Beta
বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর চোখে টেস্ট সিরিজ

টেস্ট ব্যাটার তৈরি হচ্ছে না বলেই এই দুর্দশা

বাংলাদেশ টেস্ট
[publishpress_authors_box]

তিন মাস আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিলেটে টেস্ট জয়। মিরপুরে জয়ের সুযোগ তৈরি করা। একটি সিরিজে অনেক অর্জন হয়েছিল বাংলাদেশের। সেই অর্জনগুলোকে সামনে রেখে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় চক্রে নতুন স্বপ্ন দেখছিল দেশের ক্রিকেট। কমপক্ষে হোম সিরিজগুলোতে পূর্ণ পয়েন্ট আদায়ের চিন্তা শুরু হয় তখন থেকেই।

অথচ পরের সিরিজেই সেই ভাবনা হোঁচট খায় ভয়ঙ্করভাবে। সামনে এসে দাঁড়ায় কঠিন বাস্তবতা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যাটিং-ফিল্ডিংয়ের ব্যর্থতায় টেস্টে সেই পুরোনো চেহারা ফিরে এসেছে। বোলাররা পূর্ণ চেষ্টায় ভালো করলেও ব্যাটিংয়ের ঘর শূন্য। প্রথম নির্বাচক হয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর প্রথম টেস্ট সিরিজ দেখাও খুব সুখকর হয়নি। সিরিজ নিয়ে সকাল সন্ধ্যার কাছে অকপটে বললেন নানা কথা।

এত বছর পরও টেস্টে এমন অবস্থা

২০০০ সালে প্রথম টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৪০০ রান করেছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ৯১ রান করে নিশ্চিত ড্রয়ের সুযোগ থাকা টেস্টে জুটেছিল হার। উথান পতনের সেই উদাহরণ ২৪ বছর পরও চলছে বাংলাদেশ টেস্ট দলে। ব্যাটিং ব্যর্থতা-ফিল্ডিংয়ে ছন্নছড়া, কোনও টেস্টে ভাল না করলেও ধারাবাহিকতা থাকে না তাদের। সব মিলিয়ে এখনও টেস্টে “নবীন” হয়েই আছে বাংলাদেশ।  

এত বছর পরও টেস্টে বাংলাদেশের এমন অবস্থার কারণ হিসেবে অনভিজ্ঞতাকেই সামনে আনলেন প্রধান নির্বাচক, “এর কারণ তো এক কথায় বলে শেষ করা যাবে না। এখানে একক ভাবে কোনও ব্যক্তি বা কেউ খেলছে না, কতগুলো প্রজন্ম খেলেছে। এ সিরিজে যদি দেখি টপঅর্ডারে যে ব্যাটাররা ছিলেন, তাদের মিলিত টেস্ট মুমিনুলের খেলা টেস্টের সমান হবে না। এই ব্যবধানটা দেখলেই অনেক কিছু স্পষ্ট হয়।”

এছাড়া তিন ফরম্যাটের ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় ক্রিকেটারদের টেস্ট মেজাজ তৈরি না হওয়ার কারণ মনে করেন লিপু। তাই টেস্টের জন্য আলাদা ক্রিকেটার তৈরির ওপর জোর দিলেন তিনি। 

জাকির ও জয় জুটি হিসেবে ভালো করছেন না। দুজনের সঙ্গে সাদমান ইসলাম ছাড়া তৈরি টেস্ট ওপেনার নেই। ছবি : ক্রিকইনফো

পর্যাপ্ত টেস্ট ব্যাটার নেই

মাহমুদুল হাসান জয় টেস্ট খেলেছেন ১৩টি। তামিম ইকবাল, সাদমান ইসলামের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটিতে ব্যাট করেছেন। ২০২৩ থেকে নতুন ওপেনিং জুটি হিসেবে জাকির হাসানকে পেয়েছেন তিনি। জাকির টেস্ট খেলেছেন ৭টি। এ দুই ওপেনার মিলিত ভাবে টেস্ট খেলেছেন ৫টি। ১০ ইনিংসে তাদের জুটির সর্বোচ্চ রান সবশেষ চট্টগ্রাম টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪৭।

তামিমের এখন টেস্ট না খেলার কারণ পুরো দেশ জানে। সাদমান সুযোগ পাচ্ছেন না খুব ভালো ফর্ম নেই বলে। অথচ জয় বা জাকিরের কেউ ইনজুরিতে পড়লে বা ফর্মের কারণে বাদ পড়লে কে জায়গা নেবেন? চট করে কারো নাম মাথায় আসবে না। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, জাতীয় দলে এখন টেস্ট ওপেনার কেবল তিনজন – জয়, জাকির ও সাদমান।

ওপেনারের সঙ্কটটা যেমন প্রোকট বাংলাদেশ দলে টেস্ট ব্যাটারের সঙ্কটও তেমন। লম্বা সংস্করেণের ক্রিকেটে তরুণ কেউ মুশফিকুর রহিমের জায়গা নেবেন এমন কেউ নেই। তাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিলেট ও চট্টগ্রাম দুই টেস্টের বাংলাদেশের টপ-অর্ডার ভুগেছে।

ব্যাটিং ব্যর্থতার পুরোনো চিত্র আরেকবার ফিরে আসা হতাশার সিরিজ শেষে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুও বলছেন ব্যাটার সঙ্কটের কথা, “আমাদের আসলে টেস্টের জন্য ক্রিকেটারদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পেসারদের দিকে যদি দেখি আমাদের এবাদত ইনজুরিতে, তাসকিন নেই, মোস্তাফিজ লম্বা ফরম্যাট খেলে না, শরিফুলও একটু অসুবিধায় ছিল। তবুও আমরা ভালো দুজন পেসারকে দুই টেস্টে অভিষেক করাতে পেরেছি। আরও কিছু পেসার পাইপলাইনে আছে। কিন্তু সেভাবে ব্যাটার নেই।”

এর সঙ্গে প্রধান নির্বাচক যোগ করেন, “ব্যাটার তৈরির জন্য বয়সভিত্তিক থেকে স্কিলফুল ক্রিকেটার যেন উঠে আসে সেদিকটা দেখতে হবে। এইচপি খুব ভাল কাজ করছে তাদের ধারাবাহিকতা থাকতে হবে, “এ” দলের খেলা সেখান থেকে ব্যাটাররা ভালো কিছু শিখবে।”

বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। পুরো সিরিজেই নিশ্চুপ ছিল অধিনায়ক শান্তর ব্যাট। ছবি : ক্রিকইনফো

ব্যাটাররা বড় ইনিংস খেলতে পারছেন না

প্রতি টেস্ট সিরিজের পর আতশি কাঁচের নিচে থাকেন ব্যাটাররা। এক সিরিজে ভালো করলেও পরের সিরিজে তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিলেট টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু পরের সিরিজে তিনি হয়ে গেলেন অচেনা।

অধিনায়কের রোগ ধরেছে বাকি ব্যাটারদের। প্রধান নির্বাচক মনে করেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের শেষ ইনিংসে মেহেদি হাসান মিরাজের ইনিংসটা দেখা উচিত সবার, “বল বাছাই করা ও শট নির্বাচনে আরও নজর দিতে পারলে ভালো হতো। কিছু ইনিংসে ব্যাটাররা যেভাবে আউট হয়েছেন তা মেনে নেয়া কঠিন। আজকে (বুধবার, চট্টগ্রাম টেস্টের শেষ ইনিংসে) মিরাজ যেভাবে ব্যাট করল… তার ইনিংসটার মধ্যেই অনেক উদাহরণ, বক্তব্য ও উত্তর পাওয়া যাবে। সামনের টেস্টের দিকে তাকিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের উচিত মিরাজের ইনিংসটা সামনে রেখে আলোচনা করা।”

আক্ষেপ করে লিপু বলেন, “সিলেট থেকে চট্টগ্রামের উইকেট ভালো ছিল। তবুও আমরা প্রথম টেস্টের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারিনি। ভুল কি হচ্ছে সবাই বুঝছে, দেখা গেল একটা বলে জীবন পেল বা আউট হয়েও পরের ইনিংসে সেই একই ভুল করে আউট হচ্ছে। একই ব্যাটার একাধিকবার স্লিপে বা উইকেট কিপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হচ্ছে। এমন কিছু বিষয় আছে যা আমাদের টেস্ট ব্যাটারদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুধরে নেয়া উচিত। কারণ এ বছর ৮টি টেস্ট খেলতে হবে। এজন্য আমরা কতটা প্রস্তুত হচ্ছি তা গুরুত্বপূর্ণ।”

আউট হয়ে ফিরছেন লিটন। দলের অন্যতম অভিজ্ঞ সদস্য হয়েও চার ইনিংসেই হতাশ করেছেন। ছবি : ক্রিকইনফো

জাতীয় লিগ ব্যাটারদের কি শেখাচ্ছে?

প্রধান নির্বাচক এক কথায় মেনে নিলেন জাতীয় লিগ দিয়ে টেস্ট ব্যাটার তৈরি অসম্ভব। ব্যাটারদের টেস্টে আউট হওয়া বলগুলো নিয়েই কাজ করতে হবে, “আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেট আর আন্তর্জাতিক একই মানের না সেটা আমরা সবাই জানি। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে ব্যাটারদের টেস্টের জন্য প্রস্তুত হওয়া কঠিন। যেটা করতে হবে টেস্টের আউট গুলো নিয়ে কাজ করা। যেন ওই রকম ভুলগুলো সামনের টেস্টে না হয়। দেখা গেল জাতীয় লিগে ওই রকম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় না। তাই টেস্টে করা ভুল থেকেই দ্রুত শিখতে হবে।” অর্থাৎ টেস্ট খেলেই টেস্টে উন্নতি করতে হবে।

তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাটারদের জন্য আদর্শ প্রস্তুতির সুবিধা দিতে টেস্টের মতো উইকেট চান লিপু, “প্রথম শ্রেণীতে খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল গত মৌসুমে ডিউক বলের সংযোজন। এর ফলে পেসাররা টেস্টে ভালো বল করছে। কিন্তু ব্যাটারদের জন্য কাজটা কঠিন হচ্ছে কারণ জাতীয় লিগে টেস্ট মানের উইকেট থাকে না। আমি চাইবো, যেন টেস্টের মতো না হলেও টেস্টের কাছাকাছি মানের উইকেট দিয়ে জাতীয় লিগ খেলানো হয়। তাহলে জাতীয় দলের ব্যাটাররা চারদিনের ম্যাচ খেলে টেস্টের জন্য ভালো ভাবে তৈরি হতে পারবে।”

প্রতি সিরিজের পরই এমন কিছু বাস্তবতা সামনে আসে। তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। নতুন সিরিজের আগে সেসব আলোচনা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। নতুন সিরিজ, নতুন ম্যাচের নতুন বাস্তবতায় নতুন সঙ্কট সামনে আসে। এই আলোচনাও একসময় থিতিয়ে যায়। আর টেস্ট ক্রিকেট রয়ে যায় আগের জায়গায়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত