Beta
মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪

বকেয়া না দিলে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দেওয়া বন্ধ, হুমকি আদানি গ্রুপের

Adani Power
[publishpress_authors_box]

অর্থ বকেয়া পড়ায় তাগাদা দিয়ে আসছিল আদানি গ্রুপ; এবার বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিই দিল। এই হুমকি কার্যকর হলে বাংলাদেশে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ দেড় হাজার মেগাওয়াট কমে যাবে।

টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, বকেয়া বিলের অর্থ ৭ নভেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করতে বাংলাদেশ সরকারকে বলেছে আদানি গ্রুপ। তা না করলে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেবে তারা।

ভারতের সংবাদপত্রটিতে রবিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আদানি গ্রুপ এরই মধ্যে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশের কাছে ৮৫ কোটি ডলার পাওনা হয়েছে ভারতের এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর। এর আগে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বকেয়া পরিশোধে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল তারা। পাশাপাশি বকেয়া টাকা পরিশোধের নিশ্চয়তা পেতে গ্রুপটি বাংলাদেশের কাছে ১৭ কোটি ডলারের লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) চেয়েছিল।

পিডিবি যদিও কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খোলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এটি বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি অনুযায়ী ছিল না। এজন্য ডলার সংকটকে অন্যতম কারণ দেখানো হয়েছিল।

এর পরই আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ড ৩১ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে অর্ধেকে আনে। এতে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সংকট বেড়ে যায়।

জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় অবস্থিত ১৪৯৬ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আদানি গ্রুপ বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। কিন্তু গত শুক্রবার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে মাত্র ৭২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।

বাংলাদেশে এখন দৈনিক ১৩ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সেই পরিমাণ বিদ্যুৎই উৎপাদিত হয়।

একক উৎস হিসাবে আদানি পাওয়ার থেকেই সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ যোগ হয় বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে। এর পরেই আছে পায়রা (১২৪৪ মেগাওয়াট), রামপাল (১২৩৪ মেগাওয়াট) ও এসএস পাওয়ার (১২২৪ মেগাওয়াট)।

বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানির রামপাল এবং এসএস পাওয়ারের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে কয়লা সংকটের কারণে এরই মধ্যে উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার দাবি, তাদের একটি সূত্র জানিয়েছে, কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র এরই মধ্যে জ্বালানি ক্রয় কমিয়ে দিয়েছে। কারণ সময়মতো অর্থ দিতে পারছে না তারা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অর্থ দিতে দেরি হওয়ায় অনেক বকেয়া জমে গেছে।

অক্টোবরে আদানি পাওয়াকে চুক্তি অনুসারে ৯ কোটি ডলার দিয়েছে বাংলাদেশ। অবশ্য আগের মাসগুলোতে ২ থেকে ৫ কোটি ডলার করে দেওয়া হয়। অথচ চুক্তি অনুযায়ী মাসে কথা ছিল ৯ থেকে ১০ কোটি ডলার দেওয়ার। আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ড প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ১০-১২ টাকায় সরবরাহ করে। এর খরচ ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা কেনার সঙ্গে যুক্ত।

আদানি এনিয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেনি। তবে প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা টাইমস অব ইন্ডিয়াকে জানিয়েছিলেন যে, তারা সমস্যাটি সমাধানের বিষয়ে আশাবাদী। কিন্তু সময় মতো বিল না দেওয়া এবং বিষয়টি পরিষ্কার না করায়, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে কঠোর অবস্থান নিতে হয়। কারণ তাদের ঋণদাতাদের অর্থ পরিশোধ করতে হবে।

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের সিদ্ধান্ত আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ডের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করবে। কারণ এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির একমাত্র ক্রেতা হলো বাংলাদেশ। এটিকে তার ৮০০ মেগাওয়াটের দুইটি ইউনিটের মধ্যে একটি বন্ধ রাখতে হয়েছে। কেন্দ্রটি বাংলাদেশ থেকে মাসে ৯০ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার পেলে বছরে ১ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারবে।

বাংলাদেশে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। ওই ঘটনার পরেই সতর্ক আদানি গ্রুপ অভ্যন্তরীণ বাজারে বিদ্যুৎ বিক্রির সুযোগ খুঁজতে শুরু করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটিকে স্থানীয় গ্রিডে সংযুক্ত হতে বলা হয়।

শেখ হাসিনার পতন হওয়ার পরদিন ৬ আগস্টই আদানি গ্রুপ জানায়, তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ বাবদ বাংলাদেশের কাছে পাবে ৮০ কোটি ডলার বা প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। তবে চুক্তি অনুযায়ী তারা বিদ্যুৎ সরবরাহে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এমনটাও বলা হয়েছিল তখন গ্রুপটির পক্ষ থেকে।

গত দেড় দশকে শেখ হাসিনার সরকার শতাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স দিয়েছে, চুক্তি করেছে। গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, দরকষাকষি ছাড়াই প্রতিটি চুক্তি করা হয়েছিল বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে। এজন্য প্রতিটি চুক্তিতেই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণব্যয় ও ক্যাপাসিটি চার্জ ধরা হয়েছে অনেক বেশি।

তবে আওয়ামী লীগের আমলে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয় আদানি পাওয়ারের সঙ্গে করা চুক্তিটি নিয়ে। ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় নির্মিত আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১,৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার জন্য ২৫ বছরের চুক্তি করে আওয়ামী লীগ সরকার, যা করা হয় সর্বোচ্চ গোপনীয়তা অনুসরণ করে।

ভারতের বিতর্কিত শিল্পপতি গৌতম আদানির মালিকানাধীন বহুজাতিক কোম্পানি আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বাজার দরের চেয়ে বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনারও অভিযোগ রয়েছে।

রাষ্ট্রক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিদ্যুৎ খাতের এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখছে।

আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তিতে শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়গুলো কীভাবে সম্পাদন করা হয়েছে, তাতে কোনও ত্রুটি ছিল কি না, শুল্ক পরিহার বা প্রত্যাহারের বিষয় রয়েছে কি না; এমন আরও প্রশ্ন সামনে রেখে তদন্তে নামছে বাংলাদেশের কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত