি গেলির। ঘরের ক্লাব ছাড়াও বার্সেলোনা ও আতলেতিকো মাদ্রিদে রাইট ব্যাকে খেলেছেন তিনি। পেশাদারি ক্যারিয়ার শেষে এই গেলিই এখন জিরোনার সভাপতি। কাতালান ক্লাবটির ইতিহাস তার চেয়ে ভালো আর কে জানেন। কতটা খারাপ দিন গেছে ক্লাবের, সেই দুঃস্মৃতি এখনও চোখের সামনে ভাসে তার।
ফুটবলের অবস্থা এতই খারাপ ছিল যে, বাস্কেটবল দলেরও অনেক সমর্থক ছিল। কিন্তু জিরোনায় নিজেদের ফুটবল নিয়ে ছিল না কোনও আলাপ-আলোচনা। এক সাক্ষাৎকারে গেলি বলেছেন, “আমাদের এখানে জিরোনার (এফসি) কোনও অস্তিত্ব ছিল না। এখনকার লোকেরা হয় বার্সেলোনা কিংবা রিয়াল মাদ্রিদের সমর্থক ছিল। এমনকি এস্পানিওলের ভক্তও ছিল অনেক।’
একটা সময় সর্বোচ্চ ২০০ জন দর্শক দেখতে আসতেন জিরোনার খেলা। ঘরের মাঠ এস্তাদি মন্তিলভিতে যেখানে জিরোনা আক্রমণে উঠতো, সেখানে বসতেন তারা। হাফ টাইমের পর জায়গা পাল্টে গ্যালারির উল্টোপাশে চলে যেতেন তারা। কারণ সাইড পরিবর্তন হয়েছে, জিরোনার আক্রমণ দেখতে হলে বসতে হবে উল্টোপাশে।
দেউলিয়া হতে বসেছিল
২০০৭ সালে ফুটবল-বিপ্লব আসে জিরোনায়। দীর্ঘ সময় পর দ্বিতীয় বিভাগে ফিরতেই তৈরি হয় সমর্থকগোষ্ঠী। ফুটবল উৎসবের ঢেউ ওঠে রাজপথে। প্রতিষ্ঠা হয় ‘জিরোনা ফ্যান ক্লাব’। এই সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ইভান কুইরোসের সেদিনের কথা এখনও স্পষ্ট মনে আছে, “রাস্তায় প্রচুর লোজ জড়ো হয়েছিল। খেলোয়াড়রা গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিল রাস্তায়। তাদের সঙ্গে জিরোনার মানুষজনের আনন্দ ছিল দেখার মতো। ব্যাপারটা বিয়ের অনুষ্ঠানের চেয়ে কম ছিল না।’
দ্বিতীয় বিভাগের খেলায় বাড়তে থাকে সমর্থন। খেলোয়াড়দের দায়িত্বও আরও বাড়ে। একই সঙ্গে বাড়ে তাদের দেখভালের খরচও। সোজা কথায়, ক্লাবের খরচ বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কয়েক বছরের খরচে বাড়তে থাকে ঋণ। একটা সময় ক্লাবের দেউলিয়া হওয়ার জোগাড়!
ক্লাব বিক্রির চেষ্টা
২০১৩ সালে স্প্যানিশ কর অধিদপ্তর জানায় জিরোনার ঋণের পরিমাণ ২.৩ মিলিয়ন ইউরো। আরও ৮ লাখ ইউরো পাওনা আছে স্প্যানিশ পাবলিক হেল্থ সার্ভিসের। এর সঙ্গে খেলোয়াড়দের বেতন দিতে না পারার বিষয়টি তো ছিলই।
সেসময় জিরোনার মালিকানায় ছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী জোসেফ দেলগাদো। তিনি ক্লাবের ৮০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করতে প্রায় ছয় মাস আলোচনা করেন আর্জেন্টাইন আইনজীবী রিকার্দো পিনির সঙ্গে। ২০১৫ সালে ২ মিলিয়ন ইউরোতে সব রফাদফা হয়। যদিও পরবর্তীতে পিনি তার সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলেন। জিরোনার সঙ্গে বাতিল করেন চুক্তি।
গার্দিওলার ভাইয়ের আগমন ও বদলে যাওয়া
পিনির সঙ্গে চুক্তি বাতিল হওয়ার পরপরই জিরোনায় আগমন পেরে গার্দিওলার। ম্যানচেস্টার সিটির কোচ পেপ গার্দিওলার ভাই এই পেরে। ২০০৯ সাল থেকে খেলোয়াড়দের এজেন্ট হিসেবে কাজ করা পেরে নেন জিরোনার বোর্ড ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব। তিনি এসেই পাল্টে ফেলেন জিরোনার অভ্যন্তরীণ কাঠামো।
ফরাসি প্রতিষ্ঠান ‘টিভিএসসি ফুটবল’-এর কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয় জিরোনা। এই চুক্তির নেপথ্যে কাজ করেছেন পেরে গার্দিওলা। ফরাসি প্রতিষ্ঠানটির দুই মালিক লুইস দুতারেত ও সামির বুদজেমার ২ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে শুধু দেউলিয়ার হাত থেকে বাঁচাননি জিরোনাকে। একইসঙ্গে আরও ৬ লাখ ইউরো বাড়তি দেন খেলোয়াড়দের বেতন পরিশোধে।
ইনভেস্টর লুইস দুতারেত ও সামির বুদজেমার অবশ্য আড়ালেই ছিলেন সবসময়। জিরোনার যাবতীয় দায়িত্ব সামলেছেন পেরে গার্দিওলা। নীতি নির্ধারণ থেকে শুরু করে খেলার মাঠ- সব জায়গায় ছিল তার সিদ্ধান্ত। তিনিই গেলিকে বসান সভাপতির চেয়ারে। সিনিয়র অনেক ডিরেক্টরও বোর্ডে এসেছেন পেরে গার্দিওলার সিদ্ধান্তে।
ম্যান সিটির মালিকের বিনিয়োগ
২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৬ সালে প্লে-অফ খেলেও দ্বিতীয় বিভাগ থেকে লা লিগায় উঠতে পারেনি জিরোনা। অবশেষে ২০১৭ সালে পাবলো মাচিনের অধীনে প্রথমবার লা লিগার টিকিট পায় তারা। নতুন শুরুর গল্পটা সেখানে থেকেই।
২০১৭ সালে জিরোনা ঘোষণা দেয়, ক্লাবের সম্পূর্ণ শেয়ার কিনে নিয়েছে ম্যান সিটির মালিক ‘সিটি ফুটবল গ্রুপ’। যদিও বর্তমানে ‘সিটি ফুটবল গ্রুপ’-এর সরাসরি শেয়ার আছে ৪৭ শতাংশ। ৩৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক বলিভিয়ান ব্যবসায়ী মার্সেলো ক্লারের। এই ভদ্রলোক ক্লাব বলিভারেরও মালিক। ওই ক্লাবটিও আবার সিটি ফুটবলের ছায়াতলে! ঘুরেফিরে ‘আসল’ মালিক সিটি ফুটবলই।
সিটি ফুটবলের ইনভেস্টমেন্টের নেপথ্যেও পেরে গার্দিওলা। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমের দাবি, এই চুক্তিতে বড় ভূমিকা রেখেছেন পেপ গার্দিওলা। ম্যান সিটির ঈর্ষণীয় সাফল্যের কারিগর তার ভাইয়ের সঙ্গে আলোচনা করেই ‘সিটি ফুটবল গ্রুপ’-কে ইনভেস্টমেন্টে রাজি করিয়েছেন।
জিরোনার বেড়ে ওঠা
“শুধু অর্থ হলেই হয় না, যেকোনও প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলে প্রয়োজন দক্ষ লোকবল। আর সেই প্রতিষ্ঠান যদি উঠতি হয়, তাহলে অবশ্যই প্রয়োজন সুপরিকল্পনা”- বক্তব্যটা পেরে গার্দিওলার। ‘সিটি ফুটবল গ্রুপ’-এর ছায়াতলে এসে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল জিরোনা, কিন্তু মাঠের ফুটবলে ভালো করতে গেলে ক্লাবে ভালো খেলোয়াড় প্রয়োজন। ২০১৭ সালে লা লিগায় ফিরলেও দুই বছর পরই আবার নেমে যায় দ্বিতীয় বিভাগে। স্বাভাবিকভাবেই অনেক খেলোয়াড় ক্লাব ছেড়ে যান। ওই সময়ে আবার নতুন পরীক্ষায় পড়ে জিরোনা।
‘সিটি ফুটবল গ্রুপ’ এখানে রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। নিজেরা খেলোয়াড় কিনে ধারে পাঠিয়ে দিয়েছে জিরোনায়। উদাহরণ হিসেবে আছেন ফ্লোরিয়ান লেজেউন, রুবেন সোবরিনো ও পাবলো মারি। সবচেয়ে বড় উদাহরণ হয়ে অবশ্য দগলাস লুইজ। ২০১৭ সালে ভাস্কো দা গামা থেকে ১২ মিলিয়ন ইউরোতে তাকে কিনেছিল ম্যান সিটি। কিনেই দুই বছরের জন্য ধারে পাঠিয়ে দেয় জিরোনায়।
যদিও মুদ্রার উল্টোপিঠও আছে। ২০১৮ সালে একাডেমির খেলোয়াড় ব্রাহিম দিয়াজকে জিরোনায় পাঠাতে চেয়েছিল ম্যান সিটি। কিন্তু এই মিডফিল্ডার তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। পরে ২০১৯ সালে নাম লেখান রিয়াল মাদ্রিদে।
তাছাড়া সমর্থকদের মনেও ছিল বড় ভয়- ক্লাবের নাম হয়তো পাল্টে ফেলবে সিটি ফুটবল। কারণ তাদের মালিকানায় প্রায় সব ফুটবল ক্লাবেরই নাম পাল্টেছে। অন্তত ক্লাবের নামের শেষে ‘সিটি’ শব্দ যোগ হয়েছে। সেই হিসাবে জিরোনার সমর্থকদের ধারণা ছিল, তাদের ক্লাবের নাম হতে যাচ্ছে ‘জিরোনা সিটি’। যদিও কোনও পরিবর্তনের দিকে হাঁটেনি সিটি ফুটবল।
সম্ভাবনাময় স্কোয়াড
‘সিটি ফুটবল গ্রুপ’ বড় অংশের মালিকানায় থাকলেও অর্থের ঝনঝনানি নেই জিরোনায়। মোটা অঙ্কের খেলোয়াড়ের দিকেও তারা ছুটেনি। তবে দক্ষ ম্যানেজমেন্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে আবুধাবির প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা অনেক। এছাড়া খেলোয়াড় স্কাউটিংয়েও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছে তারা। সম্ভাবনাময় কোনও খেলোয়াড় দেখলেই ঘরে তুলছে, এরপর ধারে পাঠিয়ে দিচ্ছে জিরোনায়।
এখানে সবচেয়ে বড় উদাহরণ সাভিও। ১৯ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার এখন লা লিগার অন্যতম বড় আকর্ষণ। ফ্রান্সের দ্বিতীয় বিভাগে খেলা ত্রোয়ের মালিকও ‘সিটি ফুটবল গ্রুপ’। এই ক্লাবের জন্যই ৭ মিলিয়ন ইউরোতে সাভিওতে কিনেছে তারা। যদিও ফরাসি ক্লাবটিতে একটি ম্যাচও খেলেননি এই ব্রাজিলিয়ান। ২০২৩ সাল থেকে ধারে খেলছেন জিরোনায়। এবারের লা লিগার ১৯ ম্যাচে ৫ গোলের পাশাপাশি ৫ অ্যাসিস্ট তার।
জিরোনার স্বপ্নের পথচলায় ভিক্তর সিগানকোভের অবদানও কম নয়। গত জানুয়ারিতে ৫ মিলিয়ন ইউরোতে এই ইউক্রেনিয়ার উইঙ্গারকে কিনেছে জিরোনা। পিএসজি আইন্দহোভেন কিনতে চাইলেও তিনি কাতালান ক্লাবটিকেই বেছে নিয়েছেন। কারণ হিসেবে ২৬ বছর বয়সী তরুণের ব্যাখ্যা হলো, পেরে গার্দিওলার জন্যই এসেছেন লা লিগার ক্লাবে।
তার স্বদেশি আরতেম দোভবেকের বেলাতেও একই ঘটনা। জিরোনার ক্লাব ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৭.৫ মিলিয়ন ইউরোর এই খেলোয়াড়ও এসেছেন পেরে গার্দিওলার কারণে। লিগের ১৮ ম্যাচে তার গোল ১১টি।
আরেক ফরোয়ার্ড ক্রিস্তিয়ান স্তুয়ানিও কথাও আসবে। ২০১৭ সাল থেকে জিরোনার সঙ্গে আছেন তিনি। ক্লাবের অধিনায়কও তিনি। বয়স ৩৭ পেরিয়ে গেলেও এই উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার গোলের পর গোল করে যাচ্ছেন। চলতি মৌসুমে করেছেন ৮ গোল।
মাইকেলের জাদুর কাঠি
২০১৭ সালে প্রথমবার লা লিগায় খেলার সুযোগ জিরোনার। পরের মৌসুমেও টিকে ছিল স্পেনের টপ ডিভিশনে। কিন্তু ২০১৯-২০ মৌসুমে নেমে যেতে হয় দ্বিতীয় বিভাগে। আবারও শীর্ষ লিগে ওঠার চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ জিততে জিরোনা ঘরে আনে ‘প্রমোশন এক্সপার্ট’ মাইকেল-কে। যিনি রায়ো ভায়েকানো ও উয়েস্কাকে তুলেছিলেন লা লিগায়।
২০২১ সালের জুনে তিনি জিরোনার দায়িত্ব নিলেও সুবিধা করতে পারেননি। প্রথম ১০ ম্যাচে মাত্র ২ জয়ে ২২ দলের মধ্যে জিরোনাকে রাখতে পেরেছিলেন ২০ নম্বরে। অবশ্য জিরোনার মালিকরা তাকে ছাঁটাই করেনি। ‘সিটি ফুটবল গ্রুপ’ মাইকেলের ওপরই আস্থা রাখতে বলে জিরোনাকে।
আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন মাইকেল। ২০২২ সালে কাতালান ক্লাবকে তুলে আনেন লা লিগায়। দলকে আরও সুশৃঙ্খল করে ২০২৩-২৩ মৌসুমে লিগ শেষ করে ১০ নম্বরে থেকে। আর এবারের মৌসুম তো কাটছে স্বপ্নের মতো।
মাদ্রিদে জন্ম নেওয়া মাইকেলের জীবনের বেশিরভাগ কেটেছে রায়ো ভালোকানোতে, স্প্যানিশ ভাষার অঞ্চলে। জিরোনা কাতালুনিয়া অঞ্চলের ক্লাব। এখানে কাতালান ভাষার মানুষের বসবাস। চাইলে স্প্যানিশ দিয়েই কোচিংয়ের কাজ চালিয়ে নিতে পারতেন তিনি। মাইকেল তা করেননি। শিখেছেন কাতালান ভাষা।
কেন কাতালান ভাষা শিখেছেন, ব্যাখ্যা দিয়েছেন এক সাক্ষাৎকারে, “জিরোনায় জনপ্রিয় হতে কিংবা সমর্থকদের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আমি কাতালান শিখিনি। যখন দেখলাম এই ক্লাবে একটি মাতৃভাষা আছে, যেটি কাতালান, আমি বুঝতে পারলাম এই ভাষার মাধ্যমে মানুষকে একত্র করা যাবে। তখন আমি চেষ্টা করলাম। কারণ ভাষা দিয়ে মানুষের মধ্যে আমার পথ তৈরি করতে চেয়েছিলাম। খেলোয়াড় ও ক্লাবের ঐতিহ্যকে এক করতে হলে ভাষা আমাকে সাহায্য করবে।”
অর্থাৎ শুধু চাকরির জন্য নয়, ক্লাবকে ধারণ ও বহন করতে কাতালান ভাষা আয়ত্ব করার চেষ্টা করেছেন মাইকেল। এখন সংবাদ সম্মেলন কিংবা কাতালান সংবাদমাধ্যমের সামনে কাতালান ভাষাতেই কথা বলেন তিনি।
চলতি মৌসুমে জিরোনার সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা আক্রমণভাগ। ১৯ ম্যাচে তাদের ৪৬ গোল। নামিদামি ফরোয়ার্ড দিয়ে সাজানো রিয়াল মাদ্রিদ (৪০), বার্সেলোনা (৩৪) কিংবা আতলেতিকো মাদ্রিদের (৩৯) চেয়ে বেশি গোল তাদের। ভয়ডরহীন ফুটবল তাদের মূল শক্তির জায়গা।
মাইকেল তার খেলোয়াড়দের মধ্যে বুনে দিয়েছেন আত্মবিশ্বাসের বীজ। প্রতিপক্ষের রক্ষণে চিড় ধরাচ্ছে তারা প্রতি ম্যাচেই। এ মৌসুমে শুধুমাত্র রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে গোল পায়নি মাইকেলের দল। ঘরের মাঠের ওই ম্যাচটিই এ মৌসুমে তাদের একমাত্র হার (৩-০)।