Beta
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫

নকল দুধের খবরের পর পা ভাঙল সাংবাদিকের  

সাংবাদিক মানিক হোসেন বর্তমানে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সাংবাদিক মানিক হোসেন বর্তমানে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
[publishpress_authors_box]

রোজার সময় ‘নকল’ দুধ তৈরি চক্রের সংবাদ করায় পাবনার ভাঙ্গুড়ার মানিক হোসেন নামের এক সাংবাদিককে পিটিয়ে পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।  

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সকাল ৯টার দিকে ভাঙ্গুড়া উপজেলার পুঁইবিল গ্রামে মানিক হোসেনের ওপর হামলা করা হয়।

এই ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে আহত সাংবাদিকের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে ভাঙ্গুড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।  

সাংবাদিক মানিক হোসেন।

মানিক হোসেন দৈনিক খোলা কাগজের ভাঙ্গুড়া প্রতিনিধি এবং ভাঙ্গুড়া প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

আহত সাংবাদিক মানিকের অভিযোগ, নকল দুধ নিয়ে উপজেলায় প্রথম তিনি সংবাদ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনকে তথ্য দিয়ে নকল দুধ তৈরি বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এতেই অসাধু চক্রটির টার্গেটে পড়তে হয় তাকে।   

যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তারা হলো- উপজেলার চকলক্ষীকোল এলাকার মো. রাজিব (২৭), পুঁইবিল এলাকার  মো. বায়েজিদ (২৫), মো. মাহাতাব (২৭), কৈডাঙ্গা নতুনপাড়ার আবুল বাশার (৪০), মো. বাবু (৩০)। এছাড়া এ ঘটনায় আরও তিনজনকে অজ্ঞাত আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে হামলার ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও আসামিদের কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।

মামলার এজাহার বলা হয়েছে, ভাঙ্গুড়ার দিলপাশা ইউনিয়নের চক লক্ষীকোল গ্রামের দুধ ব্যবসায়ী মো. রাজিব এবং কৈডাঙ্গা গ্রামের আবুল বাশার দীর্ঘদিন ধরে নকল দুধ তৈরির করে বাজারজাত করে আসছেন। এ নিয়ে কিছুদিন আগে মানিক হোসেনসহ কয়েকজন সাংবাদিক নকল দুধ তৈরির ভিডিও ধারণ করেন। এসব ভিডিও উপজেলা ও থানা প্রশাসনকে দেখালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মতবিনিময় সভায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অসাধু চক্রটির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়।

পরে এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রাজিব ও বাশারের নেতৃত্বে বায়েজিদ ও মাহাতাবসহ ১০-১২ জন ভাড়া করা মঙ্গলবার সকালে পুঁইবিল সড়কে মানিককে একা পেয়ে পিটিয়ে পা ভেঙে দেয়।

পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে মানিককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যায়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা মানিককে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে।

মামলার বাদী ইসমাইল হোসেন বলেন, “আমাদের এখানে প্রচুর নকল দুধের কারবার হয়। আমার ছেলে নকল দুধ তৈরির কাজ বন্ধ করতে চেয়েছিল। সে নকল দুধ তৈরির ভিডিও করেছিল, সেগুলো উপজেলা প্রশাসনকে দিয়েছিল। এজন্য তার ওপর হামলা হয়েছে।

“এ ঘটনার পর আমাকে ওরা (নকল দুধের কারবারিরা) হুমকি দিয়ে বলেছে, মানিক কি এসব সাংবাদিকতা করে, লেখালেখি করে? এসব থামাতে বল।”

সাংবাদিক মানিক হোসেন বর্তমানে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার পায়ের হাটুতে অস্ত্রোপচার করতে হবে। এজন্য মানিককে ঢাকায় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) নিয়ে যাওয়া লাগতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।    

মানিকের পায়ের হাড় ভেঙে গেছে।

মোবাইল ফোনে কথা হলে এই আহত সাংবাদিক মানিক বলেন, পাবনায় বাজার নকল দুধে সয়লাব। সারাবছরই কারবার চলে। তবে রোজার সময় এই চক্র বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ঈদুল ফিতরের আগে একটি তথ্য পেয়ে তিনি তার প্রেসক্লাবের সভাপতি রায়হান আলীসহ তিনজন চক লক্ষ্মীকোলা গ্রামে যান। সেখানে নকল দুধ তৈরির ভিডিও করেন। এ নিয়ে তার লেখা সংবাদ স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশ হয়। তার আরেক সহকর্মী কালের কণ্ঠের উপজেলা প্রতিনিধিও সংবাদ প্রকাশ করেন। এছাড়া তাদের দেওয়া তথ্যে ভাঙ্গুরা উপজেলা প্রশাসন সেসব স্থানে অভিযান চালিয়ে অর্থদণ্ড দেয়। এরপর মঙ্গলবার সকালে পুঁইবিল এলাকায় মানিককে পিটিয়ে পা ভেঙে দিয়েছে মামলার আসামিরা। সেসময় তারা পেটানোর ভিডিও করে।

মানিক হোসেন অভিযোগ করে বলেন, “আমার দেওয়া তথ্যে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেছে। কোথাও কাউকে না পাওয়ায় সেখানে সিলগালা করে রেখেছে। এ কারণেই আমি তাদের টার্গেটে পড়ি। আমার সভাপতি রায়হান উনিও টার্গেটে আছেন।

“হামলায় আমার মোটরসাইকেল উদ্ধার হলেও মোবাইল ফোন দুটি এখনও পাওয়া যায়নি।”

“এখন মামলা করা হয়েছে। কিন্তু কতদূর কী হবে জানি না” যোগ করেন মানিক হোসেন।  

গ্রেপ্তারের বিষয়ে ভাঙ্গুড়া থানার ওসি নাজমুল হক বলেন, মামলা দায়ের হয়েছে, কিন্তু এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। তবে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আশা করি, শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

পাবনার সবচেয়ে বেশি দুধ উৎপাদনকারী উপজেলা ভাঙ্গুড়া। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, এ উপজেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে প্রায় ৭৫০টি দুগ্ধ খামার রয়েছে। উপজেলায় পাঁচটি দুগ্ধ সংগ্রহ ও বিপণন কেন্দ্রের ২৮টি শীতলীকরণ কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে প্রাণ কোম্পানির ২১টি দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া ব্র্যাকের তিনটি, আকিজের দুটি, মিল্ক ভিটার একটি ও বারো আউলিয়ার একটি কেন্দ্র রয়েছে।


আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত