Beta
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫

ফিরছেন পুলিশ সদস্যরা, সক্রিয় হচ্ছে থানা

হাতিরঝিল থানায় এক সেবাপ্রত্যাশীকে সেবা দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
হাতিরঝিল থানায় এক সেবাপ্রত্যাশীকে সেবা দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

তীব্র ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্যাপক হামলার শিকার হয় দেশের বেশিরভাগ থানা। চালানো হয় ভাঙচুর, লুটপাট; ধরিয়ে দেওয়া হয় আগুন। কোথাও কোথাও পুলিশ সদস্যরা হত্যারও শিকার হন।

এসব সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে জীবনরক্ষায় কর্মস্থল ছেড়ে চলে যান পুলিশ সদস্যরা। ফলে দেশে বন্ধ হয়ে যায় পুলিশি সেবা। বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ।

পুলিশ সদস্যরা দায়িত্বে না থাকায় দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। প্রায় প্রতি রাতেই ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে সংঘবদ্ধ ডাকাতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিপদে পড়লে কার কাছে যেতে হবে, তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছে সাধারণ মানুষ।

এ অবস্থায় গত বুধবার কর্মস্থল ত্যাগ করা পুলিশ সদস্যদের কাজে ফিরতে নির্দেশ দেন নতুন আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম। এরপর ধীরে ধীরে কাজে যোগ দিতে শুরু করেছেন পুলিশ সদস্যরা, চালু হতে শুরু করেছে থানাগুলোর কার্যক্রম।

তিন দিন বন্ধ থাকার পর শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শুধুমাত্র ঢাকাতেই সেনাবাহিনীর নিরাপত্তায় ২৫টির বেশি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়াও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নিরাপত্তায় দেশের সীমান্তবর্তী ২১ থানা স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করেছে।

প্রাথমিকভাবে যেসব থানায় হামলা হয়নি বা কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেসব থানার স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। তবে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে যেসব থানায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেগুলোয় এখনও কাজ শুরু হয়নি।

ঢাকায় স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হওয়া থানাগুলোর মধ্যে একটি শাহবাগ। শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে থানায় গিয়ে দেখা যায় সেখানে সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছেন তিন পুলিশ সদস্য।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে হাতিরঝিল থানায় গিয়ে দেখা যায় সেখানেও স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে। থানার বাইরে নিরাপত্তার জন্য অবস্থান নিয়ে আছেন সেনা সদস্যরা। আর ভেতরে নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরেই কাজ করছেন পুলিশের দুই সদস্য। সেসময় সাধারণ ডায়েরি করতে এক প্রবীণকে থানায় প্রবেশ করতে দেখা যায়।

কার্যক্রম শুরু হয়েছে তেজগাঁও থানারও। যার নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি সেনা ও আনসার সদস্যরাও কাজ করছেন। 

তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন সাংবাদিকদের বলেন, “এখন আমার হৃদয় ভারাক্রান্ত। পুলিশে কাজ করছি আজ ২৩ বছর। একসঙ্গে কাজ করেছি, কিছুদিন আগেও আমার থানায় ছিল সেসব সহকর্মীদের অনেকেই আর নেই। সবকিছু মিলিয়ে আমার পুরো পুলিশ পরিবার ট্রমাটাইজড।

“কিন্তু আমরা জনগণের প্রয়োজনেই কাজ করি। তাই আজকেও ফিরে আসা জনগণের জন্যই। জনগণ প্রয়োজন বোধ করেছে, পুলিশ না থাকলে কী হচ্ছে, সেই প্রয়োজনেই ফিরে আসা।”

অন্যদিকে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের শিকার যাত্রাবাড়ি থানা এখনও কার্যক্রম শুরু উপযোগী হয়ে ওঠেনি।

দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, অগ্নিকাণ্ড ও ভাঙচুরের শিকার থানাভবন পরিষ্কারে কাজ করছেন শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে থানা থেকে লুট হওয়া বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করে সেনা সদস্যদের কাছে জমাও দিচ্ছেন তারা।

কার্যক্রম শুরু হয়নি পল্টন থানায়ও। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত এই থানার প্রধান ফটক বন্ধ দেখা যায়। সেখানে কোনও সেনা সদস্যদেরও পাহারা দিতে দেখা যায়নি।

সীমান্তবর্তী ২১ থানার কার্যক্রম শুরু

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) রংপুর ও যশোর রিজিয়নের সার্বিক তত্ত্বাবধানে রংপুর রেঞ্জের সীমান্তবর্তী ১১টি থানা এবং খুলনা রেঞ্জের সীমান্তবর্তী ১০টি থানার স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে বিজিবি।

সেখানে বলা হয়, চলমান পরিস্থিতির আলোকে সীমান্তবর্তী জনপদে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে জনমনে আস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিজিবি সীমান্ত ও সীমান্তের আশেপাশের জনপদসহ সীমান্তবর্তী থানাগুলোয় নিরাপত্তা জোরদার করেছে। থানার স্বাভাবিক কার্যক্রমেও গতি ফিরতে শুরু করেছে। জনগণ বিভিন্ন সেবার জন্য থানায় যাওয়া-আসা শুরু করেছে।

বিজিবির নানা কার্যক্রমের ফলে এরই মধ্যে সীমান্ত ও সীমান্তবর্তী জনপদে শৃঙ্খলা এবং জনমনে স্বস্তি ফিরে আসতে শুরু করেছে বলেও সেখানে উল্লেখ করা হয়।

যেসব থানায় কাজ শুরু হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে-দিনাজপুরের হাকিমপুর থানা, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম থানা, ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর থানা, পঞ্চগড়ের আটোয়ারী ও তেঁতুলিয়া থানা, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি, রৌমারী, চর-রাজিবপুর, কচাকাটা ও ঢুষমারা থানাসহ ১১টি থানা।

খুলনা রেঞ্জের সীমান্তবর্তী যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানা, সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ, দেবহাটা ও কলারোয়া থানা, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা ও জীবননগর থানা, মেহেরপুর সদর, মুজিবনগর ও গাংনী থানা এবং কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানাসহ মোট ১০টি থানা।

উপকূলের ২৯ থানার নিরাপত্তায় নৌবাহিনী

দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ২৯ থানার কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে নৌ-বাহিনীকে নিয়োজিত করা হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপকূলীয় অঞ্চলের ভোলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন, মনপুরা, তজুমদ্দিন, দক্ষিণ আইচা, চরফ্যাশন, দুলারহাট, শশীভূষণ, বরগুনা সদর, বামনা, বেতাগী, তালতলী, পাথরঘাটা, মোংলা, রাঙ্গাবালী, খুলনা সদর, খালিশপুর, লবণচরা, হরিণটানা, দিঘলিয়া, কয়রা, দাকোপ, সন্দ্বীপ, মহেশখালী, হাতিয়া, কুতুবদিয়া থানার স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা ও নিরাপত্তা দিতে নিয়োজিত আছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

বাংলাদেশে থানার সংখ্যা অন্তত ৬৫০টি। এখন পর্যন্ত যার বড় অংশের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

এছাড়া দেশের সব থানায় কবে নাগাদ স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব সে বিষয়ে জানতে পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা পুলিশ সুপার ইনামুল হক সাগরকে কয়েকবার টেলিফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। 

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত