Beta
বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫
Beta
বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

ড্রোন হামলা চালিয়ে নেপিদোর আরও কাছে বিদ্রোহীরা

মিয়ানমারের সামরিক শাসকরাই গোপনে নেপিদো শহরটি তৈরি করেছিল। স্বাধীনতার পর থেকে প্রায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশটিতে সেনা শাসন চলছে। ছবি: এএফপি।
মিয়ানমারের সামরিক শাসকরাই গোপনে নেপিদো শহরটি তৈরি করেছিল। স্বাধীনতার পর থেকে প্রায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশটিতে সেনা শাসন চলছে। ছবি: এএফপি।
[publishpress_authors_box]

মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে কয়েকটি সামরিক স্থাপনায় নজিরবিহীন ড্রোন হামলা চালিয়েছে বিদ্রোহীরা। এর মাধ্যমে রাজধানীর আরও কাছে অবস্থান জানান দিয়েছে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করা বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির যৌথদল।

সেনাশাসন বিরোধী গণতন্ত্রপন্থীদের জোট জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি) বলেছে, তাদের সামিরক শাখা পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) বৃহস্পতিবার সকালে এই হামলা চালিয়েছে।

তারা জানায়, মিয়ানমার জান্তার সেনা সদর দপ্তর ও বিমান বাহিনীর একটি ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জান্তা সরকারও হামলার কথা স্বীকার করে বলেছে, তারা এক ডজনেরও বেশি ড্রোন ধ্বংস বা জব্দ করেছে।

জান্তা-চালিত মায়াওয়াদ্দি টিভি বলেছে, ১৩টি ফিক্সড-উইং ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। এই হামলায় কোনও হতাহত বা সম্পত্তির ক্ষতি হয়নি। ‘সন্ত্রাসবাদীদের’ এই হামলার লক্ষ্য ছিল নেপিদোর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো ধ্বংস করা। চারটি ড্রোনে বিস্ফোরক ছিল বলেও জানায় টিভি চ্যানেলটি।

ড্রোন ছাড়ছে বিদ্রোহীরা

এনইউজি এক বিবৃতিতে বলেছে, “নেপিদোর বিরুদ্ধে সমন্বিত ড্রোন অপারেশনগুলো একইসঙ্গে সন্ত্রাসবাদী সামরিক বাহিনীর সদর দপ্তর ও আলার বিমানঘাঁটি উভয়কে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে “

“এই হামলায় হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে” দাবি এনইউজির।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদেন বলা হয়েছে, জান্তা সরকার সাতটি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করার কথা বলেছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমান ঘাঁটির রানওয়েতে একটি ড্রোন বিস্ফোরিত হওয়ার কথা জানা গেছে।

এনইউজি মুখপাত্র কিয়াও জাও আল জাজিরাকে বলেছেন, “এটি একটি সফল হামলা ছিল। এই ড্রোন হামলা ছিল দূরপাল্লার এবং স্বাভাবিকের চেয়ে শক্তিশালী আক্রমণ। আমাদের আরও বেশি কিছু করার পরিকল্পনা আছে।

“এমন এক সময় এই হামলা চালানো হলো যখন জান্তা জোরপূর্বক তার বাহিনীতে সাধারণ নাগরিকদের নিয়োগ এবং জনগণের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করছে। তাদের স্নায়ু কেন্দ্র নেপিদোতে এই হামলার মাধ্যমে আমরা দেখাতে চাই যে, তাদের জন্য আর কোনও নিরাপদ জায়গা নেই।”

জাপানের সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়া বলছে, বৃহস্পতিবারের এই ড্রোন হামলার মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের বিরোধী জোট নেপিদোর আরও কাছাকাছি পৌঁছেছে গেছে, সেই বার্তা তুলে ধরেছে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বলছে, তারা এই ড্রোনটি ভূপাতিত করেছে।

বৃহস্পতিবার এনইউজির মিডিয়া চ্যানেলে আপলোড করা সাক্ষাতকারে এর স্থায়ী সচিব নাইং হতু অং বলেছেন, ৩০টি ড্রোন ব্যবহার করা হামলায় একটি লক্ষ্যবস্তু ছিল সেনা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইংর বাড়ি। সেনা সদর দপ্তর ও শহরের বিমানঘাঁটিও ছিল এই হামলার লক্ষ্য।

এনইউজির স্থায়ী সচিব বলেন, “নেপিদোতে জান্তা বিমান প্রতিরক্ষাসহ একটি জটিল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য কোটি কোটি ডলার ব্যয় করেছে। এটি সেই জায়গা যেখানে জান্তার ধারণা ছিল কোনও আক্রমণ ঘটবে না।

“মাত্র তিন বছরবয়সী গণপ্রতিরক্ষা বাহিনীর (পিডিএফ) এই ধরনের একটি জায়গায় আক্রমণের সক্ষমতা অর্জন বিপ্লবের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ।”

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর শক্তির কেন্দ্র নেপিদো গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত দেশটির বিভিন্ন অংশের তুলনায় তুলনামূলকভাবে শান্ত ছিল। গত সপ্তাহে জেনারেল মিন অং হ্লাইং সেখানে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে একটি সামরিক কুচকাওয়াজেও নেতৃত্ব দেন, যদিও অনুষ্ঠানটি আগের বছরের তুলনায় অনেক কম জমকালো ছিল।

জেনারেল মিন অং হ্লাইং

এনইউজি ২০২০ সালে অং সান সু চির নেতৃত্বে নির্বাচিত বেসামরিক সরকারকে প্রতিনিধিত্ব করে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক সেনা অভ্যুত্থানে যার পতন ঘটে। এর কয়েকমাস পর থেকেই দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলছে।

জাতিসংঘের হিসাব মতে, দেশটির তিন বছরের গৃহযুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ নিহত এবং প্রায় ২৮ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এদের মধ্যে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ প্রতিবেশি দেশগুলোতে পালিয়ে যায়। এছাড়া দেশটির প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষের মানবিক সহায়তা দরকার।

চলতি বছরের শুরুর দিকে এনইউজি দাবি করেছিল, দেশের ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশেরও বেশি এখন বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

মিয়ানমারের সেনা সরকারকে সারাদেশে একাধিক ফ্রন্টের অগণিত বিদ্রোহী বাহিনীর সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাখাইন রাজ্যে এবং ভারত ও চীন সীমান্তের কাছের এলাকা হারানোসহ যুদ্ধক্ষেত্রে অপমানজনক ক্ষয়-ক্ষতির মুখেও পড়তে হয়েছে সরকারি বাহিনীকে। জান্তার হাজার হাজার সৈন্য আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের মনোবল তলানিতে নেমে এসেছে। সামরিক সরকারের সমর্থকরাও এর নেতৃত্বের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

২০২১ সালের সেনা অভ্যুত্থানের পরপরই দেশটি সংঘাতে পতিত হয়। সাধারণ জনগণও সেনা শাসনের তীব্র বিরোধিতা শুরু করে। অনেক বেসামরিক নাগরিক অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। তারা সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে জনগণের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে (পিডিএফ) যোগ দেয়। পিডিএফ এর ডাকে দেশটির জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোও নতুন করে লড়াইয়ে নামে।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে বিদ্রোহীদের ঐক্যবদ্ধ হামলার মুখে পতনের শঙ্কায় রয়েছে মিয়ানমার জান্তা। ১৯৪৮ সালে স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৬২ সাল থেকে দেশটি সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত