মোস্তাফিজ-তাসকিন-শরিফুল বাংলাদেশ বোলিং লাইনের তিন পিলার। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বা টুর্নামেন্টে তিনজনের মধ্যে দুজন ছিলেন বোলিং আক্রমণের মূল শক্তি। বিশ্বকাপের ঠিক আগে ইনজুরিতে না পরলেও শরিফুলকেও একই দায়িত্ব নিতে হতো। শরিফুল বাদে বাকি দুজনের বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স ছিল বেশ ভাল। কিন্তু সেই তারাই এখন বিবর্ণ।
এ তিন পেসার বর্তমানে খেলছেন শ্রীলঙ্কার প্রিমিয়ার লিগে। লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে তাদের পারফরম্যান্স বলার মতো নয় একদমই। হতাশাজনক পারফরম্যান্সের জন্য একাদশে জায়গা হারিয়েছেন তিনজনই। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রে মেজর লিগ ক্রিকেট খেলা সাকিবও ফর্মহীন। এই প্রথম দেশের বাইরে একসঙ্গে খেলতে যাওয়া সব বাংলাদেশী ক্রিকেটারই আছেন অফফর্মে।
পাঁচ ক্রিকেটারের কি অবস্থা?
লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে খেলা চার বাংলাদেশীর তিনজনই বোলার, একজন ব্যাটার। তাওহিদ হৃদয়ের অবস্থা আরও করুণ। এই ব্যাটার ২ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন। ১ ইনিংস ব্যাট করতে নেমে করেছেন ১ রান। আরেকটি ম্যাচে ব্যাট করতে নামার প্রয়োজন হয়নি তার। ডাম্বুলা সিক্সার্স তাদের আর ৩ ম্যাচে হৃদয়কে খেলায়নি।
অথচ গত মৌসুমে মাত্র ৬ ম্যাচ খেলে লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে অন্যতম সেরা ব্যাটার ছিলেন হৃদয়। এক ফিফটিতে করেছিলেন ১৫৫ রান। স্ট্রাইকরেট ৩৮.৭৫। অথচ এবার ব্যাটারদের তালিকায় তাসকিন, মোস্তাফিজদের নিচে অবস্থান করছেন হৃদয়।
একই দলে খেলা মোস্তাফিজুর রহমানকে খেলানো হয়েছে চার ম্যাচ। কিন্তু অসম্ভব রকম বাজে বল করছেন মোস্তাফিজ। ৪ ম্যাচে তার ঝুলিতে আছে ৫ উইকেট। ৩০ রানে ২ উইকেট সর্বোচ্চ। ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ১১.০৬ করে।
ক্যান্ডি ফ্যালকনের হয়ে খেলছেন শরিফুল। বাকিদের চেয়ে একটু দেরিতে ডাক পেয়েছিলেন এই পেসার। বাংলাদেশীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। কিন্তু সবচেয়ে খরুচেও এই বাঁহাতি। ওভারপ্রতি ১১.৬১ গড়ে রান দিয়ে নিয়েছেন মাত্র ৪ উইকেট। সেরা ৩২ রানে ২টি।
কলম্বো স্ট্রাইকার্সের হয়ে খেলা তাসকিন ৫ ম্যাচের মধ্যে খেলেছেন ৩টি। তার শিকার ৪ উইকেট। ওভারপ্রতি কিছুটা কম ১০.২৭ রান দিয়েছেন এই পেসার। সেরা ৪৫ রানে ২টি। তবে বাংলাদেশীদের মধ্যে তাসকিনের ব্যাটে ছক্কা ছিল। এক ছক্কা ও চারে এক ম্যাচে ১১ রান করেছিলেন তাসকিন।
যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি মেজর লিগ ক্রিকেটে কলকাতা নাইট রাইডার্সের দল লস অ্যাঞ্জেলেস নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলা সাকিবের পারফরম্যান্সেও দ্যুতি নেই। দলটির হয়ে তিন ম্যাচের সবকটিতে খেলে ৬০ রান করেছেন। সর্বোচ্চ আছে ৩৫ আর নিয়েছেন মাত্র ১টি উইকেট। এই লিগের ২৫ জন বোলারের মধ্যে সর্বনিন্ম অবস্থানে আছেন সাকিব। ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ১১.৭১ করে।
বাজে ফর্মের কারণ কি?
মে মাসের শুরুতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ খেলেছিল বাংলাদেশ। ওই সিরিজ খেলার পরপরই বিশ্বকাপের দেশ যুক্তরাষ্ট্র? পাড়ি জমান ক্রিকেটাররা। সেখানে স্বাগতিক দলের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে হয়। ওই সিরিজের পর বিশ্বকাপের কঠিন ব্যস্ততা।
লিগ পর্বে দারুণ পারফরমের সুবাদে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বার সুপার এইটে ওঠে বাংলাদেশ। সেখানে আরও তিন ম্যাচ খেলতে হয়েছে ক্রিকেটারদের। সব মিলিয়ে দুই মাসের ক্রিকেট ব্যস্ততা শেষে ২৮ জুন দেশে পা রাখেন ক্রিকেটাররা।
এরপর বিসিবি থেকেই দুই সপ্তাহের বিশ্রাম দেয়া হয়েছে। কিন্তু যারা বিদেশি লিগে ডাক পেয়েছেন তাদের সবাইকেই দেয়া হয় এনওসি। তাই মাত্র দুইদিনের বিশ্রাম শেষে আবার ক্রিকেটে নেমে পড়তে হয় হৃদয়, তাসকিন, মোস্তাফিজ, শরিফুল ও সাকিবদের। টানা খেলার ধকলেই পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়তে পারে তাদের।
চিন্তা এখন জাতীয় দলের খেলা নিয়ে
১৯ তারিখ থেকে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সিরিজ সামনে রেখে ক্যাম্প শুরু করবে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা। সেখানে লাল বলে না খেলার কারণে থাকবেন না হৃদয়, মোস্তাফিজ। কিন্তু শরিফুল ও সাকিবকে তো থাকতেই হবে যেহেতু তারা এখনও টেস্ট খেলছেন। টানা টি-টোয়েন্টি খেলার পর টেস্টের ক্যাম্পে তাদের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। আবার ক্যাম্পে শতভাগ দেয়া তাদের শরীরের জন্য কত চাপের সেটাও একটা প্রশ্ন।
আবার তাসকিন টি-টোয়েন্টি লিগগুলোতে খেলতে না পারায় আপাতত টেস্ট না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। তাই এখন বিদেশী লিগে খেলার ছাড়পত্র দেয়া হয় তাসকিনকে। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে তাসকিন ফিরবেন কিনা তা নিয়ে এই পেসারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে বিসিবিকে। কিন্তু ইনজুরির কারণ দেখিয়েই যখন টেস্ট থেকে বিশ্রামে থাকলেন, তখন বিশ্বকাপের পর বিদেশী লিগে খেলার ধকল কি করে সামলাচ্ছেন তাসকিন?
পরিশেষে
বিদেশী লিগে ভালো পারফরম করলে এমনিতেও চাঙা থাকতেন ক্রিকেটাররা। কিন্তু টানা খেলার ধকলে এখন পারফরম্যান্সের প্রভাব পড়ছে তাদের। এবার এই লিগগুলো থেকে ফিরে জাতীয় দলকে শতভাগ দেয়া কতটা সম্ভব এই ক্রিকেটারদের জন্য!