চরম নাটকীয়তায় জয় না এলে জয়ের আনন্দই থাকে না। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম জয়ে ঠিক তাই হয়েছে। মিউজিক্যাল চেয়ারের মতো চিত্র বদলাতে থাকা ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ২ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। হারের ভয় জয় করে মাথা উঁচু করে ১৬ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছেড়েছেন মাহমুদউল্লাহ।
শ্রীলঙ্কার করা ৯ উইকেটে ১২৪ রানের জবাবে সহজ জয়ের পথেই ছিল বাংলাদেশ। ১২ ওভারে ৪ উইকেটে ছিল ৯২ রান। ওই অবস্থা থেকে পরের চার ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ কঠিন করে তোলে লাল-সবুজরা। ১৯তম ওভারে মাহমুদউল্লাহর ছক্কায় জয় নিশ্চিত হয়। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর টানা দ্বিতীয় বৈশ্বিক আসরে লঙ্কানদের হারাল বাংলাদেশ।
টার্নিং পয়েন্ট
১৪ ওভারের দিকে ১০০ রান ছিল শ্রীলঙ্কার। ১৫তম ওভারে রিশাদ হোসেনের জোড়া উইকেট ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়। লঙ্কানদের পাওয়ার হিটার চারিথ আসালাঙ্কা ছিলেন তখন উইকেটে। ২০২১ বিশ্বকাপের ম্যাচে আসালাঙ্কার হাফসেঞ্চুরি বাংলাদেশের হারের কারণ ছিল। সেই আসালাঙ্কাকে প্রথম বলেই ফেরান রিশাদ। বিশ্বকাপে তার প্রথম উইকেট।
রিশাদের লেগ স্পিনে বড় স্লগ সুইপ করেন আসালাঙ্কা। ডিপ স্কয়ারে সাকিব আল হাসান ছিলেন ঠিক জায়গায়। কিন্তু বল হাত ফসকে যাচ্ছিল তার। দ্বিতীয় চেষ্টায় ক্যাচ লুফে নেন। পরের বলে লঙ্কান অধিনায়ক ভানিন্দু হাসারাঙ্গাকে লেগ স্পিনেই পরাস্ত করেন রিশাদ। অর্থডক্স লেগ স্পিনে ডিফেন্স করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন। দারুণ ক্যাচে রিশাদের দ্বিতীয় উইকেট নিশ্চিত করেন সৌম্য।
অবশ্য পরের বলে হ্যাটট্রিকটি করতে পারেননি যে কোন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে খেলা প্রথম স্পেশালিস্ট লেগ স্পিনার। তবে দলের জয়ের টার্নিং পয়েন্টটি ১৫তম ওভারেই এনে দেন রিশাদ।
হৃদয়ের তিন ছক্কা
টার্নিং পয়েন্টের হিসাব করলে রিশাদের জোড়া উইকেটের চেয়ে কম যায় না তাওহিদ হৃদয়ের তিন ছক্কা। নিজেদের ইনিংসে ১১তম ওভার শেষে ৩ উইকেটে ৭৩ রান ছিল বাংলাদেশের। ১২ ওভারটিতে অবিশ্বাস্য বিধ্বংসী ছিলেন হৃদয়।
হাসারাঙ্গাকে টানা তিন বলে তিনটি ছক্কা মারেন হৃদয়। দুটি মিডউইকেটর উপর দিয়ে প্রায় একই ভাবে। আর তৃতীয়টি ইনসাইড আউট করে কাভারের ওপর দিয়ে বাউন্ডারী ছাড়া করেন।
পরের বলে ২০ বলে ৪ ছক্কায় ও ১ চারে ৪০ রান করে হৃদয় এলবিডব্লিউ হলেও তিন ছক্কায় ওই ওভারটিতে ১৯ রান এনে দিয়েছেন এই ব্যাটার। তাতে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান ৫২ থেকে নেমে আসে ৩৩-এ।
লিটনের গুরুত্বপূর্ণ ৩৬
তাওহিদ হৃদয়ের ক্যামিওকে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের জয়ের কারণ বলা যেতেই পারে। তাই বলে লিটন দাশের ২ চার ও ১ ছক্কায় ৩৮ বলে ৩৬ রানকে কোন ভাবেই ভুলে যাওয়া যাবে না। ২৮ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর লিটনের ঠান্ডা মাথার ওই হিসেবি ইনিংসটি না থাকলে বাংলাদেশের জয় কঠিন হতো।
হৃদয় এক প্রান্তে সাহস নিয়ে খেলছিলেন। লিটন অপরপ্রান্তে উইকেট ধরে রাখায় হৃদয়ের ব্যাট করা সহজ হয়। ৩৮ বলে দুজনের ৬৩ রানের জুটিও দাঁড়িয়ে যায়। পাশাপাশি এ ইনিংস দিয়ে রানে ফিরলেন লিটন। ছয় ইনিংস আগে দেশের মাটিতে তার সর্বোচ্চ রানও ছিল ৩৬। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই।
ভয় ছিল সাকিবের আউট
হৃদয় ও লিটনকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের জন্য রান তাড়া কঠিন করে তোলেন হাসারাঙ্গা। ওই সময় রানও সহজে পাচ্ছিলেন না সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ। ১৩-১৬ এই চার ওভারে আসে মাত্র ১৬ রান। ১৭তম ওভারে পাথিরানার বলে আপার কাট করতে গিয়ে থার্ড ম্যানে ধরা পড়েন সাকিব।
১৪ বলে ৮ রান করে এমনিতেও সময় নিচ্ছিলেন সাকিব। তখন রান করাও কঠিন ছিল। কিন্তু তার আউট পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য আরও কঠিন করে দেয়। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে জুটি গড়ার পরিবর্তে সাকিবকে হারিয়ে হারের ভয়ে পড়ে বাংলাদেশ।
মাহমুদউল্লাহর ছক্কা
নুয়ান থুসারার ১৮তম ওভারটিতে জোড়া উইকেট হারায় বাংলাদেশ। রিশাদ ও তাসকিন ফিরলে শেষ দুই ওভারে বাংলাদেশের জয়ের প্রয়োজন দাঁড়ায় ১৪ রানের। ওই সময় দাশুন শানাকার ১৯তম ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা মেরে চাপ উড়িয়ে দেন মাহমুদউল্লাহ।
মাহমুদউল্লাহর এই ছক্কা মনে করিয়ে দেয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিদাহাস ট্রফির সেই ছক্কাকে। ওই টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে ইনিংসের শেষ ২ বলে জয়ের জন্য ৬ রানের দরকার ছিল বাংলাদেশের। পঞ্চম বলটিতে ছক্কা মেরে জয় এনে দেন মাহমুদউল্লাহ। এবার দাশুন শানাকার প্রথম বলে ছক্কা মেরে জয় সহজ করেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার।