স্পেনের মতো টানা তিন বৈশ্বিক শিরোপা জেতার ইতিহাস গড়েছে আর্জেন্টিনা। জয়সূচক গোল করেছেন লাউতারো মার্তিনেজ। ম্যাচ শেষে কাঁদছেন এই ফরোয়ার্ড। এ যে জয়ের কান্না তা আলাদা করে বলার কিছু নেই। কিন্তু লাউতারোর এই কান্নার পেছনেও আছে এক গল্প। ফিরে আসার গল্প।
গনজালো হিগুয়েনকে কোন আর্জেন্টিনা সমর্থকেরই ভোলার কথা নয়। গোল মিসের ধারাবাহিকতা ছিল তার পায়ে। তার মিসে ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হারিয়েছিল আর্জেন্টিনা। হিগুয়েনের ক্যারিয়ার জুড়ে ওই গোল মিসটি আলাদা রকম কালিমা হয়ে আছে। সেই হিগুয়েনের কাতারেই প্রায় চলে যাচ্ছিলেন লাউতারো মার্তিনেজ।
২০২২ বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে গোলের সুযোগ তিনিও পেয়েছিলেন। কিন্তু লক্ষ্য ভেদ করতে পারেননি একাধিক চেষ্টাতেও। সেই ফাইনালের পর সেরা একাদশের স্ট্রাইকার তার জায়গা হারান আর্জেন্টিনা দলে। মার্তিনেজের জায়গায় সুযোগ পেয়ে যান জুলিয়ান আলভারেজ।
লাউতারো এরপর থেকে বদলী হয়েই মাঠে নামতেন। কিন্তু গোল পেয়েছেন। নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করেছেন। এই সময়ে আর্জেন্টিনা ফরোয়ার্ডের সময়কে আলোকিত করে ইন্তার মিলান। ইতালিয়ান ক্লাবটির হয়ে দুর্দান্ত খেলেছেন দুটি মৌসুম।
২০২২ বিশ্বকাপের পর টানা দুই মৌসুমে ইতালিয়ান লিগে গোল করায় সফল ছিলেন লাউতারো। ২০২২-২৩ মৌসুমে ৩৮ ম্যাচে করেছেন ২১ গোল। আর পরের মৌসুমে ৩৩ ম্যাচে ২৪টি। লাউতারোর ফ্রি ফ্লোয়িং স্কোরিং স্কিল ইন্তারকে সবশেষ মৌসুমের শিরোপাও এনে দেয়।
ইন্তারের হয়ে ভালো খেলে নিজেকে নতুন ভাবে চিনিয়েছেন লাউতারো। ২০২২ বিশ্বকাপের হতাশা ভুলে সে বছরই ফিনালিসিমা থেকে গোলের শুরু তার। এরপর কলম্বিয়া ম্যাচ পর্যন্ত মোট ২০ লড়াইয়ের ৮টিতেই গোল করেছেন মার্তিনেজ। এই সময়ে তার গোল ১০টি।
ফিনিশিংয়ে ভুল এড়িয়ে নতুন ভাবে ফিরেছেন এই ফরোয়ার্ড। নিজেকে বদলেছেন। মাথা ঠান্ডা রাখাও শিখেছেন। তবুও যেন কিছু একটা বাকি ছিল। তা হল ফাইনালে গোল। ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালে গোল মিসের প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে যে!
সেই প্রায়শ্চিত্যই করলেন লাউতারো। তার ১১২ মিনিটের গোলে কলম্বিয়াকে হারিযে কোপা আমেরিকা জিতলো আর্জেন্টিনা। দলকে নিজে গোল করেই শিরোপা জেতালেন। লাউতারো দায় শোধ করেছেন। হিগুয়েনের মতো গোল মিসের বঞ্চনায় পড়তে হয়নি তাকে। সেই আনন্দেই হয়তো রোববার কেঁদেছেন আর্জেন্টিনা ফরোয়ার্ড।
আরেকটি কারণেও চোখের জল ঝরতে পারে লাউতারোর। তা অবশ্য দুঃখের। এই আসরে কোয়ার্টার ফাইনালে শুরুর একাদশে ছিলেন। ওই ম্যাচে নিজের সেরাটা দিতে পারেননি। কিন্তু বদলী নেমে বরাবরই গোল করছেন ও আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নিয়েছেন।
সেরা একাদশের জায়গাটা যে কারণেই হোক ফিরে পাচ্ছেন না। এটাও লাউতারোর কান্নার কারণ হতে পারে। ৫ গোল করে টুর্নামেন্টর সেরা স্কোরার হয়েছেন। পেয়েছেন গোল্ডেন বুট। এবার হয়তো নিজের জায়গাটা ফিরে পাবেন লাউতারো।