একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে যে ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা গঠন করেছিলেন, আন্দোলনে সহিংসতায় হতাহতের জন্য সেই আদালতেই তার বিচার চলতে পারে বলে মনে করেন ব্যারিস্টার অনিক আর হক।
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনা সরকারের ভূমিকার বিচার প্রশ্নে এই মত প্রকাশ করেন তিনি।
আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ বন্ধে যে দুজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন, তাদের আইনজীবী ছিলেন অনিক আর হক। ওই আবেদন আদালত খারিজ করে দিয়েছিল।
আন্দোলনের তোড়ে সোমবার শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে বিদেশে চলে যান। তার সময়কালে যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তার বিচারের আশ্বাস এরই মধ্যে সেনাপ্রধান দিয়েছেন।
বিএনপির নেতা ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ছেলে অনিক মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রয়েছে, সেখানের আইনটা যদি দেখি। যেখানে মানবতাবিরোধী আপরাধের বিচার হয়।
“সেখানেও তার বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে। সেখানে যদি তিনি দোষি সাব্যস্ত হন, তখন তাকে নিয়ে আসার চেষ্টা করা যেতে পারে।”
এই আন্দোলনের মধ্যে সংঘাতে পাঁচশর মতো মানুষ নিহত হয়েছে। তার মধ্যে শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী, পুলিশ, সাংবাদিক, সাধারণ মানুষ রয়েছে।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর রাষ্ট্রপতি আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে সংসদ বিলপ্ত করেছেন। এখন সেই শূন্যতা আগে ঠিক করা দরকার বলে মনে করেন ব্যারিস্টার অনিক।
এখন কোনও সরকার না থাকলেও তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে কোনও সরকার নাই। তবে রাষ্ট্রপতি আছেন, সেনাপ্রধান আছেন। ডকট্রিন অব নেসিসিটির প্রয়োজনে সবকিছুই সম্ভব।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনে জোর দিয়ে তিনি বলেন, “এর আগেও বাংলাদেশে দুটি নজির রয়েছে। ১৯৯০ সালে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা করা হয়, তখন কিন্তু ডকট্রিন অব নেসিসিটির ভিত্তিতেই করা হয়েছিল। এখান থেকেও আমরা শিক্ষা নিতে পারি।”
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রায় দিয়ে শপথ ভঙ্গকারী আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন।
সেবিষয়ে অনিক আর হক বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, আমাদের বিচারপতিরা রাগ, অনুরাগ, বিরাগের উর্ধ্বে উঠে শপথ নিয়েছেন। বিচারপতিদের পদত্যাগ চেয়ে বারের সভাপতি যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি তার ব্যক্তিগত মন্তব্য। আমরা আশা করি, বিচারপতিরা তাদের শপথের আলোকেই দায়িত্ব পালন করবেন।”
সরকার পতনের পর বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও লুটপাটের নিন্দা জানান তিনি। একই সঙ্গে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও ধর্মীয় স্থাপনা রক্ষায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের ব্যবস্থা নেওয়ায় তাদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
গণভবনসহ সরকারি বাসভবনে যারা লুটপাট করেছেন, ছবি দেখে তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা উচিৎ বলেও মন্তব্য করেন আইনজীবী অনিক।