শুরুতে ঝড় মাঝে প্রতিরোধ আর শেষে জয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের তৃতীয় দিনটি বাংলাদেশের জন্য এমনই। দিনের শুরুতে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারানো বাংলাদেশ লিটন দাসের সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে করেছে ২৬২ রান। পরে দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানের ২ উএকট তুলে নিয়েছে মাত্র ৯ রানে।
চতুর্থ ওভারে হাসান মাহমুদের বলে দিনে বাংলাদেশ ব্যাটারদের ভয় হয়ে ওঠা খুররম শাহজাদ ফিরতেই শেষ হয় খেলা। খুররমকে আউট সুইংগারে বোল্ড করার আগে ওপেনার আবদুল্লাহ শফিককে লিটনের ক্যাচে পরিণত করেন হাসান।
দ্বিতীয় ইনিংসে ২ উইকেট হারিয়ে ৯ রান করা পাকিস্তানের লিড ২১ রানের। নতুন বল হাতে চতুর্থ দিন রাওয়ালপিন্ডির পিচে সকালটা নিজেদের করে নিতে চান বাংলাদেশ পেসাররা।
লিটনের বিদায়ে বাংলাদেশও থামল
লিটন দাসের লড়াকু ইনিংস থামল। রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের তৃতীয় দিন প্রায় পুরোটা দিন খেললেন তিনি। ২২৮ বলের ইনিংসে করেছেন ১৩৮ রান। লিটনের দুর্দান্ত ইনিংসে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে করেছে ২৬২ রান। পাকিস্তান পেয়েছে মাত্র ১২ রানের লিড।
অথচ দিনের শুরুতে কালো মেঘের ঘনঘটা ছিল বাংলাদেশের আকাশে। মাত্র ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফলোঅনের শঙ্কায় ধুঁকছিল সফরকারীরা। এত কম রানে এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ডারবান টেস্টে বাংলাদেশের ৬ উইকেট পড়েছিল।
ওই অবস্থা থেকে দলকে টেনে তুলেছেন লিটন। সহযোদ্ধা হয়ে পাশে ছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। দুজনে গড়েছেন ১৬৫ রানের জুটি। ২৬ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর এত সপ্তম উইকেটে এত বড় জুটি টেস্টের রেকর্ড।
১২৪ বলে ১২ চার ও ১ ছক্কায় মিরাজ ৭৮ করে ফিরলে লড়াই চালিয়ে যান লিটন। নবম উইকেটে হাসান মাহমুদকে সঙ্গী করে পাকিস্তানকে হতাশায় ডোবান। এই জুটি তুলেছে ৬৯ রান। বোলার হাসান মাহমুদের অবদান ৫১ বলে ১৩ রান। মূলত হাসানের এই টেস্ট ইনিংসেই সেঞ্চুরির স্বাদ পেয়েছেন লিটন।
পাকিস্তানের হয়ে ক্যারিয়ার সেরা স্পেল উপহার দিয়েছেন খুররম শাহজাদ। ৯০ রানে ৬ উইকেট টেস্টে তার প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট।
২৭ মাস পর টেস্ট সেঞ্চুরি লিটনের
উইকেটে যখন এসেছিলেন দল ২৬ রানে ৬ ব্যাটার হারিয়ে ধুঁকছে। ওই অবস্থা থেকে দলকে টনে তুললেন। একপ্রান্ত আগলে অসাধারণ ইনিংস খেলে লড়াইয়ের পথ দেখালেন। করলেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি।
সবশেষ ২০২২ সালের মে মাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন লিটন। ওই টেস্টেও ২৪ রানে ৫ উইকেট হারানো দলকে টেনে তুলেছিলেন এই ব্যাটার। সঙ্গে ১৭৫ করেছিলেন মুশফিকুর রহিম।
আগে লিটনের সেঞ্চুরি ছিল শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিপক্ষে। লিটনের শতরানে ৮ উইকেটে ২১৭ রান করেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের চেয়ে প্রথম ইনিংসে এখনও পিছিয়ে ৫৭ রানে।
১৬৫ রানের রেকর্ড জুটি গড়ে ফিরলেন মিরাজ
দিনের শুরুতে টানা ৬ উইকেট হারিয়ে চরম বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। মাত্র ২৬ রানে ৬ উইকেট হারানোয় ব্যর্থতার রেকর্ডও হয়ে যায়। এত কম রানে এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে ৬ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। টাইগারদের প্রথম ৬ উইকেট হারানোর সবচেয়ে লজ্জার কীর্তি এটাই।
এই ধাক্কা সামলেছেন লিটন দাস ও মেহেদি হাসান মিরাজ। দুজনের সপ্তম উইকেটে ১৬৫ রানের জুটিতে পায়ের নিচে মাটি পেয়েছে বাংলাদেশ। টেস্ট ইতিহাসেই ৩০ রানের কমে ৬ উইকেট হারানোর পর সপ্তম উইকেটে লিটন-মিরাজের ১৬৫ রানের জুটিই সর্বোচ্চ। পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিন চা বিরতি পর্যন্ত ৮ উইকেটে বাংলাদেশ করেছে ৮ উইকেটে ১৯৩ রান।
প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের চেয়ে পিছিয়ে ৮১ রানে। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে মিরাজ করেছিলেন ৭৭ রান। দ্বিতীয় টেস্টে ফিরলেন ১২৪ বলে ৭৮ রান করে। খুররাম শেহজাদের গুড লেংথের বলে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে তাকেই ক্যাচ দিয়ে ফিরেন মিরাজ। তাতে ভাঙে সপ্তম উইকেটে লিটনের সঙ্গে ১৬৫ রানের জুটি।
রাওয়ালপিন্ডিতেই প্রথম ইনিংসে সপ্তম উইকেটে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ১৯৬ রানের জুটি গড়েছিলেন মিরাজ। এবার লিটনের সঙ্গে গড়লেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৬৫। মিরাজের পরই ১ রানে ফিরেন তাসকিন। লিটন দাস ব্যাট করছিলেন ৮৩ রানে।
শুরুর আধ ঘন্টা চরম অস্বস্তিতে কেটেছে বাংলাদেশের। রাওয়ালপিন্ডির সবুজ উইকেটে দিনের শুরুতে দারুণ সুইং আদায় করে নেন খুররম শাহজাদ ও মীর হামজা। খুররম ৪ ও হামজা ২ উইকেট তুলে নেন মাত্র ৬ ওভারের মাঝে।
দিনের সূর্য উইকেটের ময়েশ্চার দূর করতে কিছুটা ধাতস্থ হন ব্যাটাররা। পিচ সহজ হওয়ায় ভালোভাবে খেলতে পারছিলেণ লিটন-মিরাজ। লাঞ্চের আগে বাকি সময়ে দুজনে বিনা বিপদে পার করেছেন।
বাংলাদেশের ফলোঅনের শঙ্কা
রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শুরুটা দুঃস্বপ্নের চেয়েও অনেক বেশি বাংলাদেশের জন্য। মাত্র ৬ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা হতে হলো মুহূর্তে। সবশেষ ২ রানে সাকিব আল হাসানের এলবিডব্লিউ হওয়ায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সফরকারীদের রান ৬ উইকেটে ২৭।
শুরুটা ভালোই করেছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার। কিন্তু ঝড়ো হাওয়ায় তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে দেরি হয়নি। শুরুর ৬ ব্যাটারের কেবল সাদমান দুঅঙ্কের ঘরে রান করেছেন। তার ১০ রান বাদে বাকিরা আসা যাওয়ায় ব্যস্ত ছিলেন।
পাকিস্তানের করা ২৭৪ রান থেকে আরও ২৪৭ রানে দূরে বাংলাদেশ। ফলোঅন এড়াতে পাকিস্তানের স্কোরের এক তৃতীয়াংশ রান করতে হতো বাংলাদেশকে।
নিয়ম অনুযায়ী ৭৪, তবে একদিন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় এমসিসির নিয়ম অনুযায়ী ১২৪ রান করতে হবে বাংলাদেশকে। ম্যাচ চারদিনে বা তিনদিনে নেমে আসলে ফলোঅন করাতে হলে দুই দলের প্রথম ইনিংসে রানের ব্যবধান থাকতে হবে ১৫০।
বাংলাদেশকে এমন বিপদে ঠেলেছেন দুই পাকিস্তান পেসার। খুররম শাহজাদ ও মীর হামজা। দুই প্রান্ত থেকেই সুইং ও গতিতে নাভিশ্বাস তুলেছেন বাংলাদেশ ব্যাটারদের। ফুল লেন্থ ডিলেভারিতে দুজনই হালকা সুইং পাচ্ছিলেন দুজন। তাতে বল বুঝে ওঠা কঠিন ছিল ব্যাটারদের জন্য। সেখানেই একের পর এক ভুল।
খুররম মাত্র ৭ ওভারে ৮ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট, আর হামজা ২টি।
দুজনের আগুনে বোলিংয়ে টেলিফোন নাম্বারে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটিং কার্ড। সাদমান ইসলাম ২৩ বলে করেছেন ১০। জাকির ১৬ বলে ১ রান, নাজমুল হোসেন শান্ত ৬ বলে ৪, মুমিনুল হক ২ বলে ১, মুশফিক ৯ বলে ৩ রানে ফিরেছেন।
দ্বিতীয় টেস্টে রাওয়ালপিন্ডিতে উইকেট ধূসর নয় সবুজ রাখা হয়। তাকে পেসার ও স্পিনাররা সুবিধা পেয়েছেন দারুণ। প্রথম টেস্টের মতো ব্যাটারদের জন্যই সব রাখা হয়নি। সেই সুবিধায় বাংলাদেশ পেসাররা টেস্টের দ্বিতীয় দিন শুরুতে নতুন বলে ভালো সুইং পেয়েছিলেন।
টেস্টের দ্বিতীয় দিন সেই সুবিধা পেলেন পাকিস্তান পেসাররা। দুর্দান্ত সুইং ও পেসের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাটারদের ভুলে চার ওভারেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ এনে দেয় পাকিস্তানের হাতে।