শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ বলতে যায় বোঝায়, তার সব উপাদান নিয়ে হাজির হয়েছিল ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়াম। যেখানে জন্ম হলো নতুন ইতিহাসের, রচিত হলো মার্কিন মুলুকে ক্রিকেটের নতুন অধ্যায়। জয় দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু করে আনন্দে মাতোয়ারা ছিল যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট দল। তবে এবার আগের সবকিছু ছাপিয়ে গেল। পাকিস্তানকে হারিয়ে ক্রিকেট দুনিয়ায় নিজেদের আবির্ভাবের কথা জোরালো ভাবে জানান দিল আমেরিকানরা।
বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (৬ জুন) দিবাগত রাতে পাকিস্তানকে সুপার ওভারে হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আগে ব্যাট করা পাকিস্তান নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫৯ রান করেছিল। জবাবে আমেরিকানরাও নির্ধারিত ওভার শেষ করে ৩ উইকেটে ১৫৯ রানে। এরপর ফল নিষ্পত্তির জন্য গড়ানো সুপার ওভারে ঐতিহাসিক জয় পায় যুক্তরাষ্ট্র।
ম্যাচে দারুণ বোলিং করেছিলেন মোহাম্মদ আমির। সেকারণে সুপার ওভারে তার হাতেই বল তুলে দেয় পাকিস্তান। কিন্তু আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি বাঁহাতি পেসার। ঠিক জায়গায় বল করতে না পারার সঙ্গে কিছুটা দুর্ভাগ্যের ছোঁয়ায় ১৮ রান খরচ করেন তিনি। লক্ষ্যটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায় পাকিস্তানের।
১৯ রানের সেই লক্ষ্য পেরোতেও পারেননি ইফতিখার আহমেদ, ফখর জামান ও শাদাব খান। এই তিনজন মিলে নিতে পারেন ১৩ রান। ফলে বিশ্বমঞ্চে প্রথমবার পাকিস্তানকে হারানোর ইতিহাস গড়ে যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশকে হারিয়ে একটা বার্তা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে কন্ডিশনের সঙ্গে নাজমুল হোসেন শান্তরা খাপ খাইয়ে নিতে পারেননি, এমন একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করেছিলেন কেউ কেউ। অঘটন হিসেবেই ধরা হয়েছিল ওই সিরিজ। কিন্তু এই যুক্তরাষ্ট্রের পারফরম্যান্সে অঘটনের সাক্ষ্য নেই, বরং ক্রিকেট দুনিয়ায় নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে তারা।
টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েই সেটি দেখাতে থাকে মোনাঙ্ক প্যাটেলরা। চমৎকার বোলিংয়ে পাকিস্তানকে চেপে ধরে বিশ্বকাপের অন্যতম আয়োজকরা। ঘরের মাঠের কন্ডিশনের পূর্ণ ফায়দা তুলে স্পিনার নস্টুশ কেনজিগে ৩০ রানে নেন ৩ উইকেট। পেসার সৌরভ নেত্রাভালকারের ১৮ রানে শিকার ২ উইকেট।
তাদের দারুণ বোলিংয়ে শুরুতেই ফেরেন মোহাম্মদ রিজওয়ান (৯) ও উসমান খান (৩)। চাপের মধ্যে বাবর আজম একপ্রান্ত আগলে রেখে খেলেছেন, তবে তার ৪৩ বলে ৪৪ রান মোটেও টি-টোয়েন্টিসুলভ নয়।
শাদাব অবশ্য ২৫ বলে করেন ৪০ রান। এছাড়া শাহিন শাহ আফ্রিদির ১৬ বলে অপরাজিত ২৩ ও ইফতিখারের ১৪ বলে ১৮ রানে ১৫৯ করতে পারে পাকিস্তান।
বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দলের ব্যাটারদের রান তুলতে যখন এতটা ভুগতে হয়েছে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের কাজটাও সহজ হওয়ার কথা নয়। কিন্তু আমেরিকানরা দেখায় অন্য চিত্র। দারুণ ব্যাটিংয়ে পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে লক্ষ্যের পথে এগিয়ে গেছে। ১৮তম ওভার পর্যন্ত জয়ের পাল্লা তাদেরই ছিল ভারি। তবে আমিরের ১৯তম ওভারের চমৎকার বোলিং পাল্লা ভারি করে পাকিস্তানের দিকে।
শেষ ওভারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন পড়ে ১৫ রান। বল হাতে নেওয়া হারিস রউফ শেষ ৩ বলে খেই হারিয়ে ম্যাচ নিয়ে যান সুপার ওভারে। সেখানে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপে নতুন ইতিহাস গড়ল যুক্তরাষ্ট্র।
ঐতিহাসিক এই জয়ের পথে অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেল রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। রান তাড়া করতে নেমে তিনি খেলে যান ৩৮ বলে ৫০ রানের ইনিংস। ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে তারই হাতে।