ভারত সিরিজের তিন ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত, তাসকিন আহমেদ ও তাওহিদ হৃদয়। তিন ক্রিকেটারের কাছে তিন ম্যাচের ফল বিশ্লেষণ জানতে চাওয়া হয়। তিনজনেরই একই কথা – ১৭০-৮০ রান করার সামর্থ্য তাদের নেই।
এই সামর্থ্য কিভাবে তৈরি হবে সেই উপায়ও বলে দিয়েছেন তিন ক্রিকেটার। সেই উপায় আলাদিনের চেরাগ থেকে বের হয়ে জ্বীনের দেওয়া চমকপ্রদ কিছু নয়। স্রেফ একটি প্রসেস। তা হলো – ভালো উইকেট। যা গত ১২ বছরে ঢাকার মাঠে দেখা যায়নি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সব দলই হোম সিরিজে নিজেদের উইকেটের সুবিধা নিতে চায়। সেই মতো বিপক্ষকে বিপদে ফেলতে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী উইকেট তৈরি করে। এই পথে হেঁটে বাংলাদেশও সুবিধা পেয়েছে। তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সম্মান বাড়িয়েছে।
কিন্তু বিপত্তি অন্য জায়গায়। বিশ্বের কোন ক্রিকেট দলই ঘরোয়া ক্রিকেটে বাজে উইকেট তৈরি করে না। বড় রান, বড় স্কোর তাড়া করা, ব্যাটারদের লড়াইয়ের দিকটি সবসময়ই দেখে সব দল। শুধু বাংলাদেশে এই ব্যাপারটির দেখা নেই।
না থাকার কারণ মিরপুর স্টেডিয়ামের উইকেট। এ উইকেটে ১৪০-৫০ বা তারও একটু নিচের দলীয় সংগ্রহ-ই স্বাভাবিক। আর তা বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটেও দেখা যায়। তাই বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে প্রশ্নটা সবসময়ই উঠে।
সেই প্রশ্ন বাণ থেকে রেহাই পেতে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সেরা আসর বিপিএলকে নতুন ভাবে সাজানো হচ্ছে। রোববার বিসিবি সভাপতির উপস্থিতিতে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানিয়েছেন বিপিএলে নতুনত্ব আসছে।
অথচ বিপিএলের মূল ভেন্যু মিরপুরের উইকেটের কি হবে! গোয়ালিয়রে প্রথম টি-টোয়েন্টি হেরে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছিলেন, “আমরা ১৪০-৫০ রানের ম্যাচগুলো কীভাবে খেলতে হয়, কীভাবে রান তাড়া করতে হয় তা জানি। কিন্তু ১৮০ রান বা তার বেশি সংগ্রহের ম্যাচে কি করতে হবে তা জানি-ই না। কারণ আমাদের দেশে ওমন উইকেটে খেলে আমরা অভ্যস্ত না।”
সবশেষ দুই বিপিএলে তাকালে এর সত্যতাও মিলে। ২০২৩ বিপিএলে মিরপুরে সর্বনিন্ম রান ছিল খুলনার ৮৪। ওই ম্যাচে আগে ব্যাট করা ঢাকা মাত্র ১০৮ রান করেও ম্যাচ জিতেছিল। এছাড়া ওই আসরের প্রথম ম্যাচে মিরপুরে একশ’র নিচে থেমেছিল চট্টগ্রাম। ৯ উইকেটে ৮৯ রান করে একটি দল টি-টোয়েন্টির আসর শুরু করছে দেখে অবাক হয়েছিল ক্রিকেটপ্রেমীরা।
বিপিএলের গত আসরে মিরপুরে হওয়া ২২ ম্যাচে মাত্র পাঁচবার দলগুলো ১৭০-৮০’র মধ্যে রান করেছিল। বড় রান না হলে বড় রান তাড়া করার অভ্যস্ততাও তৈরি হয় না। ভারত ব্যাটারদের ইনিংসগুলো দেখে যে বিষয়টি খুব কাছ থেকে দেখেছেন শান্ত-তাওহিদরা।
তবে আশা দেখিয়েছেন বিসিবি প্রধান ফারুক আহমেদ। ক্রীড়া উপদেষ্টাই ছোট রানে ম্যাচ শেষ হওয়ার বিষয়টি সামনে এনেছেন। মিরপুরের উইকেট পরিবর্তন করে বড় স্কোরের বিপিএল দেখতে চান আসিফ মাহমুদ।
ফারুক আহমেদ বলেছেন, “আমরা বিপিএলে এবার মিরপুরের উইকেটটা ভালো করার চেষ্টা করবো। ক্রীড়া উপদেষ্টা বলছিলেন একটা দল ১২০ করলো অপর দল ৯০ রানে অলআউট হলো এটা আসলে দর্শক সম্পৃক্ততা হলো না। তো আমরা চেষ্টা করবো উইকেটটা যেন ব্যাটিং বান্ধব হয়, বোলারদের জন্যও থাকবে কিছু। তবে রান হলে একটা উৎসব মুড থাকে।”
মিরপুরের উইকেট গত ১২ বছরের বেশি সময় ধরে যিনি তৈরি করে আসছেন সেই গামিনি ডি সিলভা অবশ্য ঘরোয়া ক্রিকেটেও ভালো উইকেট তৈরি করতে পারছেন না। তাই প্রশ্ন উঠছে তিনি ভালো উইকেট তৈরি করতে পারেন কিনা। সেই প্রশ্ন থেকেই বিসিবিতে নেতৃত্বের পালা বদলে তারও পরিবর্তন চাইছে সবাই।
এ ব্যাপারেও একটা উপায় দেখালেন ফারুক আহমেদ, “গামিনির সময়কাল খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে। আর সে শুধু ঢাকা না ঢাকার বাইরেও আমাদের যেসব মাঠে কাজ হচ্ছে সেখানে কাজ করবে।”
গামিনিকে এখন ঢাকার বাইরে ব্যবহার করছে বিসিবি। এবার বিপিএলে তাকে বাদ দিয়ে ভালো উইকেট তৈরি করেন এমন কাউকে দায়িত্ব দিলে আসরের মূল ভেন্যু মিরপুরে ভালো উইকেট হবে। ভালো স্কোরও করতে পারবে দলগুলো। ব্যাটারদের সেই রান উৎসবে পাওয়ার হিটে অভ্যস্ত হবেন শান্ত-হৃদয়-লিটনরা।