Beta
বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫
Beta
বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫

ধূমকেতু নয়, লিটন হয়ে উঠুক ধ্রুবতারা

লিটন ২
[publishpress_authors_box]

লিটন দাসের ব্যাটিং শৈলী নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। নেই তার প্রতিভা নিয়েও। তবে প্রতিভা ও শৈলীর মিলিত ফল প্রকাশে আছে বিস্তর পার্থক্য। তাই ধূমকেতুর মতো লিটন দেখা দেন কালেভদ্রে। তার উদ্ভাসিত হওয়ার দিনে আলোকিত হয় বাংলাদেশের স্কোর। সেই আলোর ধারাবাহিকতা থাকে কম। 

লিটন যেদিন খেলেন সেদিন তার ব্যাটিং দেখতেই মন চায়– এমনটা বলেছিলেন সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার। কিন্তু যেদিন খেলেন না সেদিন? সেদিনে আউট হওয়ার ধরন দেখে হতাশার চূড়ান্ত পর্যায় তৈরি হয়। রবিবার সেই দিনটি আসেনি। বরং ধ্রুবতারার মতো আলোকিত হয়ে এসেছেন এই ব্যাটার।

রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টের তৃতীয় দিনটি ছিল লিটনের। এদিন তিনি হতাশ করেননি। উল্টো মুগ্ধতা ছড়িয়ে ব্যাটিং শৈলী দেখিয়েছেন। রবিবার লিটনের ব্যাটিং দেখার দিন। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে সবাইকে মুগ্ধ করে পেয়েছেন টেস্টের পরম কাঙ্ক্ষিত সেঞ্চুরি, যা তার ক্যারিয়ারের চতুর্থ।

এদিন লিটন যখন উইকেটে আসেন, ২০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল বাংলাদেশ। ওই সময় একজন অভিজ্ঞ ব্যাটারের দিকে তাকিয়ে পুরো দল। লিটন মুশফিক-সাকিবদের মতো অতো টেস্ট খেলেননি। তবে ৪২ টেস্টের অভিজ্ঞতা থেকে তার কাছে দায়িত্বশীল ব্যাটিং আশা করেছে সবাই।

লিটন হতাশ করেননি। ক্যারিয়ারের অন্যতম দায়িত্বশীল ইনিংস খেলে দলকে ফলোঅনের শঙ্কা থেকে রক্ষা করেন। ৭৮ রান করা মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে গড়েছেন ১৬৫ রানের জুটি, সপ্তম উইকেটে যা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

সংখ্যা বড় বিষয় না। দেখার হলো লিটনের ব্যাটিং। শেষ ২০২২ সালে এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দল বিপদে পড়লে ঠান্ডা মাথায় খেলেছিলেন লিটন। ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ১৪১ রানের ইনিংসও সেদিন খেলেছিলেন। ঠিক সেই রকম একটি ইনিংস উপহার দিলেন আজ। এছাড়া তার আগের দুই সেঞ্চুরি নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের সঙ্গে।

রবিবার শুরু থেকেই ভিন্ন লিটনকে দেখেছে সবাই। কোনো ভুল শট নেই। তেড়ে মারার তাড়াও নেই। বাজে বল পেয়েছেন তো মেরেছেন। ঠিক যেমন খুররম শাহজাদকে লাঞ্চের পর টানা তিন চার। আবার টানা তিন ওভারের মতো ডট দিয়েছেন। যখন ম্যাচে যেমনটা দরকার ঠিক তেমন খেলা। এই রকম পরিণত লিটনকেই চায় বাংলাদেশ।

এই সেঞ্চুরিতে এ বছর সব ফরম্যাট মিলিয়ে লিটনের রান হয়েছে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৪৭৪। লিটন নিজে ব্যাট করছিলেন ১১৯ রানে। এক বছর আগে সব ফরম্যাট মিলিয়ে ৪০ ম্যাচে করেছিলেন ১ হাজার ১১৫ রান। অথচ ২০২২ সালটি ছিল লিটনের জন্য অন্যরকম।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বর্ষপঞ্জিতে ৪১ ম্যাচে এক হাজার ৯২১ রানে সর্বোচ্চ রান করার রেকর্ড গড়েছিলেন। লিটনের আগে এই কীর্তি ছিল ২০১৮ সালে মুশফিকুর রহিমের ১৬৫৭ রান। ২০১০ সালে তামিম ইকবালের ১৬৪৬। ২০০৬ সালে শাহরিয়ার নাফীসের ১৩৮৮। ২০১০ সালে সাকিব আল হাসানের ১৩২৯।

এমন রেকর্ড গড়া বছরের পর হারিয়েই গিয়েছিলেন লিটন। বিশ্বকাপের মাঝে ছুটি। ব্যাট হাতে টানা ব্যর্থতা জেঁকে ধরেছিল এই ওপেনারকে। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর লম্বা বিরতি শেষে পাকিস্তান সিরিজে পুরোনো লিটন ফিরেছেন।

প্রথম টেস্টে দায়িত্বশীল ৫৬ রান করেছিলেন। এবার সেঞ্চুরি পেলেন ২৭ মাস পর।

লিটনকে এভাবেই চায় বাংলাদেশ। সবসময়। ধূমকেতু নয়, তিনি বরং ধ্রুবতারা হয়ে নিত্য আলো ছড়াক বাংলাদেশের ক্রিকেট আকাশে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত