দীর্ঘ প্রতীক্ষা ও বিতর্কের পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (ন্যাটো) সদস্য হতে সুইডেনের আবেদন অনুমোদন করেছে তুরস্ক।
দেশটির পার্লামেন্টে মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত ভোট হয়। চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তর্ক-বিতর্কের পর সুইডেনের পক্ষে ভোট পড়ে ২৮৭টি। বিপক্ষে পড়ে ৫৫ ভোট। চার আইনপ্রণেতা ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিলেন।
রয়টার্স, ডয়চে ভেলে ও আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদান সংক্রান্ত বিলে স্বাক্ষর করবেন। এরপর এটি আইনে পরিণত হবে।
সুইডেনকে ন্যাটোর সদস্য করা হবে কি না, এই সিদ্ধান্ত নিতে তুরস্কের ২০ মাস লেগে গেল। এই বিলম্ব তার পশ্চিমা মিত্রদের হতাশ করেছিল। এখন বাকি আছে কেবল হাঙ্গেরি। ইউরোপের দেশটি এখন পর্যন্ত ন্যাটোতে সুইডেনের যোগদানের পক্ষে অনুমোদন দেয়নি।
প্রায় দুই বছর আগে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালায় রাশিয়া। এর তিন মাস পর সুইডেন ও তার প্রতিবেশী দেশ ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দিতে আবেদন করে।
২০২৩ সালের এপ্রিলে ন্যাটো অন্তর্ভুক্ত সব দেশের সম্মতিতে জোটটির ৩১তম সদস্য হয় ফিনল্যান্ড। এর ফলে রাশিয়ার সঙ্গে ন্যাটোর সীমান্ত বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। রাশিয়ার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলে ১ হাজার ৩৪০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে।
ন্যাটোতে ফিনল্যান্ডের যোগদান ছোট তিন বাল্টিক দেশের (এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়া) প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বাল্টিক দেশ তিনটি ন্যাটোতে যোগ দিয়েছিল।
তুরস্কের পার্লামেন্টে ভোটের পর সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্তেরশন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) বলেছেন, “ন্যাটোতে যুক্ত হওয়ার পথে আর মাত্র এক কদম দূরে স্টকহোম। ইতিবাচক দিক হচ্ছে, ন্যাটোতে সুইডেনের যোগদানের পক্ষে ভোট দিয়েছে তুরস্কের পার্লামেন্ট।”
ন্যাটোতে সুইডেনকে যুক্ত করার বিষয়ে শুরুতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান রাজি ছিলেন না। তার অভিযোগ, তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও ইরাকের উত্তরাঞ্চলে সক্রিয় সশস্ত্র রাজনৈতিক সংগঠন কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টিকে (পিকেকে) সমর্থন দিচ্ছে সুইডেন।
পিকেকে একসময় স্বাধীন কুর্দি রাষ্ট্রের দাবি করেছিল। পরে নব্বই দশকে সংগঠনটি সেই অবস্থান থেকে সরে এসে তুরস্কের ভেতরেই কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানায়। পিকেকে-কে কেবল তুরস্ক নয়; যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আরও কয়েকটি দেশ সন্ত্রাসী সংগঠন মনে করে।
সুইডেনকে শুরুতে বাধা, পরে অনুমোদনের মধ্য দিয়ে রাশিয়ার প্রতি এরদোয়ানের দৃষ্টিভঙ্গি আরও জটিল হয়ে সামনে এল।
তুরস্ক একদিকে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করছে, অন্যদিকে একই সঙ্গে ইউক্রেনকে চলমান যুদ্ধে ড্রোনসহ প্রয়োজনীয় অস্ত্র সরবরাহ করছে।
হাতেগোনা যে কয়েকজন ন্যাটো নেতা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক ও ফোনালাপ করেন, তাদের একজন এরদোয়ান।