মাত্র একদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পাকিস্তানের হারে হাঁফ ছেড়ে বাঁচতেই পারে বাংলাদেশ। এখন আর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হারের উদাহরণ কেউ টানবে না। কারণ ওই দলটিই পাকিস্তানকে হারিয়েছে দুর্দান্ত খেলে। আর শুধু যুক্তরাষ্ট্রের পাকিস্তানকে হারানোর ঘটনাই না। বিশ্বকাপের এ’কদিনের এত ঘটনা হয়েছে যা বাংলাদেশর ওই সিরিজ হারকে ভুলে থাকা যায়।
নাজমুল হোসেন শান্তরাও সেই চেষ্টা করছে। এখন আর অতীত মনে রাখছেন না। বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে আরও আগেই। একদিন বাদে নিজেরাও মাঠে নামছেন। অতীত ভুলে নতুন একটি দিনে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তারা ভালো কিছু উপহার দিতে চান দেশকে।
নতুন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী
নিকটঅতীতে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের জন্য বড় প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে। দুই দলের লড়াই বেশ জমে উঠে। ২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফি থেকে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ঝাঁঝ পাওয়া যায় শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ লড়াইয়ে। সেই অবস্থাটা আরও প্রকোট হয়েছে ২০২৩ বিশ্বকাপে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজের টাইমড আউট ঘটনায়। এরপর বাংলাদেশে হওয়া দ্বিপক্ষীয় সিরিজে দুই দল এক অপরকে টাইমড আউট নিয়ে পাল্টা পাল্টি উপহাস করেছে সিরিজ জয়ের পর।
বিশ্বকাপে ২০০৭ ও ২০২১ সালের দুই লড়াইয়ে জিতেছে শ্রীলঙ্কা। তবে ২০২১ সালে জেতা ম্যাচ হাতছাড়া হয় বাংলাদেশের বোলিং পরিকল্পনা ও ক্যাচ মিসের ভুলে। এবার তার পুনরাবৃত্তি চাইবে না দল।
আর সব দলের বিশ্বকাপ শুরু হয়ে গেলেও বাংলাদেশ সবার পরে নামছে। শনিবার ভোর মাড়ে ৬টায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে। এর এক ঘন্টা আগে নিউজিল্যান্ডের খেলা আফগানদের সঙ্গে। তাই সবার পরে বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের। ১ জুন বিশ্বকাপ শুরুর পর নিজেদের প্রস্তুত করতে বেশ লম্বা সময় পেয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। অধিনায়ক জানিয়েছেন এই সময়ে তার দল সর্বোচ্চ প্রস্তুতিটাই নিয়েছে।
শ্রীলঙ্কার সমস্যায় নজর নেই বাংলাদেশের
শ্রীলঙ্কা এখন নিজেদের নিয়েই চিন্তিত। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ব্যাটিং বিপর্যয় হয়েছে তাদের। এর আগে নেদারল্যান্ডসের কাছে প্রস্তুতি ম্যাচেও হেরেছে। আইসিসির কাছে ভেন্যু থেকে হোটেলের দুরত্ব ও লম্বা বিমান ভ্রমণ নিয়ে অভিযোগও করেছে তারা।
সব মিলিয়ে নিজেদের চিন্তাটা বাংলাদেশের চেয়েও বেশি শ্রীলঙ্কার। নাজমুল শান্ত অবশ্য এসবে নজর দিচ্ছেন না। শ্রীলঙ্কার অবস্থা না মেপে নিজেদের নিয়ে ভাবতে চান অধিনায়ক, “তারা কি ভাবছে বা তাদের মাথায় কি চলছে তা নিয়ে আমরা ভাবছি না। আমরা আমাদেরকে নিয়ে ভাবছি এবং কিভাবে নিজেদের শক্তি অনুযায়ী খেলতে পারি। হ্যাঁ, তাদের হয়ত ম্যাচটা ভালো যায়নি কিন্তু তারা কি অনুভব করছে সেটা নিয়ে ভাবছি না।”
অলিখিত ফাইনাল
শান্ত জানেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি কতটা গুরুত্বের। অনেকটা অলিখিত ফাইনাল। এই ম্যাচ হারলে পরের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতেই হবে। নয়তো ডি গ্রুপের অপর দুই দল নেদারল্যান্ডস ও নেপালকে হারিয়েও শেষ আটের টিকিট মিলবে না। তাই শ্রীলঙ্কার সঙ্গে জিততেই হবে, এর বিকল্প নেই।
কিন্তু নিজেদের ব্যাটিং নিয়ে চিরায়ত সমস্যার জায়গায় তো সুরাহা হয়নি। টপঅর্ডার বরাবরই হতাশ করছেন। শান্তও তা স্বীকার করলেন। পাশাপাশি শ্রীলঙ্কা ম্যাচে জয়ের জন্য টপঅর্ডারদের ভূমিকার কথা মেনে নিয়েছেন শান্ত। তাই অনুশীলনে দুর্বলতা নিয়ে কাজ হয়েছে বলেও জানিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
নতুন দিনে অতীত ভুলে ভালো কিছুর আশা রেখে অধিনায়ক বলেছেন, “সাম্প্রতিক সময়ে খুবই সত্যি টপ অর্ডাররা ভালো করেনি বা করছে না। কিন্তু কালকের দিনটা পুরোপুরি নতুন দিন। অনুশীলনে যার যে জায়গায় সমস্যা আছে সবাই শতভাগ দিচ্ছে। উন্নতির জায়গা যদি বলেন অবশ্যই আগের জায়গা থেকে সবাই ভালো অবস্থায় আছে। অনুশীলন দেখে বা নেটে ব্যাটিং করেছি সবাই তাতে মনে হয়েছে আগের থেকে ভালো অবস্থায় আছে। আগে কি হয়েছে এটা চিন্তা না করে কালকে আশা করছি যেভাবে আমাদের ব্যাটাররা প্রস্তুতি নিয়েছে ওইটা যদি বাস্তবায়ন করতে পারে তাহলে ভালো ম্যাচ হবে।”
গুরুত্বপূর্ণ হবে টস ভাগ্য
বালাদেশের জন্য আজকের ভেন্যু ডালাস একেবারই অচেনা মাঠ। এই মাঠে এখন পর্যন্ত হওয়া তিন ম্যাচে তিন রকম স্কোর এসেছে। পরে ব্যাট করা দল ম্যাচ জিতেছে তিনটিতেই। তাই টস ভাগ্য মহাগুরুত্বপূর্ণ হবে। রান তাড়া করার মানসিকতাও রাখতে হবে বাংলাদেশ ব্যাটারদের।
এই মাঠে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু টেক্সাসের হারিকেনে সেই ম্যাচ ভেস্তে যায়। তাই মাঠের পাশের অনুশীলন ফ্যাসিলিটিজে করা অনুশীলনই নাজমুল শান্তদের ভরসা।
নার্ভাসনেস জয় করতে হবে
বাংলাদেশ দলের বেশ কয়েক জনের জন্য এবারের বিশ্বকাপ প্রথম। বড় আসরের ম্যাচে নড়বড়ে ভাবটা তাদের থাকবে। ওই ক্রিকেটারদের শান্ত করার লোকও আছে বাংলাদেশ দলে। সাকিব আল হাসান সব টুর্নামেন্ট খেলেছেন। মাহমুদউল্লাহ একটি বাদে বাকি বিশ্বকাপগুলো খেলেছেন। মোস্তাফিজুর রহমান বোলিংয়ে টি-টোয়েন্টি অভিজ্ঞতার জন্যই এক্স ফ্যাক্টর হবেন বাংলাদেশ দলের।
দলে এমন অভিজ্ঞতা থাকতেও নাজমুল শান্ত মেনে নিলেন নার্ভাসনেস থাকবে সবার মাঝেই। তা কাটিয়েই জয় পেতে হবে, “আমার মনে হয় সবাই ভালো অবস্থানে আছে (মানসিকভাবে)। কালকে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। এটা সত্য সবাই একটু হলেও নার্ভাস থাকবে। আমরা কীভাবে এটা মোকাবিলা করছি এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি আশা করবো যে… এখানে অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছেন যাদের বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা আছে। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে।”
পরিশেষে
বাংলাদেশ দল তাকিয়ে আছে অভিজ্ঞতার দিকে। আর আশা রাখছে ভালো প্রস্তুতির ওপর। কিন্তু সব ঠিক থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র, ওমান বা নবাগত উগান্ডাদের মতো চাপহীন খেলা খেলতে পারে না বাংলাদেশ। ব্যাটিং ব্যর্থতায় চাপে পড়তে হয় বারবার। সেই চাপ এই ম্যাচে না আসুক। বাংলাদেশ কাটিয়ে উঠুক নিজেদের জুজু। নতুন দিনটি নতুন ভাবে শুরু হোক এটাই প্রত্যাশা।