Beta
শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
আনার হত্যার তদন্ত

পাহাড়ে লুকিয়ে থাকা ২ আসামিকে ধরে উড়ে এলেন হারুন

আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত আরও দুজনকে বুধবার গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত আরও দুজনকে বুধবার গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
[publishpress_authors_box]

গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ সকালে গিয়েছিলেন ঝিনাইদহে; সেখান থেকে হেলিকপ্টারে তিনি উড়াল দেন খাগড়াছড়িতে; সেখান থেকে ঢাকায় ফেরার সময় গ্রেপ্তার করে নিয়ে এলেন সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার খুনের সন্দেহভাজন দুই আসামিকে।

গ্রেপ্তার এই দুজন হলেন- মোস্তাফিজুর রহমান ও ফয়সাল আলী সাজী। তারা সীতাকুণ্ডের পাথাল কালী মন্দিরে লুকিয়ে ছিলেন বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে।

সন্ধ্যায় দুই আসামিকে নিয়ে পূর্বাচলে ১৮ নম্বর সেক্টরের বঙ্গবন্ধু ট্রাই টাওয়ারে নামে ডিবির ব্যবহার করা হেলিকপ্টার। নামার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা অতিরিক্ত কমিশনার হারুন; যিনি এই খুনের তদন্ত দেখভালে ভারতেও ঘুরে এসেছিলেন।

হারুন বলেন, ‘চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূইয়ার সঙ্গে কলকাতায় থেকে ফয়সাল, মোস্তাফিজ ও জিহাদ কিলিং মিশনে অংশ নেন। এমপি আনারের মূল ঘাতক ছিলেন শিমুল ভূইয়া। তাকে আমরা গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে অন্যদের নাম পেয়েছিলাম।

“পলাতক এই দুই আসামির বিভিন্ন জায়গায় অবস্থানের তথ্য আমরা পাচ্ছিলাম। অবশেষে মঙ্গলবার জানতে পারি, তারা খাগড়াছড়ি অথবা সীতাকুণ্ডের গহীন পাহাড়ে আছে। মঙ্গলবারই ডিবির একটি টিম অনুসন্ধান শুরু করে। আজ আরেকটি টিম অভিযানে অংশ নেয়। হেলিকপ্টার নিয়েই দুটি স্থানে অভিযান চলতে থাকে।”

এরমধ্যে সীতাকুণ্ডের পাথাল কালি মন্দির থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ফয়সাল ও মুস্তাফিজ তাদের নাম পরিবর্তন করে পলাশ দাস ও শিমুল রায় বলে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। তারা ওই মন্দিরেই ২৩ দিন লুকিয়ে ছিলেন।

কলকাতায় আনার হত্যাকাণ্ডের খবর আসার পর দেশে ডিবি তদন্তে নেমে এনিয়ে সাতজনকে গ্রেপ্তার করল।

তাদের মধ্যে ২২ মে আনার খুনের খবর আসার পরপরই গ্রেপ্তার করা হয় শিমুল ভূইয়া, তার ভাতিজা তানভির ভূইয়া ও শিলাস্তি রহমান নামে এক তরুণীকে। খুনের সময় তারা কলকাতায় ছিলেন বলে ডিবির ভাষ্য।

এরপর গ্রেপ্তার করা হয় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু এবং ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবুকে। তারা দেশে থেকে খুনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন বলে ডিবির দাবি।

হারুন এর আগে দুপুরে ঝিনাইদহে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “এ হত্যাকাণ্ডে মোট সাতজন অংশ নেয়। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। বাকি দুজনকে গ্রেপ্তারের জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।”

কাজী কামাল বাবুর ফোনের খোঁজে সকালে ঝিনাইদহে গিয়েছিলেন হারুন অর রশীদ।

ডিবির ভাষ্য অনুযায়ী, আনারকে হত্যার পর দেশে কামালের মোবাইলে যোগাযোগ করেছিলেন খুনিরা। তবে সেই ফোন বাবু ফেলে দিয়েছিলেন।

সেই ফোনের খোঁজেই হারুন সকালে হেলিকপ্টার নিয়ে গিয়েছিলেন ঝিনাইদহে। দুটি পুকুরে তল্লাশিও চালানো হয়। তবে ফোন কিংবা কোনও আলামত পাওয়া যায়নি।

দুপুরের পর সেখান থেকেই হেলিকপ্টারে খাগড়াছড়ির দিকে রওনা হন হারুন।   

সর্বশেষ গ্রেপ্তার দুজন মোস্তাফিজ ও ফয়সালও কলকাতায় থেকে খুনে সরাসরি অংশ নেন বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি।

হারুন বলেন, তারা ১৯ মে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তাদের দুজনকে ২০ মে ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল পালিয়ে থাকার জন্য। তারা বিভিন্নভাবে অন্য দেশে পালানোর চেষ্টাও করেছিলেন।

আনার খুনের হোতা হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আক্তারুজ্জামান শাহীনকে চিহ্নিত করেছে ডিবি। বলা হচ্ছে, তিনি আনারকে খুন করার জন্য চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূইয়াকে ভাড়া করেছিলেন।   

শাহীনকে গ্রেপ্তার করাই এখন মূল লক্ষ্য জানিয়ে ডিবি কর্মকর্তা হারুন বলেন, “ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টেলিজেন্সকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ভারতের সঙ্গে আমেরিকার চুক্তি রয়েছে, তারাও চেষ্টা করছে ধরার, আমরাও চেষ্টা করছি।”

আনোয়ারুল আজীম আনার গত ১২ মে দর্শনা দিয়ে ভারত গিয়েছিলেন। পরদিনই কলকাতায় তিনি খুন হন।

ঝিনাইদহ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনার গত ১২ মে কলকাতায় যাওয়ার পরদিনই কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিবা গার্ডেন্সের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন বলে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ২২ মে জানায়।

হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে জিহাদ হাওলাদার নামে এক বাংলাদেশি সেখানে গ্রেপ্তার হয়েছেন। সিয়াম হোসেন নামে আরেক বাংলাদেশিকে নেপাল থেকে গ্রেপ্তার করে এনেছে ভারতীয় পুলিশ।

আনার খুন হয়েছেন জানালেও তার লাশের সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ জানিয়েছে, হত্যার পর আনারের দেহ খণ্ড খণ্ড করে ছড়িয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন স্থানে।

সঞ্জিবা গার্ডেন্সের সেপটিক ট্যাংক থেকে কিছু মাংসের টুকরা উদ্ধার হয়েছে। তা আনারের দেহাংশ কি না, তা জানতে এই সংসদ সদস্যের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনের ডিএনএ নমুনা নিয়ে মিলিয়ে দেখা হবে। সেজন্য ডরিনের কলকাতায় যাওয়ার কথা রয়েছে।  

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত