Beta
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫

প্রত্যয় স্কিম ও কোটাবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির সমর্থন

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
[publishpress_authors_box]

প্রত্যয় পেনশন স্কিম প্রত্যাহারে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এবং সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে চলা আন্দোলনে ‘নৈতিক সমর্থন’ দিচ্ছে বিএনপি।

শনিবার বিএনপির চেয়ারপার্সনের গুলশানের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের এমন অবস্থান তুলে ধরেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ছাত্র আন্দোলনে দলটির যুক্ত হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। তবে ‘দায়িত্বশীল’ রাজনৈতিক দল হিসেবে এর প্রতি সমর্থন রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। আর বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রত্যয় স্কিম বাতিল করবে বলে তিনি জানান।

সরকারের প্রত্যয় পেনশন স্কিম সিদ্ধান্ত বাতিলে ৩০ জুন সময় বেঁধে দিয়েছিল শিক্ষকরা। ১ জুলাই এই স্কিম কার্যকর হওয়ার পর ধর্মঘট শুরু করে দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত বাতিলে ছাত্ররাও ৩০ জুন সময় বেধে দিয়েছিল। এরপর থেকে তারাও আছে লাগাতার আন্দোলনে।

পরিস্থিতি বিবেচনায় দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক দল বিএনপি সমর্থন দিয়েছে এ দুই আন্দোলনে।

শনিবার বেইলি রোডে পাহাড়ি ফল মেলায় অংশগ্রহণ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিএনপি শিক্ষক ও কোটা আন্দোলনে ভর করতে চায়।”

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘বিএনপি একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল। দেশে কিছু হলে এর রিঅ্যাকশন দিতে হবে। প্রশ্নই উঠতে পারে না, আমরা শিক্ষকদের ওপর ভর করেছি। এগুলোর ওপর ভর করার কারণ কী থাকবে? আমরা নৈতিক সমর্থন করছি।’’

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বৈষম্যমূলক কোনো প্রকল্প চালু করা হবে না দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘শিক্ষকদের ব্যাপারটা সেনসেটিভ। তাদের বেতনের ওপর নির্ভর থাকতে হয়। আমরা সরকারে গেলে এটা (প্রত্যয় স্কিম) যদি টিকে থাকলে সেটি বাতিল করবো।’’

সরকারি চাকরিতে কোটা সর্বোচ্চ ৫ থেকে ১০ শতাংশ থাকতে পারে বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব।

দলের স্থায়ী কমিটির আলোচনার ভিত্তিতে চলমান আন্দোলনের বিষয়টি বিএনপির চোখে পড়ছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ছাত্রদের কোটা আন্দোলন। হাইকোর্ট থেকে রায় দিয়েছে। রায়ের আগে যে কোটা ব্যবস্থা ছিল, তাই এখন বহাল থাকছে। ৫৬ শতাংশই কোটা থেকে নির্বাচিত হবে। কোটাতে চলে গেলে মেধার বিকাশ সম্ভব হবে না। মেধাশূণ্যতা দেখা দিচ্ছে।’’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘গত কয়েক দিন যাবৎ ছাত্ররা সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি বাতিলের জন্য হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে।

“মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মাননা দেওয়া হয়। রাষ্ট্রীয় আচার অনুষ্ঠান, জাতীয় দিবস সমূহ এমনকি তাদের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মানের সহিত দাফন করা হয়। এগুলো তাদের প্রাপ্য। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাসহ নানান সুবিধা আছে।”

সাংবিধানিকভাবে ও আইনের দৃষ্টিতে সব নাগরিক সমান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সংবিধানের ২৮ (৪) ও ২৯ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নারী ও নাগরিকদের পিছিয়ে পড়া অংশ এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও শারীরিক প্রতিবন্ধী, এর বাহিরে ব্যতিক্রম হিসেবে কিছু সংরক্ষণ ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। ৫৬ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা বহাল রেখে প্রযুক্তি ও মেধানির্ভর বিশ্বব্যবস্থায় জাতি হিসাবে টিকে থাকা অসম্ভব।’’

কোনও শ্রেণীতেই কোটা পদ্ধতি মেধা বিকাশে সহায়ক হতে পারে না বলে মত বিএনপি মহাসচিবের।

তার মতে, “বর্তমান অবৈধ, অনির্বাচিত, কর্তৃত্ববাদী সরকার বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে অর্থাৎ আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে জনগণের ন্যায্য দাবি দমিয়ে রাখার ঘৃণ্য পুরনো কৌশলেই তারা ছাত্রসমাজের ন্যায্য আন্দোলনকে দমানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত।’’

তিনি বলেন, “একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে প্রযুক্তি ও জ্ঞানভিত্তিক বৈশ্বিক ব্যবস্থায় টিকে থাকতে হলে মেধাভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কোনও বিকল্প নেই। তাই সাধারণ ছাত্র সমাজের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবির সঙ্গে আমরা একমত।

“ইতিহাসের শিক্ষা হচ্ছে, জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন কখনও দমানো যায় না। আমরা আশা করি সরকার সময় থাকতে ছাত্রসমাজের যৌক্তিক ও ন্যায্য দাবি মেনে নেবে। ছাত্রদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে এই সমস্যা সমাধানের আহবান জানাচ্ছি।”

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি দেশের সবকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক ও কর্মচারী সম্প্রতি শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর জন্য দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক ও কর্মচারীদের সম্পৃক্ত করে সরকারি পরিপত্র জারি করেছে।

“বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সম্প্রদায় ও কর্মচারীবৃন্দ এই স্মারক প্রত্যাখ্যান করেছে এবং প্রতিবাদ করেছে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদান, পরীক্ষা গ্রহণসহ সব কার্মকাণ্ড বন্ধ রেখেছে। একটা অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এটা জাতির জন্য উদ্বেগজনক।

“প্রকৃতপক্ষে এটি এই দেউলিয়া সরকারের দূর্নীতির আরও একটি পথ খুলে দেওয়া। যেহেতু দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা চরম সংকটাপন্ন, তাই অন্য খাতসহ শিক্ষকদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে এই পেনশনের টাকা তুলে নিতে চাচ্ছে।”

সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ৪টি প্রকল্পে এ পর্যন্ত প্রায় ১৮ কোটি জনগণের মধ্যে ৪০ হাজার আবেদন জমা পড়ছে। জানিয়েছে বিবিসি।

মির্জা ফখরুল বলেন, “সাবেক অর্থমন্ত্রী লোটাস কামাল সংসদে এই বিল উত্থাপনের ভাষণে বলেছিলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিমের টাকা রাখার জন্য সরকার জায়গা খুঁজে পাবে না। সরকারের আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে সর্বজনীন পেনশন স্কিম নামে নতুন স্কিম চালু করা সরকারের দুর্বল আর্থিক খাত মেরামতের একটা কৌশল। এটি এই অবৈধ ও আর্থিকভাবে দেউলিয়া সরকারের আরেকটি নূতন লুটপাট স্কিম, যার নাম পেনশন স্কিম, প্রত্যয় স্কিম ইত্যাদি।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত