Beta
বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫
Beta
বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন না, তাহলে নওয়াজের ভূমিকা কী হবে

প্রধানমন্ত্রী না হলেও রাজনীতিতে সক্রিয়ই থাকবেন নওয়াজ শরিফ। ফাইল ছবি/এএফপি
প্রধানমন্ত্রী না হলেও রাজনীতিতে সক্রিয়ই থাকবেন নওয়াজ শরিফ। ফাইল ছবি/এএফপি
[publishpress_authors_box]

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে কারাগারে রেখে গত ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন। ভোটের মাঠে ইমরান না থাকায় সব মহলেই ধারণা ছিল, সেনাবাহিনীর সমর্থন নিয়ে নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ বা পিএমএল-এন অনায়াসে নির্বাচনে জিতে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। আর দল ক্ষমতায় গেলে পিএমএল-এনের সর্বোচ্চ নেতা নওয়াজ শরিফই প্রধানমন্ত্রী হবেন— এমনটাই ধারণা ছিল সবার।

তবে ভোটের ফল প্রকাশের পর দেখা গেল, পিএমএল-এন একক রাজনৈতিক দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ৭৫টি আসনে জয়ী হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবমিলিয়ে জিতেছেন ১০১টি আসনে। এই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ৯৩ জনই আবার পিটিআই সমর্থিত প্রার্থী, যারা দলীয় পরিচয়ে নির্বাচন করার সুযোগ না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়ান।

এমন পরিস্থিতিতে সরকার গঠন করবে কারা তা নিয়ে শুরু হয় নানামুখী আলোচনা। জাতীয় পরিষদের ৫৪টি আসনে জয় পাওয়া পাকিস্তান পিপলস পার্টিসহ (পিপিপি) সমমনা দলগুলোর সঙ্গে সরকার গঠনের বিষয়ে আলোচনা চালাতে থাকে নওয়াজের দল। একপর্যায়ে সমঝোতায়ও পৌঁছায় তারা।

এই সমঝোতা ঘিরে সবারই ধারণা ছিল, জোট করার প্রয়াসে সফল হলে নওয়াজ শরিফই হবেন পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। তবে জোট সরকারের বিষয়ে পিপিপিসহ পাঁচটি দলের সঙ্গে সমঝোতার পর নওয়াজ শরিফের দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নওয়াজ শরিফ নন, তার ছোট ভাই পিএমএল-এনের প্রেসিডেন্ট শেহবাজ শরিফ হবেন পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।

শেহবাজ শরিফ জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন— এমন ঘোষণা আসার পর পাকিস্তানের রাজনীতিতে নওয়াজ শরিফের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। নওয়াজ শরিফ রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন কি না বা প্রধানমন্ত্রী না হলে দলে নওয়াজ শরিফের ভূমিকাই বা কী হবে— প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও।

এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন নওয়াজ শরিফের মেয়ে পিএমএল-এনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মরিয়ম নওয়াজ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে মরিয়ম জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দলীয় প্রার্থী না হওয়ায় পিএমএল-এনের সর্বোচ্চ নেতা নওয়াজ শরিফ রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন বলে যে ধারণা করা হচ্ছে তা মোটেও ‘সত্য নয়’।

দল ক্ষমতায় গেলে নওয়াজ শরিফই (মাঝে) প্রধানমন্ত্রী হবেন বলে ধারণা ছিল সব মহলে। ছবি : রয়টার্স

নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে না থাকলেও সরকার যে কার্যত তার নির্দেশনাতেই চলবে— এমন ইঙ্গিত মিলেছে মরিয়ম নওয়াজের কথায়। যেমনটা দেখা গিয়েছিল মিয়ানমারে অং সান সু চির ক্ষেত্রে।

এক্স পোস্টে মরিয়ম লিখেছেন, “আগামী পাঁচ বছরে তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে কেবল অংশগ্রহণই করবেন না, একইসঙ্গে কেন্দ্র ও পাঞ্জাবে তার সরকারের নেতৃত্বও দেবেন।”

নওয়াজকন্যা আরও জানান, নওয়াজ শরিফ “তার নির্বাচনী বক্তব্যে এটা স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি জোট সরকারের অংশ হবেন না।”

মিয়ানমারে ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে অং সান সু চির দল জয়ী হলেও সরকারপ্রধানের দায়িত্বে দেখা যায়নি সু চিকে। তার বদলে তিনি হয়েছিলেন স্টেট কাউন্সেলর, যদিও সরকার তার নেতৃত্বেই চলত। পাকিস্তানেও নওয়াজ শরিফকে অনেকটা তেমন ভূমিকাতেই দেখা যাবে— মরিয়মের এক্স পোস্টে এমন ইঙ্গিত সুস্পষ্ট।

প্রত্যাবর্তনের রাজা

১৯৪৯ সালে লাহোরের এক বিশিষ্ট শিল্পপতির পরিবারে জন্মগ্রহণ করা নওয়াজ শরিফকে পাকিস্তানের রাজনীতিতে ‘প্রত্যাবর্তনের রাজা’ বলা যায়। কারণ এর আগেও তিনি নাটকীয়ভাবে ক্ষমতার কেন্দ্রে ফিরেছেন।

১৯৯০ সালে তিনি প্রথম পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন, কিন্তু ১৯৯৩ সালে বরখাস্ত হন। এরপর সরকার গঠন করেন তৎকালীন বিরোধী নেতা বেনজির ভুট্টো।

১৯৯৭ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন নওয়াজ। এই মেয়াদে দায়িত্বে থাকাকালেই ১৯৯৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি। এরপর ২০১৩ সালে ফের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়ে তৃতীয় মেয়াদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়ে রেকর্ড গড়েন।

তবে ক্ষমতার তৃতীয় মেয়াদে নওয়াজ শরিফ স্থিরভাবে দেশ চালাতে পারেননি। রাজধানী ইসলামাবাদে বিরোধীদের ছয় মাসের অবরোধ থেকে শুরু করে দুর্নীতির অভিযোগে আদালতের রায়ের মাধ্যমে শেষ হয় তার তৃতীয় মেয়াদ। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে সুপ্রিম কোর্ট তাকে অযোগ্য ঘোষণা করলে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন।

এরপর ২০১৮ সালের জুলাইয়ে আদালত তাকে দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। তবে দুই মাস পরই সেই দণ্ড স্থগিত করে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। মামলাটিও স্থগিত করা হয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ফের তাকে দুর্নীতির মামলায় জেলে পাঠানো হয়। সৌদি আরবে তার পরিবারের ইস্পাত মিলের মালিকানা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে করা হয়েছিল সেই মামলায়।

এরপর ২০১৯ সালে চিকিৎসার জন্য জামিন নিয়ে লন্ডনে চলে যান নওয়াজ। গত অক্টোবরে পাকিস্তানে ফিরে আসার আগ পর্যন্ত চার বছর তিনি লন্ডনের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তানের মাটিতে অনুপস্থিত থাকা সত্ত্বেও নওয়াজ শরিফকে গত ৩৫ বছর ধরে দেশটির শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত