অস্কার-কোয়ালিফাইং ৪১তম তেহরান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বছর জুরি বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সমালোচক ও চিত্রনাট্যকার সাদিয়া খালিদ ঋতি।
চলতি অক্টোবরের ১৭ তারিখ থেকে শুরু হয় ছয় দিনব্যাপী উৎসবটি। তেহরানের মিলাদ টাওয়ার কনভেনশন সেন্টারে ২৩ অক্টোবর এর সমাপনী অনুষ্ঠানটি হয়।
জুরি বোর্ডের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ঋতি ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন উপমহাদেশের সংগীতজ্ঞ এ আর রহমান। এছাড়া অন্যদের মধ্যে ছিলেন ইতালির মায়া কস্টা, ঘানার অ্যান্থনি এনটি, রাশিয়ার একাতেরিনা ইয়াকোলেভা এবং ইরানের আহমেদ রেজা মোতামেদি এবং মাসুদ মাদাদি।
এই অঞ্চলের মর্যাদাপূর্ণ, প্রাচীনতম শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভালের এই সংস্করণে ১৫০টি দেশ থেকে ১৩ হাজারেরও বেশি চলচ্চিত্র উৎসবে নাম লেখায়।
এই উৎসবে তার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ঋতি বলেন, “এই উৎসবে জুরি হিসেবে আমন্ত্রণ পাওয়া অনেক সম্মানের। ইরান এত সুন্দর চলচ্চিত্র বানায় যে প্রতিটি পুরস্কারই ইরানিদের হাতে তুলে না দেওয়া আমাদের পক্ষে কঠিন ছিল। আমি আশা করি, আগামী বছরগুলোতে আমরা এখানে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রও দেখতে পাব।”
এই বছর ইরানি নারীদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে ঋতি বলেন, “এখানে অনেক নারীকে পুরস্কার জিততে দেখা অনুপ্রেরণাদায়ক। পুরস্কার পায়নি এমন কিছু স্মরণীয় চলচ্চিত্রও নারীদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। ইরানে বসবাসকারী ইরানিরা যদি তাদের উপর আরোপিত সমস্ত বিধিনিষেধ মেনে এমন চমৎকার চলচ্চিত্র তৈরি করতে পারে, তাহলে বলতেই হয় তাদের কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। আমি আশা করি আমরা শিগগিরই ইরানের সঙ্গে কিছু কালচারাল এক্সচেঞ্জ কর্মসূচির ব্যবস্থা করতে পারবো, যা আমাদের নতুন প্রজন্মের পরিচালকদের অনেক উপকৃত করবে।”
এবারের জুরি সদস্যদের সম্পর্কে ঋতি বলেন, “আমি তেহরানে যাওয়ার পরই এ আর রহমানের জুরি বোর্ডে থাকার কথা জেনেছি। ছোটবেলা থেকেই তার কাজ আমাকে অনুপ্রেরণা জোগাত। বিচার করার পাশাপাশি, তিনি সেখানে একটি ফিল্ম স্কোরিং (ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক) ওয়ার্কশপও পরিচালনা করেছিলেন, যেটিতে আমি যোগ দিতে পারিনি কারণ আমার কিছু স্ক্রিনিং শেষ করার ছিল। জুরি সদস্যদের মধ্যে আরেকজন কিংবদন্তি ছিলেন- ডঃ আহমদ রেজা মোতামেদী। উৎসবে অনেক মানুষই তাদের জীবনের কোনো না কোনো সময়ে তার ছাত্র ছিল। সবাই তাকে যে সম্মান দেখিয়েছিল তা থেকে অনুমান করা যায় তিনি কত বড় মাপের মানুষ।”
১৭ অক্টোবর তেহরানের মেল্লাত সিনেপ্লেক্সে ৪১তম তেহরান আন্তর্জাতিক শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল উদ্বোধনের দিন বিভিন্ন বিভাগের ২৩টি শর্ট ফিল্ম প্রদর্শিত হয়।
আন্তর্জাতিক বিভাগে সেরা চলচ্চিত্রের জন্য গোল্ডেন লিফ (উৎসবের গ্র্যান্ড প্রাইজ) পায় প্যালেস্টাইনের ইব্রাহিম হান্দালের ‘আ শর্ট ফিল্ম অ্যাবাউট কিডস’। এই পুরস্কার জেতার মাধ্যমে, চলচ্চিত্রটি অস্কারে প্রতিযোগিতার জন্য অনুমোদিত হয়।
এর আগে কান চলচ্চিত্র উৎসবে দুইবার বাংলাদেশ থেকে জুরিবোর্ডের সদস্য হিসেবে আমন্ত্রিত হন ঋতি। ইতালি, ভারত, ইংল্যান্ড, নেপাল, ফ্রান্স, রাশিয়া এবং শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্বের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে জুরি সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।