বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সেনেট ও নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ২২ সদস্য দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনকে একটি চিঠি দিয়েছেন।
এতে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের আরও অবনতি রোধে যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে চিঠিতে।
কোটা সংস্কারের আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ২ আগস্ট লিখিত ওই চিঠিতে বলা হয়, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য সরকারি চাকরির ৩০ শতাংশ কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে। তাদের প্রতিবাদকে দমন করতে সরকারের পক্ষ থেকে গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বাধিক হিংসাত্মক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ, বিক্ষোভকারী, বিরোধী দলের কর্মী ও সরকার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে অন্তত ১৭০ জন নিহত এবং হাজার হাজার আহত হওয়ার কথা বলা হয় বিবৃতিতে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, “শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ দমনে বাংলাদেশ সরকার পূর্বে নিষেধাজ্ঞার অধীনে থাকা আধাসামরিক র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বাহিনী মোতায়েন করেছে। দাঙ্গা পুলিশকে টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী দিয়ে কঠোর কারফিউ জারি করা হয়েছে। দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সারাদেশে মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
“এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে আমরা আশা করি, আপনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরকে সেই গণতান্ত্রিক নীতিগুলোকে সমুন্নত রাখতে নেতৃত্ব দেবেন, যা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভিত্তি হয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই বাংলাদেশে সব ধরনের সহিংসতার তীব্র নিন্দা করবে। একই সঙ্গে বাক স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষা করা এবং বাংলাদেশি জনগণের বিরুদ্ধে হওয়া উপরোক্ত অত্যাচারের জন্য দায়ী সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেবে।”
চিঠিতে আরও বলা হয়, “বাংলাদেশে গণতন্ত্র আরও খারাপ হয়ে যাওয়া ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশি জনগণের একটি প্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক সরকারের অধিকারের বিষয়গুলোকে সমর্থন করতে হবে।”
চিঠিতে বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি উল্লেখ করে সেনেটর ও কংগ্রেসম্যানরা লিখেছেন, আটককৃতদের মধ্যে কেউ কেউ মুক্ত হলেও এখনও অনেকেই কারাগারে রয়েছেন। এছাড়াও গণমাধ্যমকর্মী এবং সরকার বিরোধী সমালোচকদের অনলাইনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা গুরুতরভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
ব্লিনকেনকে পাঠানো চিঠিতে যেসব সেনেটর স্বাক্ষর করেছেন তারা হলেন- অ্যাডওয়ার্ড জে. মার্কি, ক্রিস ভ্যান হোলান, টাম্মি বাল্ডিন, জেফরি এ মার্কলি, ক্রিস্টোফার এস মারফি, টিম কাইন ও রিচার্ড জে ডারবিন।
এছাড়া কংগ্রেসম্যানদের মধ্যে চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন জেমস পি ম্যাক গভার্ন, উইলিয়াম আর কিয়েটিং, গ্রেস মেঞ্জ, সেথ মল্টান, লরি ট্রাহান, জো উইলসন, জেমস সি. মোলান, ডিনা টিটাস, জিরাল্ড ই কনলি, গাবে আমো, আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ, ইলহান ওমর, নাইডিয়া ভেলাজকুয়েজ, ডেনিয়েল টি কিলডি ও বারবারা লি।
তথ্যসূত্র : ক্রিস ভ্যান হলেন ডট সেনেট ডট গভ