অর্থনীতির জটিল সব বিষয় নিয়ে সব সময় সামনে আসেন যিনি, সেই ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে নতুন পরিচয়ে চেনাল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন।
ফেইসবুকে বেশ সক্রিয় এই অর্থনীতিবিদ, প্রায়ই দেশের ও বিদেশের অর্থনীতি নিয়ে নানা ধরনের পোস্ট দেন তিনি। কিন্তু সেই সব পোস্টের ভিড়ে বুধবার দেখা গেল একটি পেন্সিল স্কেচ।
সেই ছবিটি কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামা এক শিক্ষার্থীর; যিনি পুলিশের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সঙ্গীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা রুখে দিচ্ছিলেন।
আন্দোলনকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বুধবার ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি দিয়েছিল। সেই কর্মসূচি পালনে একদল শিক্ষার্থী সুপ্রিম কোর্টে গেলে কয়েকজনকে পুলিশ আটক করে। তখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী পুলিশের গাড়ির সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ান।
ছবিটি বুধবারই ফেইসবুক, ইউটিউবসহ সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল। দিনের আলোচিত সেই ঘটনাটিই পেন্সিলে এঁকে রাতে ফেইসবুকে পোস্ট করেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
১৭ ঘণ্টায় এই ছবিটি ৫০০ বারের বেশি শেয়ার হয়, এতে মন্তব্য করেন ২৩৪ জন, প্রতিক্রিয়া আসে প্রায় ৩ হাজার।
ছবিটি আঁকার বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “যদিও আমি নিতান্তই অর্থনীতি নিয়ে গবেষণা করি, আঁকিয়ে নই, তবে এই তারুণ্যের শক্তির হৃদয়স্পর্শী দৃশ্যটিকে স্কেচ এঁকে ধরে রাখতে চাইলাম।”
সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সহিংসতায় গড়ানোর পর দুই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে কোটা সংস্কার হলেও শিক্ষার্থীরা হত্যার বিচারের দাবিতে এখনও রয়েছে মাঠে।
এই ছবিটি তাকে কতটা স্পর্শ করেছিল, তা উঠে আসে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের কথায়।
“গতকাল রাতে ইউটিউবে আমি ভিডিওটি দেখি। ওই ভিডিও দেখে আবেগ-আপ্লুত না হয়ে পারা যায় না। সহপাঠী ও বন্ধুর জন্য কী সহমর্মিতা! অতটুকু শরীরে অসম্ভব মনোবল, যেন একাই থামিয়ে দেবে দানবীয় যানটা!”
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় বহু প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে এর আগে বিবৃতি দিয়েছিলেন ১৯৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিক হত্যার বিচার দাবি করে দেশের আরও ৭৩ জন বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে যৌথভাবে বিবৃতিটি দেন তিনি। তাতে নিহত, আহত ও নির্যাতিত হওয়ার প্রতিটি ঘটনার স্বচ্ছ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্ত দাবি করা হয়। জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ দলকেও এতে সম্পক্ত করার দাবি জানানো হয়।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তিনি ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। পরে ইসলামাবাদের কায়েদ-ই-আজম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে রেকর্ড নম্বর পেয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। তিনি পিএইচ করেন ১৯৭৭ সালে যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে।
১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা শুরু করেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ; ২০১১ সালে অবসর নেন।