চেন্নাই টেস্টে অসাধারণ সেশন কাটালো বাংলাদেশ। হাসান মাহমুদের কারিশমায় ভারতকে প্রথম দিন শক্ত চ্যালেঞ্জ উপহার দেওয়া গেছে। লাঞ্চ পর্যন্ত ভারত ৩ উইকেটে ৮৮ রান করেছে। ৩টি উইকেটই নিয়েছেন হাসান মাহমুদ।
উইকেটের সংখ্যাটা অনায়াসে ৪ হতে পারতো। ঋষভ পান্ত দুবার আউট হওয়ার মুখ থেকে বেঁচেছেন। দুবারই তাসকিনের বলে। একবার ডিপে সাকিব বলের ফ্লাইট ভুল পড়েছেন। আরেকবার স্লিপে সাদমান ও শান্তর ভুল বোঝাবুঝিতে ক্যাচ মিস হয়।
গতির ঝড় তোলা নয়, হাসান তার মায়াবি বোলিংয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন। ১৩০-৩৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার বোলিংয়ে আর এখন এক্সপ্রেস বলা যায় না। হাসানের বোলিং গতিটা তেমনই। তবে এই পেসারের আছে অবিশ্বাস্য নিয়ন্ত্রণ।
কবজির নিয়ন্ত্রণে বলকে কখনই ইনসুইং-কখনই আউট সুইংয়ে ঘুরিয়েছেন হাসান। জায়গায় বল করে ব্যাটারদের ড্রাইভ করতে বাধ্য করেন তিনি। তাতে পরাস্ত হয়েছেন রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলি। দুজনই হাসানের আউটসুইংয়ে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে।
তাই গত ১৫ বছরে প্রথমবার ভারতের শুরুর তিন উইকেট প্রথম ১০ ওভারে কোন একবোলারের শিকার হলো। হাসানের সেশনে আরও এক শিকার পেতো বাংলাদেশ। লাঞ্চের ঠিক আগে ৩১ রানে থাকা ঋষভ পান্ত তাসকিনের বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন উইকেটের পেছনে। কিন্তু স্লিপে থাকা সাদমান ও শান্ত’র ভুল বোঝাবুঝিতে ক্যাচ মিস হয়।
বিরাট কোহলিকেও ফেরালেন হাসান মাহমুদ
যে কোন বোলারেরই স্বপ্নের উইকেট হয় সেরা ব্যাটাররা। হাসান মাহমুদ সম্ভবত স্বপ্নের ভেলায় ভাসছেন। প্রথমে রোহিত শর্মা এরপর বিরাট কোহলি। বিশ্বসেরা ব্যাটারকে নিজের ট্রেডমার্ক অফস্ট্যাম্পের বাইরের ড্রাইভের বলে পারস্ত করেছেন। ৬ বলে ৬ রানে ফিরলেন কোহলি। ভারত ৩ উইকেট হারিয়ে ৩৪ রান।
বিরাট কোহলি বরাবরই ড্রাইভ করতে পছন্দ করেন। তার ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসগুলোতে আছে কপিবুক ক্রিকেটের সেরা শট ড্রাইভ। সেই ড্রাইভ করতে গিয়েই আউটসাইড এজ হয়ে লিটন দাসের ক্যাচে পরিণত হলেন।
ওদিকে কবজির কারিশমায় অবিশ্বাস্য সুইং বল করতে থাকা হাসান পেয়ে গেলেন নিজের তৃতীয় উইকেট। ভারতকে খাদের কিনারায় ফেলেছেন নিজের তিন ওভারে তিন উইকেট নিয়ে।
হাসানের জোড়া আঘাত
নিজের পরপর দুই ওভারে দুই উইকেট তুলে নিলেন হাসান মাহমুদ। ষষ্ঠ ওভারে রোহিত শর্মাকে আউট করে প্রথম উইকেট এনে দেন দলকে। দলীয় অষ্টম ওভারে ফেরালেন শুভমান গিলকে।
হাসানের লেগ স্ট্যাম্পের বেশ বাইরের বলে গ্লান্স করে চারের আশায় ছিলেন গিল। কিন্তু বল তার ব্যাট ছুঁয়ে চলে যায় লিটন দাসের হাতে। আম্পায়ার একটু ভেবে বাংলাদেশ দলের আবেদনে সাড়া দেন।
এর আগের বলেই হাসানের ইনসুইংগারে পরাস্ত হন গিল। তবে বলে বাউন্স বেশি থাকায় আম্পায়ার আউট দেননি। বাংলাদেশও এ যাত্রা রিভিউ নেয়নি। অবশ্য গিল এক বলের বেশি ছিলেন না। ৮ বলে কোন রান না করেই ফিরেছেন। ভারত ২ উইকেটে করেছে ৩৪ রান।
রোহিত শর্মাকে ফেরালেন হাসান
বাংলাদেশকে প্রথম উইকেট এনে দিলেন হাসান মাহমুদ। ভারত ওপেনার রোহিত শর্মাকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি তিনি। হাসানের বলে আউটসাইড এজ হয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন রোহিত। ভারত অধিনায়কের দেওয়া সুযোগ সহজেই লুফে নিয়েছেন দ্বিতীয় স্লিপে দাঁড়ানো নাজমুল হোসেন শান্ত।
১৯ বল খেলে মাত্র ৬ রানে ফিরেছেন রোহিত। অবশ্য আগেই ভারত অধিনায়ককে ফেরাতে পারতেন শান্ত। ভাগ্য সঙ্গ দেয়নি। চতুর্থ ওভারে হাসানের ইনসুইংগারে পরাস্ত হন রোহিত। জোড়ালো আবেদনেও আম্পায়ার সাড়া দেননি। রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। রিপ্লেতে দেখা যায় বল স্ট্যাম্পের বেলে আঘাত করে। আম্পায়ার্স কলের কারণে এ যাত্রা বেঁচে যান রোহিত।
তবে ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলেই নিজের শিকারকে তুলে নেন হাসান।
টস জিতে বোলিংয়ে বাংলাদেশ
চেন্নাই টেস্টে ভাগ্য পরীক্ষায় জিতলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। টস জিতে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। টেস্টের প্রথম দিন নতুন উইকেট, নতুন বল ও চেন্নাইয়ের মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়ার সুবিধা নিতে চেয়েছে বাংলাদেশ।
এই টেস্টে আগে ব্যাটিং নিয়ে বিরল কীর্তি গড়ল বাংলাদেশ। ১৯৩৪ সাল থেকে চেন্নাইতে হওয়া ৩৫ টেস্টে মাত্র একবার টস জিতে আগে বোলিং নিয়েছিলো কোন দল। ১৯৮২ সালে ইংল্যান্ড টস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠায়। ৪২ বছর পর চেন্নাইয়ে আগে ব্যাটিং নেওয়ার প্রথা ভাঙলেন শান্ত।
চেন্নাই টেস্টের জন্য লাল মাটির উইকেট তৈরি করেছে ভারত। তাতে পেসার ও স্পিনাররা ভালো বাউন্স পাবেন। নতুন বলে প্রথম দিনের সকালে সেই বাউন্স কাজে লাগাতে চাইছে বাংলাদেশ। টস জয় শান্তদের পরিকল্পনায় সফর হতে সাহায্য করতে পারে।
টস জিতলে ভারতও আগে বোলিং নিতো বলে জানিয়েছেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। কারণ তাদের দলেও ছিলেন তিন সিমার আকাশ দ্বীপ, জাসপ্রিত বুমরাহ ও মোহাম্মদ সিরাজ। আর স্পিনার আছেন দুজন অশ্বীন ও জাদেজা।
এদিকে বাংলাদেশও তিন সিমার ও দুই স্পিনার নিয়ে খেলছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের একাদশই রেখেছে সফরকারীরা।
বাংলাদেশ : নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), জাকির হাসান, সাদমান ইসলাম, মুমিনুল হক, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা।
ভারত : রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), যশস্বি জয়সওয়াল, শুভমান গিল, বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুল, ঋষভ পান্ত, রবীন্দ্র জাদেজা, রবীচন্দ্রন অশ্বীন, জাসপ্রিত বুমরাহ, আকাশ দ্বীপ, মোহাম্মদ সিরাজ।