ধরা যাক ১৯৮৬’র বিশ্বকাপে ছিল ভিএআর। ডিয়েগো ম্যারাডোনার “হ্যান্ড অব গড” কি তবে বিখ্যাত হতো! কখনও না। উল্টো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে করা ওই গোলটি বাতিল হয়ে যেত হ্যান্ডবল আইনে। আধুনিকায়ন ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ফুটবলের বদলে যাওয়া, তা মোটেও ভালো লাগে না উরুগুয়ের কোচ মার্সেলো বিয়েলসার।
এক সময়ে রেফারির সিদ্ধান্তই ফুটবলে শেষ কথা ছিল। মাঠে রেফারির ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে তুমুল আলোচনা হতো ম্যাচ শেষে। তর্ক-বিতর্ক বা উত্তেজনা শেষে ম্যাচের ফল মেনে নেয়া ছাড়া উপায় ছিল না। কিন্তু এখন চিত্র একেবারে ভিন্ন। ফুটবলে যুক্ত হওয়া ভিডিও অ্যাসিস্টেন্ট রেফারিং প্রযুক্তির মাধ্যমে দেখে একজন দর্শকই সিদ্ধান্ত দিয়ে দিতে পারেন।
ভিএআর-এ ফুটবলের আসল আবেদন নষ্ট হওয়ায় মনক্ষুন্ন বিয়েলসা। বর্ষীয়ান এই কোচ বলেছেন, “আগে যে সিদ্ধান্তটি পরিবর্তন অসম্ভব ছিল, প্রযুক্তির সুবিধায় তা এখন চূড়ান্ত অনুমেয় হয়ে উঠেছে। এটা ফুটবলে অনেক ক্ষতি করেছে। ফুটবলের নিজস্বতা ছিল, এখন অনুমেয় হয়ে ওঠায় খেলাটি তার আকর্ষণ হারিয়েছে। আমি নিশ্চিত ফুটবল ক্রমে নিম্নগামী।”
শুধু তাই নয়, আরও একটি কারণে মন খারাপ বিয়েলসার। লাতিন আমেরিকার উদায়মান তরুণদের হারানো মেনে নিতে পারছেন না তিনি। পালমেইরাসের হয়ে খেলা ১৭ বছরের ব্রাজিলিয়ান তরুণ এন্দ্রিকের ইউরোপ পাড়ি জমানোর দিকে আঙ্গুল তুলেছেন বিয়েলসা। এভাবে লাতিন আমেরিকার আসল আনন্দ (ফুটবল) হারিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
বিয়েলসা অতীতের উদাহরণ টেনে বলেছেন, “১৯৯২-তে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে বার্সেলোনার বিপক্ষে জিতেছিল সাও পাওলো। ওই দলে রাই, কাফু, পিনতাদো, মুলার, অ্যান্তোনিও কার্লোসরা খেলেছেন। সবাই ইউরোপে খেলা ফুটবলার। কিন্তু ওরা ইউরোপে গিয়েছিল দুটি কোপা লিবার্তাদোরেস খেলার পর। কিন্তু এখন ১৭ বছর বয়সী এন্দ্রিক ইউরোপ চলে যাচ্ছে। কি লজ্জা। সমালোচনা করা ছাড়া কোন উপায় নেই।”
ব্রাজিলের বিপক্ষে কোপা কোয়ার্টারের আগে সংবাদ সম্মেলনে বিয়েলসা দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল নিয়ে তার নিজস্ব দর্শনের কথা বলেছেন। ওখান থেকে ইউরোপে বিক্রি হয় ফুটবল প্রতিভা। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মতো দক্ষিণ আমেরিকান দেশগুলোর বৈদেশিক মূদ্রা আয়েরও ভাল উৎস এই ফুটবলার বিক্রি। ওখানে এত প্রতিভার ছড়াছড়ি পেছনে কিছু কারণ দেখেন উরুগুয়ের এই আর্জেন্টাইন কোচ, “দক্ষিণ আমেরিকায় ফুটবল এত জনপ্রিয় কেন ? কারণটা হলো এখানকার গরিব মানুষের সুখে থাকার সুযোগ খুব কম। টাকা দিয়ে সুখ কিনতে হয়। একমাত্র ফুটবলটাই ফ্রি, তাই এটা বেশ জনপ্রিয়।”